গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ গরুর খাবার দেওয়ার নিয়ম কি? গরুর খাবারের নিয়ম

ইনফরমেশন বাংলাের নিয়মিত পাঠকবৃন্দ আপনাদের সকলকে আজকের “গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক আলোচনায় আপনাদেরকে স্বাগতম। আপনা অনেকেই গরুর খাবার দেওয়ার নিয়ম বা গরুর খাবার নিয়ম বা গরুর খাবারের নিয়ম এই ধরণের বিষয়গুলি জানতে চেয়েছেন। তাই আজকে আপনাদের সামনে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
প্রথমেই জানব-
(১) খাদ্যে কি? পানির কাজ ও ভূমিকা

গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা: যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে তাই খাদ্য। গরুর খাবার সংগ্রহ, প্রস্তুতকরণ, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করার ব্যবস্থাকে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
খাদ্য উপকরণে যে পুষ্টি উপাদান অধিক পরিমানে থাকে তাকে সে জাতীয় খাদ্য বলে। যথা-
শর্করা জাতীয় খাদ্য: ভুট্টা, গম, কাওন, চাউলের কুঁড়া, গমের ভুষি, ইত্যাদি।
আমিষ জাতীয় খাদ্য: সয়াবিন মিল, তিলখৈল, শুটকিমাছ, মিটমিল, ইত্যাদি।
চর্বি জাতীয় খাদ্য: এনিমেল ফ্যাট, ভেজিটেবল অয়েল, সার্কলিভার ওয়েল, ইত্যাদি।
ভিটমিন জাতীয় খাদ্য: শাকসব্জি ও কৃত্রিম ভিটামিন, ইত্যাদি।
খনিজ জাতীয় খাদ্য: ঝিনুক , ক্যালশিয়াম ফসফেট, রকসল্ট, লবন, ইত্যাদি।
পানি : দেহ কোষে শতকরা ৬০- ৭০ ভাগ পানি থাকে। তাই কোন প্রাণি খাদ্য না খেয়েও কিছু দিন বাঁচতে পারে, কিন্তু পানি ছাড়া সামান্য কিছু দিনের বেশী বাঁচে না। গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পানির গুরুত্ব সর্বাধিক।
সাধারণত দেহ থেকে পানির ক্য়ষ হয় মলমূত্র ও শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
অপরদিকে পানি আহরিত হয় পানি পান করে, রসালো খাদ্য গ্রহণ করে এবং দেহের ভিতর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অক্রিডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
দেহের বেশির ভাগ অংশ পানি দ্বারা গঠিত।
প্রাণির দেহে পানির কাজ-
- খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে খাদ্য ব¯দ নরম ও পরিপাকে সহায্য করে।
- খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে পুষ্টি উপাদান তরল করে দেহের প্রত্যন্ত অ লে পরিবহণ করে।
- দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহকে সতেজ রাখে।
- দেহের ভিত্তিতে দুষিত পদাথর্ অপসারণ করে।
- দেহের গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস, হরমোন,এনজাইম এবং রক্ত গঠনে ভূমিকা রাখে।
(২) গরুর খাদ্যের শেণীবিভাগ
গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে গবাদিপ্রাণির খাদ্যকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-
- আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য, যেমন- খড় , সবুজ ঘাস বা কাঁচা ঘাস, ইত্যাদি।
- দানাদার জাতীয় খাদ্য, যেমন- চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, খেসারি ভাঙ্গা, তিল বা বাদাম খৈল, ইত্যাদি।
- সহযোগী অন্যান্য খাদ্য, যেমন- খনিজ উপাদান, ভিটামিন, ইত্যাদি।
শুকনা খড়: একটি দেশী গাভীকে দৈনিক ৩ কেজি খড় খাওয়াতে হয়। উন্নত সংকর জাতের একটি গাভীর জন্য দৈনিক ৪ কেজি খড় প্রয়োজন হয়। খড় কেটে ও কাটা খড়ের সহিত ১০% চিটাগুর মিশিয়ে খাওয়ালে পুষ্টির মান বেড়ে যায়। খড়ে প্রোটিনের ভাগ বাড়ানোর জন্য ইউরিয়া-মোলাসেস-খড় প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়াতে হবে।
সবুজ কাঁচা ঘাস: গাভীর সুষম খাদ্যের প্রধান অংশ সবুজ কাঁচা ঘাস। কাঁচা ঘাস গাভীর দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যে প্রতিদিন ১০-১২ কেজি কাঁচা ঘাস অবশ্যই যোগ করতে হবে। একটি উন্নত সংকর জাতের গাভীকে দৈনিক ১৫ কেজি সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হয়। গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পানি পরই সবুজ কাঁচা ঘাস গুরুত্বপূর্ণ।
- গ্রীষ্মকালীন স্থায়ী ঘাস, যেমন- নেপিয়ার, পারা, গিনি, জার্মান ইত্যাদি।
- শীতকালীন অস্থায়ী ঘাস, যেমন- ওটস, ভুট্টা ইত্যাদি।
- শুটি জাতীয় ঘাস, যেমন- খেসারী,মাসকলাই, কাউপি, সেন্ট্রোশিমা, বারশিম, লুসার্ন ইত্যাদি।
দানাদার খাদ্য মিশ্রণ: গাভীর প্রথম ৩ লিটার দুধের জন্য ৩ কেজি এবং পরবর্তী ৩ লিটারের জন্য ১ কেজি করে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় দানাদার খাদ্য একটি অবিচ্ছেদ্য উপকরণ।
মোট ১০ কেজি দানাদার খাদ্য মিশ্রণের তালিকা-
- চালের কুঁড়া= ২ কেজি
- গমের ভূষি= ৫ কেজি
- খেসারি ভাঙ্গা= ১.৮ কেজি
- তিল বা বাদাম খৈল= ১ কেজি
- লবণ= ০.১ কেজি
- খনিজ মিশ্রণ= ০.১ কেজি
পানি সরবরাহ : সুষ্ঠ ভাবে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও গাভীকে প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। একটি দুধাল গাভীকে দৈনিক ৩৫-৪০ লিটার পানি সরবরাহ করতে হবে।
(৩) গাভীর দৈনন্দিন খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয়
⮚ গাভীর খাদ্য সুষম হতে হবে, অর্থাৎ গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে।
⮚ গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় খাদ্য অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক হতে হবে। অর্থাৎ সহজ প্রাপ্য এবং দাম কম এরূপ উপকরণ দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে।
⮚ একটি দেশী গাভীর চেয়ে উন্নত জাতের একটি গাভী অনেক বড় হয়। দুধও বেশী দেয় এবং সেজন্য খায়ও বেশী। তাই গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় খাদ্য প্রদানের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গাভীর পেট ভরে এবং পুষ্টির অভাবও পুরণ হয়।
⮚ গাভীর খাদ্যদ্রব্য টাটকা ও পরিস্কার হতে হবে। সুন্দর গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ময়লা, কাঁকড়, পাথর, বালু, মাটি, ছাতাপড়া দুর্গন্ধমুক্ত খাদ্য গাভীকে খেতে দিতে হবে।
⮚ কাঁচা ঘাসে প্রচুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন থাকে যা সহজে হজম হয়। তাই গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গাভীকে দৈনিক প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
⮚ গাভীর দেহ গঠনে, দুধ উৎপাদনে, গর্ভধারণে, বাচ্চা উৎপাদনে এ উপাদানটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ ও খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে হবে।
⮚ দানাদার খাদ্যের সাথে নিয়মিত ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে এগুলোর অভাব হবে না।
⮚ আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি আস্ত না দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে গাভীকে খাওয়াতে হবে। এতে খাদ্য দ্রব্যের অপচয় হবে না। গাভীর খেতে সুবিধা হবে এবং হজমেও সহায়ক হবে।
⮚ খড় কুচিকুচি করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে অন্যান্য দানাদার মিশ্রণ ও চিটাগুড় মিশিয়ে দিলে গাভী খেতে অধিক পছন্দ করবে এবং সহজ প্রাচ্যও হবে।
⮚ গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা খাদ্য উপকরণ হঠাৎ করে পরিবর্তন করা উচিত নয়। খাদ্য উপকরণের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে করতে হবে।
(৪) গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় দৈনিক খড়, কাঁচা ঘাস ও ইউ.এম.এস সরবরাহের পরিমান
- ৩ কেজি কাঁচা ঘাস = ১ কেজি খড়।
- প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গরুকে ৮ কেজি খড় সরবাহ করা প্রয়োজন।
- ১-৩ বছরের একটি গরুকে ২ কেজি খড় সরবাহ করা প্রয়োজন।
- ১ বছরের নিচে একটি গরুকে ১ কেজি খড় সরবাহ করা প্রয়োজন।
- প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গরুকে ১৫-২০ কেজি কাঁচা ঘাষ সরবাহ করা প্রয়োজন।
- ১-৩ বছরের একটি গরুকে ১০ কেজি কাঁচা ঘাষ সরবাহ করা প্রয়োজন।
- ১ বছরের নিচে একটি গরুকে ৩ কেজি কাঁচা ঘাষ সরবাহ করা প্রয়োজন।
- প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গরুকে ২-৩ কেজি ইউ.এম.এস (প্রক্রিয়াজাত খড়) সরবাহ করা প্রয়োজন।
(৫) দুগ্ধবতী গাভীকে দৈনিক দানাদার খাদ্য সরবরাহের পরিমান
⮚ একটি গাভীকে প্রথম ৫ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য ৩ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
⮚ পরবর্তী প্রতি এক লিটার দুধ দুধ উৎপাদনের জন্য ০.৫০ কেজি হারে সর্বমোট ৮ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
(৬) ইউরিয়া মোলাসেস খড় (UMS) প্রক্রিয়াজাতকরণ
গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ইউ.এম.এস তৈরীর প্রথম শর্ত হল এর উপাদানগুলির অনুপাত সর্বদা সঠিক রাখতে হবে অর্থাৎ ১০০ ভাগ ইউ.এম.এস এর শুষ্ক পদার্থের মধ্যে ৮২ ভাগ খড়, ১৫ ভাগ মোলাসেস (চিটাগুড়) এবং ৩ ভাগ ইউরিয়া থাকতে হবে।
এ হিসাব মতে ১০০ কেজি শুকনা খড়, ঘনত্বের উপর নির্ভর করে ১৫-২০ কেজি মোলাসেস (চিটাগুড়) ও ৩ কেজি ইউরিয়া মিশালেই চলবে। খড় ভিজা বা মোলাসেস পাতলা হলে উভয়ের পরিমাণই বাড়িয়ে দিতে হবে।
- প্রথমে খড়, মোলাসেস ও ইউরিয়ার পরিমাণ মেপে নিতে হবে। এর পর পানিতে ইউরিয়া ও চিটাগুড় মিশিয়ে উহা ভালভাবে খড়ের সাথে মিশাতে হবে। পানি বেশী হলে দ্রবণটুকু খড় চুষে নিতে পারবে না আবার কম হলে দ্রবণ ছিটানো সমস্যা হবে।
- শুকনো খড়কে পলিথিন বিছানো বা পাকা মেঝেতে সমভাবে বিছিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণটি আস্তে অস্তে ঝরণা বা হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবেএবং সাথে সাথে খড়কে উল্টিয়ে দিতে হবে যাতে খড় দ্রবণ চুষে নেয়।
- এভাবে স্তরে স্তরে খড় সাজাতে হবে এবং ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণ সমভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ওজন করা খড়ের সাথে পুরো দ্রবণ মিশিয়ে নিলেই ইউ.এম.এস প্রাণিকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়ে যাবে।
গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া মোলাসেস খড় সঙ্গে সঙ্গে গরুকে খাওয়ানো যায় অথবা একবারে ২/৩ দিনের তৈরীখড় সংরক্ষণ করে আস্তে আস্তে খাওয়ানো যায়। তবে কোন অবস্থ্যাতেই খড় বানিয়ে তিন দিনের বেশী রাখাউচিৎ নয়। কারণ তাতে খড়ে ইউরিয়া এবং মোলাসেস এর পরিমাণ কমতে থাকবে।
(৭) গরুকে ইউ.এম.এস খাওয়ালে সুবিধা
⮚ গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ইউ.এম.এস ৬ মাসের উর্দ্ধে বাছুর গরু থেকে শুরু করে সকল বয়সের গরুকে তাদের চাহিদা মত খাওয়ানো যায়।
⮚ শুধু ইউ.এম.এস খাওয়ালেও গরুর ওজন বৃদ্ধি পায়।
⮚ ইউ.এম.এস তৈরীর পদ্ধতি সহজ। একজন শ্রমিক প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি খড় তৈরী করতে পারেন।
⮚ গবেষণা করে দেখা গাছে যে, এ পদ্ধতিতে খড়ের সঙ্গে ১.০০ টাকার মোলাসেস খাইয়ে প্রায় ৫.০০ থেকে ৭.০০ টাকার গরুর মাংস উৎপাদন সম্ভব।
⮚ যেহেতু ইউরিয়া ও মোলাসেস খড়ের সাথে ধীরে ধীরে খাচ্ছে, তাই প্রাণির বিষক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
⮚ কৃষক তার দৈনিক চাহিদা মত খড় প্রস্তুত করে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন। তবে প্রক্রিয়াজাত খড় তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করে রাখা যাবে না। কেননা তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করলে এর গুণগত মান কমে যাবে।
(৮) গরুকে ইউ.এম.এস খাওয়ালে অসুবিধা
⮚ গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ইউ.এম.এস পদ্ধতিতে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর তেমন কোন অসুবিধা নেই। তবেছয় মাসের কম বয়সের বাছুরকে ইউ.এম.এস খাওয়ানো যাবে না।
(৯) প্রাণিকে ইউ.এম.এস খাওয়াতে সাবধনতা অবলম্বন
⮚ গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ইউ.এম.এস তৈরী করার সময় অবশ্যই ইউরিয়া+মোলাসেস+খড় +পানির অনুপাত ঠিক রাখতে হবে।
⮚ ইউরিয়ার মাত্রা কোন অবস্থ্যাতেই বাড়ানো যাবে না।
⮚ ইউ.এম.এস এর গঠন পরিবর্তন করলে কাংখিত ফল পাওয়া যাবে না।
(১০) গরুকে কোন কোন অবস্থায় ইউ.এম.এস খাওয়ানো যাবে না
গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী নিম্ন বর্ণিত অবস্থ্যায় গরুকে ইউ.এম.এস খাওয়ানো যাবে না-
⮚ ৬ মাসের কম বয়সের বাছুর গরুকে।
⮚ অসুস্থ গবাদিপ্রাণিকে।
⮚ প্রণিকে সালফার জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পর অন্ততঃ পরবর্তী ১৫-৩০ দিন।
⮚ গর্ভবতী গাভীর গর্ভকালীন অবস্থ্যার শেষের দিকে।
⮚ যে সকল প্রাণি ইউ.এম.এসখাওয়ালে প্রায়ই অসুবিধা বোধ করে বা এলার্জি দেখা দেয়।
(১১) গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পশুর অন্যান্য যত্ন
খাদ্য পরিবেশনার উপরও গরুর খাদ্য গ্রহণের তারতম্য হয়। যেমন–
⮚ নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করা।
⮚ গরুর সম্মুখে সর্বদা খাদ্য রাখা।
⮚ খাদ্য সরবরাহের আগে অবশ্যই পাত্র পরিষ্কার করা।
⮚ দানাদার খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মেপে ২ বারে (সকালে ও বিকালে) পরিবেশন করা।
⮚ শুকনা দানাদার খাদ্য দিলে খাদ্য গ্রহণের পরপরই পানি দেয়া।
⮚ খড় কেটে ভিজিয়ে পরিবেশন করলে কম নষ্ট হয় এবং খাদ্যের গ্রহণ হারও বাড়ে।
⮚ খাদ্য অবশ্যই মাটি/বালি মুক্ত থাকা, খাদ্য পচা, বাসি, অতি পুরাতন না হওয়া।
⮚ দানাদার খাদ্য আধা ভাঙ্গা অবস্থ্যায় ভিজিয়ে খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবে দেয়া।
(১২) গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস খাওয়ালে উপকারিতা
⮚ অধিক দুধ পাওয়া যাবে।
⮚ খাদ্য খরচ কম হবে।
⮚ গাভী সুস্থসবল বাছুর জন্ম দেবে।
⮚ সঠিক বয়সে যৌন পরিপক্কতা আসবে।
⮚ জন্মের সময় বাচ্চার মৃত্যু হার খুবই কম হবে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম হবে।
⮚ গাভীর মৃত্যু হার খুবই কম হবে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম হবে।
⮚ দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কম হবে, ফলে উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে।
⮚ জন্ম নেয়া বাছুরের দৈহিক ওজন কাংখিত মাত্রায় পাওয়া যাবে।
⮚ রোগ-ব্যাধি কম হয় ফলে ঔষধ খরচ কমে যাবে এবং চিকিৎসা খরচ খুবই কম হবে।
⮚ দুধ উৎপাদন বেশী হলে গরিব কৃষক দুধ বিক্রয়ের পাশাপাশি নিজেরাও দুধ খেতে পারবেন এবং নিজেরাও সুস্থ সবল থাকবেন।
⮚ এক একর জমিতে ধান চাষ করে যে লাভ পাওয়া যায়, ঘাস চাষ করলে তার চেয়েও বেশী লাভ পাওয়া যাবে।
(১৩) গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস না খাওয়ালে অপকারিতা
⮚ দুধ উৎপাদন কম হবে।
⮚ প্রণি অপুষ্টিতে ভোগে এবং রোগ-ব্যাধি বেশী হবে।
⮚ গাভির প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং ঘন ঘন প্রজনন করতে হবে।
⮚ গভর্পাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
⮚ দুর্বল ও কম ওজনের বাছুরের জন্ম হবে। ফলে বাছুরের মৃত্যু হার বেড়ে যাবে।
⮚ যৌন পরিপক্কতা দেরিতে আসবে।
⮚ দুর্বলতার কারণে রোগ-ব্যাধি বেশী হওয়াতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাবে।
⮚ রোগ হলে উৎপাদন কমে যাবে ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
⮚ বাছুরের পরবর্তীতে আশাতিত ওজন পাওয়া যাবে না এবং উক্ত বাছুর থেকে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যাবে না।
⮚ দানাদার খাদ্য বেশী দরকার হয় ফলে গাভী পালনের খরচ বেড়ে যায়।
প্রিয় খামারি ও পাঠক বন্ধুরা, গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ গরুর খাবার দেওয়ার নিয়ম কি? গরুর খাবার নিয়ম গরুর খাবারের নিয়ম সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়, যেমন- খাদ্যে কি? পানির কাজ ও ভূমিকা গরুর খাদ্যের শেণীবিভাগ গাভীর দৈনন্দিন খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয় গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় দৈনিক খড়, কাঁচা ঘাস ও ইউ.এম.এস খাওয়ানোর পরিমান দুগ্ধবতী গাভীকে দৈনিক দানাদার খাবারের পরিমান ইউরিয়া মোলাসেস খড় (UMS) প্রক্রিয়াজাতকরণ গরুকে ইউ.এম.এস খাওয়ানোর সুবিধা গরুকে ইউ.এম.এস খাওয়ানোর অসুবিধা গরুকে ইউ.এম.এস খাওয়াতে সাবধনতা অবলম্বন গরুকে কোন কোন অবস্থায় ইউ.এম.এস খাওয়ানো যাবে না গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য যত্ন গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর উপকারিতা গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস না খাওয়ানোর অপকারিতা; প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।
আমাদের দেশীয় গরুর খাদ্য ব্যবস্থ্যাপনার প্রতি সাধারণত তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে এদের নিকট থেকে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যায় না।
অথচ সঠিকভাবে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গরুকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস, পরিমিত প্রক্রিয়াজাত খড়, দানাদার খাদ্য (কুড়া, গমের ভূষি, চাউলের খুদ, খৈল, কলাই, মটর, খেশারী, কুড়া ইত্যাদি), পর্যাপ্ত পরিমানে পরিস্কার পানি (নলকুপের টাটকা পানি ) সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থ্যা, নিয়মিত কৃমিনাশক চিকিৎসা ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থ্যা নেয়া হলে এদের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা যায়।
আমাদের দেশে গবাদি পশুর সবচেয়ে সহজলভ্য ও সাধারণ খাদ্য হল খড় যার ভিতর আমিষ, শর্করা ও খনিজের ব্যাপক অভাব রয়েছে। বর্তমানে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় খড়কে ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করলে তার খাদ্যমান বহুগুণে বেড়ে যায়।
যে সকল দর্শক আমাদের চ্যানেলের নতুন যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে আরও জানতে চান তারা আমাদের এই ব্লগ ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিকেও সাবস্ক্রাইব ও আমাদের ফেসবুক পেজটিতে একটি লাইক দিয়ে রাখবেন রাখবেন। তাহলে নতুন কোন পোষ্ট করা হলে তা সহজেই বুঝতে পারবেন।
আমাদের আজকের এই আলোচনা এখানেই শেষ করে দিচ্ছি, সকলে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।