গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া, সমস্যা, কৃত্রিম প্রজনন, গরুর প্রজনন বয়স, কাল, পদ্ধতি, পরিচর্যা সহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা (gavi projonon)

গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া, সমস্যা, কৃত্রিম প্রজনন, গরুর প্রজনন বয়স, কাল, পদ্ধতি, পরিচর্যা (gavi projonon)

প্রিয় খামারি বন্ধুরা, আজকের আলোচনাটি হতে চলেছে অত্যান্ত তথ্য বহুল এবং এক্সক্লসিভ। বিশেষ করে নতুন খামারিদের প্রতি অনুরোধ থাকলো পুরো গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া বিষয়ক এই পর্বটি স্কিপ না করে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য।

পশুর বংশ বিস্তারের জন্য গাভীর প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্যাপনা অতান্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাভীর প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্যাপনায় ব্যাঘাত  ঘটলে বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন ব্যাহত হবে।

gavi projonon

বাংলাদেশে দুগ্ধ খামারে গাভীর প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্যাপনায় অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বন্ধ্যাত্ব। বন্ধ্যাত্ব হলে গাভী সময়মত গরম হবে না, বীজ দিলে গর্ভধারণ করবে না, একবার বাচ্চা  দিলে ঋতুচক্র প্রদর্শন করতে সময় বেশি লেগে যাবে ইত্যাদি।

দুগ্ধ খামারে এ সকল সমস্যার যে কোন একটি দেখা  দিলে উক্ত দুগ্ধ খামার থেকে লাভ করা অতন্ত কঠিন হয়ে যায়। তাই গাভী/বকনা এর প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্যাপনা  সম্পর্কে খামার মালিকদের সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

তাই আজকের এই আমরা নিচে দেওয়া প্রায়স জিজ্ঞাসিত ১২টি প্রশ্নে জবাব একই আলোচনার মাধ্যমে একসাথে দিব।

আশা করি এই পোষ্টের শেষ অবধি পড়লে উল্লিখিত সকল প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন। যেমন- গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া কিভাবে কাজ করে? গাভীর প্রজনন সমস্যা সমূহ কি? গাভীর প্রজনন কিভাবে হয়? গাভীর কৃত্রিম প্রজনন কি? গাভীর কৃত্রিম প্রজনন প্রয়োজন কেন? গরুর প্রজনন বয়স কত? গরুর প্রজনন কাল কখন? গরুর প্রজনন পদ্ধতি। গরুর গর্ভধারণ পক্রিয়া কি? গরুর গর্ভকাল কখন? গর্ভবতী গরুর পরিচর্যা কি কি করতে হয়? গাভীর গর্ভকালীন সময় কতদিন? গাভীর গর্ভকাল কেন গুরুত্বপূর্ণ? ইত্যাদি।

পড়ুন
দুধের গাভীকে দৈনিক কি পরিমাণ খাবার/খাদ্য দিতে হয়?

চলুন শুরু করা যাক।

(১) একটি আদর্শ গাভীর বৈশিষ্ঠ্য

একটি আদর্শ গাভীর বৈশিষ্ঠ্য

১। একটি আদর্শ বকনা/গাভীর জন্য জন্মের পর থেকেই বাছুরকে সুষ্ঠু পরিচর্যা করা হলে দেশী জাতের বকনা  বাছুর ২৪-৩৬ মাস এবং সংকর জাতের বকনা বাছুর ১০-১৮ মাস বয়স থেকেই ডাকে আসে। তবে বকনা  বাছুরকে প্রথম প্রজননের জন্য তার বয়স ১৮-২২ মাস না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম।

২। সুস্থ অবস্থ্যায় বকনা/গাভীর ডাক থাকে ১২-২৪ ঘন্টা, তবে ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করা উত্তম। বকনা/গাভী গর্ভধারন না করলে দুই ঋতুচক্রের ব্যবধান হবে ২১ দিন।

৩। বকনা/গাভী গর্ভধারণের/গর্ভকালীন সময় হবে প্রায় ২৮০ দিন।

৪। জন্মের সময় বাছুরের ওজন হবে ১৫-১৮ কেজি।

৫। বাচ্চা প্রসবের পর গাভীর দুধ প্রদানের সময়কাল হবে ২৮৫-৩০৫ দিন।

৬। বাছুর এর দুধ সেবনকাল হবে ১৮০ দিন।

৭। প্রসব পরবর্তী প্রথম প্রজননের সময় হবে ৬০-৯০ দিন।

৮। বাচ্চা প্রসবের পর গাভীর পরবর্তী বাচ্চা উৎপাদনকাল হবে ৩৭৫-৪০০ দিন।

(২) গাভী ডাকে আসা/গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ

গাভী ডাকে আসা, গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ

১। বকনা/গাভী অধির থাকবে এবং এক জায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে ছটফট করবে।

২। বকনা/গাভীকে খুব সর্তক মনে হবে এবং কান খাড়া রেখে সর্তকা প্রকাশ করবে।

৩। ঘন ঘন হাম্বা হাম্বা করে ডাকবে।

৪। ডাকেআসা বকনা/গাভী অন্য গরুর উপর লাফিয়ে উঠার প্রবণতা দেখা দেবে।

৫। ঘন ঘন ও অল্প অল্প প্রস্রাব করবে।

৬। খাদ্য গ্রহনের প্রতি অনিহা ভাব থাকবে।

৭। বার বার লেজ নাড়া বা লেজ ডানে/বায়ে সরিয়ে নেবে।

৮। যোনি মুখ হালকা ফুলে যাবে বা ঈষৎ লাল হবে।

৯। যোনির পথ দিয়ে জেলীরমত স্বচ্ছ শ্লেষ্মা বা মিউকাস বের হবে।

১০। দুধাল গাভী ডাকে আসার সময় হঠাৎ করে দুধ কম দেবে।

(৩) গাভীর প্রজনন কার্যক্রম

গাভীর প্রাকৃতিক প্রজনন প্রক্রিয়া
গাভীর প্রাকৃতিক প্রজনন
গাভীর কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়া
গাভীর কৃত্রিম প্রজনন

যে কোন প্রাণির বংশ বিস্তার ঘটে প্রজননের মাধ্যমে। এই প্রজনন প্রক্রিয়া দু’টি পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। যথা-

  • প্রাকৃতিক গাভীর প্রজনন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে ষাঁড়ের দ্বারা গাভীকে সরাসরি প্রজনন করা হয়।
  • কৃত্রিম গাভীর প্রজনন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে ষাাঁড় থেকে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করে গবেষণাগারে বিশেষ প্রক্রিয়ায়  সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে গাভী গরম হলে উক্ত বীজ দিয়ে কৃত্রিমভাবে গাভীকে প্রজনন করা হয়।
পড়ুন
উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা গাভীর বৈশিষ্ট্য

(৪) গাভীর কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা

১। উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন/বীজ দিয়ে দ্রুত এবং ব্যাপক ভিত্তিতে প্রাণীর উন্নত জাত তৈরী করা সম্ভব হয়।

২। এ পদ্ধতিতে শুক্রানুর গুণাগুণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয় এবং অনুর্বর ষাঁড় বাতিল করতে সহজ হয়।

৩। ষাঁড়ের জন্মগত ও বংশগত রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

৪। একটি ষাঁড় থেকে একবার সংগৃহীত সিমেন/বীজ দ্বারা ১০০-৪০০ গাভী প্রজনন করানো যায়, ফলে বাড়তি  ষাঁড় পালনের প্রয়োজন হয় না।

৫। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কম খরচে অনেক বেশী গাভীকে পাল দেয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে একটি  ষাঁড়ের সারা জীবনের সংগৃহীত সিমেন/বীজ দ্বারা প্রায় ১-১.৫ লক্ষ গাভীকে প্রজনন করা সম্ভব হয়।

৬। গাভীর প্রজনন কার্যক্রম সহজ হয়, অর্থাৎ যে কোন সময় যে কোন স্থ্যানে কৃত্রিম প্রজনন করা যায়।

৭। প্রাকৃতিক উপায়ে গাভীর প্রজনন এ ষাঁড়ের মাধ্যমে একটি গাভী থেকে অন্যান্য গাভীর মধ্যে বিভিন্ন যৌন রোগ সংক্রামিত  হতে পারে। কিšদ কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গাভীর যৌন রোগ সংক্রমন সহজেই রোধ করা সম্ভব হয়।

৮। নির্বাচিত ষাঁড়ের সিমেন/বীজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনমত যে কোন সময় ব্যবহার করা যায়।

৯। বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় না এনে প্রয়োজনে অল্প খরচে উক্ত ষাঁড় এর সিমেন/বীজ আমদানী করা যায়।

১০। প্রাকৃতিক গাভীর প্রজননে উন্নত জাতের ষাঁড় থেকেও সিমেন সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করা যায়।

১১। ষাঁড় ও গাভীর দৈহিক ও অসামঞ্ছসতার কারণে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্ভাব্য সংগঠিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

(৫) গাভীর কৃত্রিম প্রজননের উপকারিতা

১। প্রাকৃতিক প্রজননে সম্ভাব্য যৌন রোগ থেকে গাভীকে রক্ষা করা যায়।

২। সহজেই উন্নত জাতের বাছুর উৎপাদন করে অধিক দুধ/মাংশ উৎপাদন করা যায়।

(৬) গাভীর কৃত্রিম প্রজননের সীমাবদ্ধতা

১। সুষ্ঠ প্রজননের জন্য সিমেন/বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহরে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়।

পড়ুন
উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা (Gavi Palon Bangladesh)

২। গর্ভবতী গাভীকে ভুলক্রমে জরায়ুর গভীরে প্রজনন করালে গভর্পাত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

৩। গাভীর উত্তেজনা কাল সুষ্ঠভাবে নির্ণয় করতে হয়।

৪। গাভীর প্রজনন এর জন্য ষাঁড়ের জন্য বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।

৫। কৃত্রিম প্রজনন কাজের জন্য সহায়ক গবেষণাগারের প্রয়োজন হয়।

(৭) গাভীর প্রজনন পরবর্তী নজরদারী

গাভীর প্রজনন পরবর্তী নজরদারী

১। বকনা/গাভীর প্রজনন করার পর পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। প্রজননকৃত প্রাণীটি যদি গর্ভধারণ করে থাকে তাহলে  এক ধরণের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করবে। আর যদি গর্ভধারণ না করে থাকে তা হলে ২১ দিন পর পুণরায় ডাকে আসার  সকল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করবে।

২। অনেক সময় বকনা/গাভী গর্ভধারণও করেনা আবার হিটেও আসেনা, বরং  গর্ভধারণের বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশ করে। তাই বকনা/গাভী গর্ভধারণ করেছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য  প্রজননকৃত বকনা/গাভীকে ৩ মাস পর ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে গর্ভ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে।  গর্ভধারণ না করলে খাবার এবং চিকিৎসার মাধ্যমে পুনরায় হিটে আনার ব্যবস্থ্যা করতে হবে। আর গর্ভধারণ করলে গর্ভবতী বকনা/গাভীর সুষ্ঠ পরিচর্যা করতে হবে।

(৮) গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা

গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা

১। গর্ভবতী বকনা/গাভীকে সুষ্ঠু পরিচর্যা করা হলে তার স্বাভাবিক প্রসব, পূর্ণ মাত্রায় দুধ উৎপাদন ও পরবর্তীতে  সময়মত ডাকে আসা ও গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা থাকে।

২। গর্ভধারণের ৭ মাস পর্যন্ত তার খাদ্য, দুধ দোহন ও অন্যান্য পরিচর্যা স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।

৩। গর্ভবর্তী বকনা/গাভী যেন পড়ে গিয়ে আঘাত না পায় বা তার উপর অন্য কোন প্রাণি লাফিয়ে না উঠে  সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৪। গর্ভবতীর প্রাণীর স্বাভাবিক প্রসব ও দুধ উৎপাদনের জন্য ভেটেরিনারী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গর্ভবতী  বকনা/গাভীর অবস্থ্যার উপযোগী খাদ্য, দুধ দোহন ও অন্যান্য পরিচর্যার ব্যবস্থ্যা কতে হবে।

৫। ঘরের মেঝেতে শুকনা পরিস্কার খড় সুন্দরভাবে বিছিয়ে দিতে হবে, যাতে প্রণীটি আরাম করে শুতে পারে।  ঘরের মেঝেতে এ জন্য প্রয়োজনে ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।

পড়ুন
গরু হিটে আনার ইনজেকশন (গরু হিটে আনার চিকিৎসা)

৬। মশামাছির উপদ্রব হতে প্রাণীকে রক্ষা করতে হবে।

৭। গর্ভবতী বকনা/গাভীকে প্রত্যহ সবুজ কাঁচা ঘাস, দানাদার খাদ্য ও প্রচুর পরিমান পরিস্কার পানি খাওয়াতে হবে।

৮। গর্ভবতী বকনা/গাভীকে শীতের সময় পানি কুসুম গরম করে খেতে দিতে হবে এবং গরমের দিন হলে  প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।

৯। গর্ভধারণের ৭ মাস পর থেকে গর্ভবতী বকনা/গাভীকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করে পর্যাপ্ত আলো  বাতাসপূর্ণ ঘরে রাখতে হবে যাতে প্রাণীটি উক্ত ঘরে সহজেই নড়াচড়া করতে পারে।

১০। অতিরিক্ত ঠান্ডা ও গরম থেকে গর্ভবতী বকনা/গাভীকে রক্ষা করতে হবে।

(৯) গর্ভধারণের শেষের দিকে গাভীর দোহন বন্ধ করণ ও উহার সুফল

১। দুগ্ধবতী গাভীকে গর্ভধারণের ৮মাস পর্যন্ত দুধ দোহনের পর দোহন বন্ধ করতে হবে।

২। এ সময়ে দুধের প্রবাহ বন্ধ না হলে দানাদার খাদ্য কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে দুধ দোহন বন্ধ  করার প্রথম ১-২ দিন খাদ্য তালিকায় মিশ্রিত দানাদার খাদ্য সরবরাহ সর্ম্পণভাবে বন্ধ করতে হবে। তাহলে  ওলানে দুধ প্রবাহে বন্ধ হতে সহায়তা করবে।

৩। দুধ দোহন বন্ধ করা না হলে নবজাত বাছুর অত্যন্ত নিস্তেজ ও দুর্বল হওয়া এবং গাভীর পরবর্তী দোহনে দুধ  উৎপাদন হ্রাস পাবে।

৪। দুধ বন্ধ হলে পুনরায় পূর্বের ন্যায় মিশ্রিত দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তবে প্রসবের প্রায় দুই সপ্তাহ  পূর্ব হতে গাভীর খাদ্যের পরিমান আস্তে আস্তে হ্রাস করতে হবে এবং সহজে হজম হয় এমন খাদ্য খাওয়াতে  হবে ও পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

৫। গাভীর প্রতি প্রসবের ২/৩ দিন আগে থেকে ২৪ ঘন্টা তী² দৃষ্টি রাখতে হবে।

(১০) গাভীর প্রসবকালীন লক্ষণ

গাভীর প্রসবকালীন লক্ষণ

১। গাভীর ওলান বড় হয়ে যাবে ও বাঁট দিয়ে দুধ জাতীয় তরল পদার্থ বের হবে।

২। যোনিমুখ বড় হয়ে ঝুলে যাবে এবং নরম ও ফোলা থাকবে।

পড়ুন
সঠিক সময়ে গরু গরম করার উপায়, গরু হিটে আনার চিকিৎসা, গরু হিটে না আসলে করনীয়?

৩। পেট ঝুলে পড়বে ও লেজের গোড়ার দুই পাশের স্থ্যানে গর্তের মত হবে।

৪। যোনিমুখ দিয়ে আঠাল তরল পদার্থ নির্গত হবে ও গাভী ঘন ঘন প্রস্রাব করার চেষ্টা করবে।

৫। চুড়ান্ত পর্যায়ে স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে বাছুরের সামনের দুই পা ও নাক দেখা যাবে।

(১১) গাভীর প্রসবকালীন পরিচর্যা

গাভীর প্রসবকালীন পরিচর্যা

১। গাভীর যখন বাচ্চা প্রসবের সময় হয় তখন গাভীকে একটি উন্মুক্ত নিরিবিলি স্থ্যানে রাখতে হবে। ∙ গাভীর প্রসবের স্থ্যান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং পরিস্কার শুকনা খড় বিছিয়ে দিতে হবে। ∙ গাভীকে লোক চোখের আড়ালে নিরিবিলি স্থ্যানে রাখতে হবে এবং অন্য গরুর সাথে যেন মারামারি না করে  তা খেয়াল রাখতে হবে।

২। গাভীর প্রসবের সময় যেন কুকুর, বিড়াল, শিয়াল ইত্যাদি কাছে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৩। স্বাভাবিক প্রসবের সময় প্রসূত বাচ্চার সামনের দু’পা তার মধ্যে মাথাসহ বেরিয়ে আসবে। তারপর সমস্ত  শরীর বেরিয়ে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবে।

৪। গাভীর প্রসবকালীন সময়ে গাভী বারবার উঠা-নামা করবে। এ সময় অতি সাবধানে বাছুরের সামনের দু’টি পা ও  মাথাকে ধরে আস্তে আস্তে টেনে ভূমিষ্ঠ করাতে হবে।

৫। গাভীর স্বাভাবিক প্রসব না হলে সাথে সাথে ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা গ্রহণ  করতে হবে।

৬। গাভীর প্রসব হয়ে গেলে বাছুরকে গাভীর সামনে দিতে হবে, যাতে গাভী বাছুরের শরীর চেটে পরিস্কার করতে পারে।  প্রসবোত্তর গাভীর যতœ ও পরিচর্যা

৭। গাভীর প্রসবের পর গাভীর পিছনের অংশ জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ভালভাবে পরিস্কার করতে হবে। ∙ আবহাওয়া বেশী ঠান্ডা হলে গাভী ও বাছুরের জন্য উষ্ণতার ব্যবস্থ্যা করতে হবে।

৮। প্রসবের পরপরই একটি বালতিতে কুসুম গরম পানির সাথে দেড় কেজি গমের ভুষি, আধাকেজি চিটাগুড়,  ৫০ গ্রাম লবন মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে। এরূপ খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে  যেতে সহায়তা করবে। তাছাড়া কুসুম গরম পানিতে শুধৃু ঝোলাগুড় মিশিয়েও গাভীকে খাওয়ানে যেতে পারে।

পড়ুন
গাভীর দুধ বৃদ্ধিতে বা গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে নির্ভরশীল বিষয়সমূহ, ভালো মানের বিশুদ্ধ দুধ উৎপাদনের শর্ত সমূহ ও খাাঁটি/ভেজাল দুধ পরীক্ষা পদ্ধতি

৯। প্রসবের পরপরই ওলান ঈষৎ উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে বাছুরকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। ∙ গাভীর শাল দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। শাল দুধের সাথে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম বের হয়ে  যাওয়ার ফলে গাভীর ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগ মিল্ক ফিভার হতে পারে। এজন্য গাভীকে প্রচুর কাঁচা  সবুজ ঘাস এবং খনিজ সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।

১০। সাধারণত বাচ্চা জন্মানোর ৬-১২ ঘন্টার মধ্যে প্রসবকৃত গাভীর ফুল বের হয়ে যায়।  স্বাভাবিকভাবে গর্ভফুল না পড়লে ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

১১। প্রসবের ২/১ দিন আগে থেকে রাত্রে পাহারা দিতে হবে, কেননা রাত্রে প্রসব হয়ে গেলে গর্ভফুল পড়া মাত্র  গাভী তা খেয়ে ফেলতে পারে। গাভী গর্ভফুল খেলে গাভীর স্বাস্থ্যহানী হবে ও দুধ উৎপাদন কমে যাবে। সময়মত ফুল পড়লে সাথে সাথে তা সরিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

১২। বাচ্চা প্রসবের ২ দিন পর থেকে গাভীকে নিয়মিত দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, আশা করি আপনারা গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিষয়াবলী সম্পর্কে আপনাদের মনের ভেতরে থাকা প্রশ্নে উত্তর সমূহ পেয়েছেন। এছাড়ও যদি আরও কোন পশ্ন বাকি থেকে থাকে এবং কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই পোষ্টটি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন সঙ্গে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক করতে ভুলবেন না।

যে সকল পাঠক/পাঠিকা আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন যদি পশুদের বিভিন্ন রকম রোগ তাদের চিকিৎসা এবং মেডিসিন সম্পর্কে আরও জানতে চান তারা এই ব্লগে নিয়মিত ভিজিট করবেন। পাশাপাশি আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক এবং ইউটিউব চ্যানেলটিকেও সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন,তাতে আমাদের পোষ্ট ও ভিডিও নোটিফিকেশনগুলো সবার আগে পেতে পারেন। আমাদের আজকের এই আলোচনা এখানেই ইত টানছি। শেষ অবধি সাথে থাকার জন্য আপনোকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

পড়ুন
বাংলাদেশের কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়? কোন জাতের গাভী ভাল?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরুর কৃমি রোগ, গরুর কৃমি কত প্রকার, গরুর পরজীবী রোগ কি কি, গরুর গায়ে পোকা, গরুর গায়ে উকুন

গরুর কৃমি রোগ বা গরুর কৃমি কত প্রকার? গরুর পরজীবী রোগ কি কি? গরুর গায়ে পোকা, গরুর গায়ে উকুন, আঁঠালি, মাছি

আলোচ্য বিষয়: .(১) গরুর কৃমি রোগ বা গরুর কৃমি কত প্রকার? গরুর গোলকৃমি, পাতা কৃমি ও ফিতা কৃমি (২) গরুর বহিঃপরজীবী রোগ কি কি? গরুর গায়ে পোকা, গরুর গায়ে উকুন, আঁঠালি, মাছি
সাইলেজ ও হে তৈরির পদ্ধতির ব্যবহার করে ঘাস সংরক্ষণ

সাইলেজ ও হে তৈরির পদ্ধতির ব্যবহার করে ঘাস সংরক্ষণ

আলোচ্য বিষয়: (১) সাইলেজ ও হে তৈরির পদ্ধতির ব্যবহার করে ঘাস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা (২) শুকনো ঘাস বা হে তৈরি (৩) সাইলেজ তৈরি
গরুর ঘর নির্মাণ এর ২২টি নিয়ম (gorur ghor nirman)

গরুর ঘর নির্মাণ এর ২২টি নিয়ম (gorur ghor nirman)

আলোচ্য বিষয়: (১) গরুর ঘর নির্মাণের মূল নীতি (২) গরুর ঘর নির্মাণ এর ২২টি নিয়ম
ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ ও তার লক্ষণ-প্রতিকার

ভাইরাস সৃষ্ট ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ

আলোচ্য বিষয়: (১) গরুর রোগ কি কি প্রকারের হয়? (২) ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ ছড়ানোর কারণ কি? (৩) ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কি? (৪) ছোঁয়াচে গরুর রোগ সমূহ কোনগুলো? (৫) ভাইরাস সৃষ্ট গরুর রোগ ও তার প্রতিকার (৬) ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট গরুর রোগ ও তার প্রতিকার
গরু খাবার খায় না, অ্যানোরেক্সিয়া, ৩টি গরু না খাওয়ার কারণ জানুন

গরু খাবার খায় না (অ্যানোরেক্সিয়া): ৩টি গরু না খাওয়ার কারণ জানুন

আলোচ্য বিষয়: (১) গরুর বদহজম বা ফুড পয়জনিং হলে গরু খায় না (২) নাইট্রেট পয়জনিং হলে গরু খাবার খায় না (৩) ইনফেক্সাস ডিজিজ অথবা কিটোসিস হলে গরু খাবার খায় না
গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া, সমস্যা, কৃত্রিম প্রজনন, গরুর প্রজনন বয়স, কাল, পদ্ধতি, পরিচর্যা (gavi projonon)

গাভীর প্রজনন প্রক্রিয়া, সমস্যা, কৃত্রিম প্রজনন, গরুর প্রজনন বয়স, কাল, পদ্ধতি, পরিচর্যা সহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা (gavi projonon)

আলোচ্য বিষয়: (১) একটি আদর্শ গাভীর বৈশিষ্ঠ্য (২) গাভী ডাকে আসা/গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ (৩) গাভীর প্রজনন কার্যক্রম
গাভীর গর্ভধারণ সমস্যাঃ গাভীর বন্ধ্যাত্ব ও প্রতিকার

গাভীর গর্ভধারণ সমস্যাঃ গাভীর বন্ধ্যাত্ব ও প্রতিকার

আলোচ্য বিষয়: (১) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যার বা বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো কি কি? (২) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা গাভীর বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ (৩) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব প্রতিকারের উপায় (৪) গাভীর অনুর্বরতা ও সাময়িক বন্ধ্যাত্ব দেখা দিলে করণীয়
গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা কি কি ও কিভাবে করবেন

গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা কি কি ও কিভাবে করবেন?

আলোচ্য বিষয়: (১) গাভীর গর্ভধারণ সমস্যা গুলো থেকে বাঁচতে করণীয় (২) বাচ্চা প্রসবের পূর্বে গর্ভবতী গাভীর লক্ষণ (৩) গাভীর গর্ভকাল এ প্রসবের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা (৪) নবজাতক গরুর বাছুরের যত্ন, পরিচর্যা ও খাদ্য
গরু খাবার খায় না, গরু খাবার না খাওয়ার কারণ, গরু কম খাওয়ার কারণ, গরুর খাবার না খেলে

১৬টি কারণে গরু খাবার খায় নাঃ গরু খাবার না খাওয়ার কারণ? গরু কম খাওয়ার কারণ? গরুর খাবার না খেলে কি করনীয়?

আলোচ্য বিষয়: (১) যেকল রোগ সম্পর্কিত কারণে গরু খাবার খায় না (২) পরিবেশ, অবস্থা ও মনস্তাত্বিক প্রভাবে গরু কম খাওয়ার কারণ (৩) রোগ সম্পর্কিত গরু খাবার না খাওয়ার কারণসমূহের বর্ণনা (৪) পরিবেশ, অবস্থা ও মনস্তাত্বিক প্রভাবে গরু কম খাওয়ার কারণগুলো বর্ণনা
সাইলেজ কি, সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়, সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা কি

সাইলেজ কি? সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়? সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা কি?

আলোচ্য বিষয়: (১) সাইলেজ কি? (২) সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়? (৩) সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা কি?