ইসলামে দৃষ্টিতে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও গরু মোটাতাজা করার ঔষধ খাওয়ানো

সাধারনত- কোন প্রকার গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধ ব্যাবহার না করে, গরু স্বাভাবিকভাবে যে খাবার খায় তার ভেতরে আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ভিটামিন থাকে। আমিষ পরিপাক হয়ে দেহে অ্যামিনো এসিড তৈরি করে। এই অ্যামিনো এসিড দেহের মাংস তৈরি করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ যে যত বেশি পরিমাণে আমিনো এসিড সংশ্লেষিত হবে ততো বেশি পরিমাণে মাংস তৈরি হয়। স্বাভাবিক খাবার খেলে স্বাভাবিক খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বা আমিষের পরিমাণ কম থাকে। খাবারে কম উপস্থিতির কারণে গরু ধীরে ধীরে মোটাতাজা হয়। এই গরুর মাংস সাধারণত খুব সুস্বাদু হয়।
অপরদিকে- গরুর খাবারের যদি বিষাক্ত কেমিকেল, স্টেরয়েড জাতীয় পদার্থ মিশিয়ে, গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন দেওয়া হয়,তবে এই পদার্থগুলো গরুর দেহে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যামিনো এসিড সংশ্লেষ করে। অতিরিক্ত এমিনো এসিড সংশ্লেষণ কারণে গরুর দেহে অতিরিক্ত আমিষ সংশ্লেষিত হয় ফলে গরু গুলো কম সময়ের মধ্যে বেশি মোটা হয়ে যায়। স্টেরয়েড ব্যবহার করলে গরুর কিডনি ঠিকমত পানি ফিল্টার করতে পারে না। এই পানি গরুর মাংসপেশিতে ঢুকে পরে। মাংস ও চামড়ার নিচে অতিরিক্ত পানির উপস্থিতির জন্যেও গরুকে মোটা মনে হয়। এই পানি গরুর মাংসপেশিতে ঢুকে পরে।মাংস ও চামড়ার নিচে অতিরিক্ত পানির উপস্থিতির জন্যেও গরুকে মোটা মনে হয়।
(১) গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধে খাওয়ানো গরুর উপসর্গ ও লক্ষণ

১। একটা গরুর চামড়ার যদি আঙুল দিয়ে চাপ দেওয়ার পর যদি আঙুলের ছাপ লেগে থাকে, চামড়ার নিচে যদি পানি জমে, সহসা চামড়াটা আগের অবস্থায় ফিরে আসে না, তাহলে বুঝতে হবে যে গরুটিকে মোটাতাজা করতে অবৈধ উপায়ে হরমোন বা গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে যদি সুস্থ-সবল গরুকে চাপ দিলে চামড়া সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
২। পশুকে স্টেরয়েড, হরমোন বা গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন প্রয়োগ করা হলে তা পশুর প্রস্রাব বন্ধ করে দেয়। ফলে পশুর চামড়ার নিচে পানি জমতে থাকে এবং তা ফুলে যাওয়ায় পশু স্বাস্থ্যবান দেখায়।
৩। এ ধরনের গরুর চাহনি ড্রাউজি বা ঘুমঘুম হবে। চোখ দেখলে মনে হবে গরুটা ঘুমিয়ে যাচ্ছে। চোখের চাহনি চঞ্চল বা পরিষ্কার হবে না।
৪। এ ছাড়া গরুটিকে খুব ক্লান্ত মনে হবে। সুস্থ গরু চঞ্চল হয়, নড়াচড়া করে। কিন্তু স্টেরয়েড বা হরমোন দেওয়া গরুর তেমন নড়াচড়া করবে না। প্রস্রাব-ব্যথায় শুয়ে থাকবে।
৫। যেকোনো স্টেরয়েড সুস্থ মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। তথাকাথিত গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন মানুষের কিডনি, লিভার, শ্বাসতন্ত্র, হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিষয়টি মানবিক ও ধর্মীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই খুবই অন্যায় ও গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচিত।
(২) মানব শরীরে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধের প্রভাব
গরুতে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে পাম ট্যাবলেট, স্টেরয়েড ও ডেক্সামেথাসনের মতো ভয়ানক ক্ষতিকারক গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন ও ওষুধ। বিষাক্ত কেমিকেলগুলো মাংস ও হাড়ে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। এই মাংস খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেমন-
- কিডনি বিকল হওয়া।
- স্ট্রোক হওয়া।
- হার্টএটাক হওয়া।
- লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি।
- শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া।
- গর্ভের সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়া।
- সবচেয়ে বড় বিপদটি হলো, এ মাংস খাওয়ার ফলে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে আকর্ষনীয় হলেও আসলে সেগুলো মোটাতাজা হয় না।
এই গরুগুলোর দেহে অবস্থিত বিষাক্ত পদার্থগুলো গরুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে এমনকি গরু জবাই করার পর গরুর মাংসে উপাদানগুলো অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে।
এই বিষাক্ত পদার্থ গুলো গরু এবং মানুষ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। রান্না করার পরও মাংস থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূরীভূত হয়না।
(৩) গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধ প্রয়োগের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
নিঃসন্দেহে এতে যেমন ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব। তাই ইসলাম জীবজন্তু ও মানবজাতির জন্য কষ্টদায়ক এমন যেকোনো প্রক্রিয়াই কঠোরভাবে নিষেধ করে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
“জমিনের বুকে বিচরণশীল যেকোনো জন্তু কিংবা বাতাসের বুকে নিজ ডানা দিয়ে উড়ে চলা যেকোনো পাখি তোমাদের মতোই।”
(সুরা আনআম, আয়াত:৩৮)
মোটাতাজাকরণের নামে পশুর প্রাকৃতিকগত গুণ, বৈশিষ্ট্য বা আকৃতি বদলে ফেলা, যেমন প্লায়ার্স দিয়ে দাঁত তুলে ফেলে বয়স কম প্রমাণের চেষ্টা, রং বদলে দেওয়া, পশুর হৃৎপিণ্ড, কলিজা, ফুসফুস, কিডনি বিকল করে ফেলে ইসলামের আলোকে এমন ওষুধ প্রয়োগ করা নৈতিকতা পরিপন্থী, প্রতারণা ও হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন,
“বিনাশ ও বিপর্যয় প্রতারকদের জন্য।”
(সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত:০১)
ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেন,
“যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে এবং মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ১০১)
তিনি আরও বলেন,
“প্রতারক ও চালবাজ জাহান্নামে যাবে।”
(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং: ৬৪০৮)
অনৈতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণসহ অবৈধ উপায়ে সব ধরনের জীবিকা অর্জন ইসলামে নিষিদ্ধ।
মহান আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্ববাসীরা, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়, অবৈধভাবে গ্রাস করো না।”
(সুরা নিসা, আয়াত নং: ২০)
হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,
“ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।”
(জামে তিরমিজি, হাদিস নং: ৬১৪)
তাই কোরবানির পশু কেনার আগে পশুটি যাচাই করে নেওয়া চাই। অতি মুনাফালোভী পশু ব্যবসায়ীদের বর্জন করা উচিত, যেন আমাদের কোরবানিটা সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
শেষা কথা হলো এই- লাভের আশায় কোরবানির কথা চিন্তায় রেখে পশু প্রতিপালন একটি সেবামুখী ইবাদত। ইসলামের আলোকে বেশি লাভের মোহে নিরীহ প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া বা মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।
যেমন- গ্রোথ হরমোন, ডাইক্লোফেনাক, অনুমোদনহীন স্টেরয়েড ব্যবহার, সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসকের লিখিত পরামর্শ ছাড়া যখন-তখন পশুকে ওষুধ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য দেওয়া, তথাকথিত তুলা, গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, গরু মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন, ভিটামিন, ইউরিয়া সারের অপপ্রয়োগ করা অগ্রহণযোগ্য।
ক্ষতিকর এসব ওষুধ ও উপকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে কোরবানির অনুপযোগী অল্পবয়স্ক, অস্বাস্থ্যবান ও চিকন গরুকে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যবান করে তোলা হয়। ফলে এটি শুধু পশুর জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং মানবদেহের জন্যও স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।