ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস লক্ষণ ও চিকিৎসা

ছাগলের ঠান্ডা রোগ কি কি হয়? ঠান্ডায় ছাগলের রোগ ও চিকিৎসা ট্রিটমেন্ট এবং মেডিসিন নিয়ে আমরা আজকেরে এই পোষ্টাটিরত আলোচনা করব।
তো চলুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
(১) ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস কি?

ঠান্ডায় মূলত ছাগলের ছাগলের রোগ হয় যেটাকে আমরা রাইনাইটিস বলে থাকি। রাইনাইটিস বা ক্রেয়েজা যা বাংলায় যেটাকে বলা হচ্ছে- সর্দি, ঠান্ডা এবং কাশি এই তিনটাকে একত্রে আমরা রাইনাইটিস বলি।
(২) ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস হওয়ার কারণ কি?
⇒ এর কারণ ঠান্ডা এবং সেঁতসেঁতে জায়গায় এই রাইনাইটিস বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত যখন শীতকাল যেসব জায়গায় রোদ কম পায়, গাছের ছায়া সেই জায়গাটা সেঁতসেঁতে থাকে তার কারণে কিন্তু হয়।
⇒ দ্বিতীয়ত কারণ হচ্ছে ধুলো এবং বিভিন্ন ধরনের রবি শস্য চাষ হওয়ার কারণে তার যে পরাগ এই পরাগ রেণুৃর কারণে কিন্তু এটা হয়ে থাকে।
⇒ এছাড়াও কৃমি যেমন সৃষ্টসোমা, নেজিলিস নামক যে কৃমি আছে সেই কৃমি দ্বারা কিন্তু এটা হয়ে থাকে।
⇒ এছাড়া ফাঙ্গাসের কারণেও রাইনাইটিস হয়। উক্ত ফাঙ্গাসের নাম হচ্ছে এসপারজিলোস প্রিওমিগেটস। এই ফাঙ্গাসের দ্বারা কিন্তু রাইনাইটিস হয়ে থাকে। এ ছাড়া কোন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও এই রোগ হয়ে থাকে।
(৩) ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস হওয়ার লক্ষণ কি?
সাধারণত ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস হওয়ার লক্ষণগুলো হলো-
- ছাগল হাঁছি দিবে।
- শ্বাস নেওয়ার সময় আওয়াজ আসবে।
- নাকে তার যন্ত্রণা হবে।
- নাক দিয়ে হালকা হালকা সর্দি বের হবে সেটা একদম জলের মতো পাতলা থাকবে। একদম হালকা সর্দি।
- নাকের ছিদ্র হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে তাদের শ্বাস নেওয়া কষ্ট হবে।
- খাবার দেওয়ার পরও কম খাবে।
- ছাগল ঝিমিয়ে থাকবে।
- গায়ের লোম পড়ে থাকবে।
- ঘরের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
সাধারণত এটা সচরাচর দেখা যায় লক্ষ করবেন গ্রামে-গঞ্জে বা কোন ফার্মে ছাগলগুলো এই অবস্থা বেশিরভাগ দেখা যায়।
আর একটি কথা মনে রাখবেন যদি কোনো সংক্রামক এর কারনে হয় যেমন ধরো কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে রেখে ট্রিটমেন্ট দেওয়া উচিত।
যদি আমরা এই সময় ট্রিটমেন্ট দিতে না পারি তাহলে এর থেকে কিন্তু আরও কঠিন রোগে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। যার জন্য প্রথম অবস্থায় আমাদের ট্রিটমেন্ট দেওয়া উচিত।
(৪) প্রথম অবস্থায় ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস হলে কিভাবে ট্রিটমেন্ট করব? এবং কি কি মেডিসিন ইউজ করব?
⇒ প্রথম অবস্থায় যদি আমরা ট্রিটমেন্ট করি জাস্ট অ্যাটাক করেছে সেই সময়ে তাহলে সাধারণ টিটমেন্ট এর কাজ হয়ে যাবে। যেমন- নাকের যে শ্বাসনালী তার যন্ত্রণার জন্য আমরা “মেলোনেক্স প্লাস ট্যাবলেট” দিতে পারি।
⇒ এর পরে একটা এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিব। নরমাল এন্টিবায়োটিক দিতে পারি তাছাড়া আমরা ভালো এন্টিবায়োটিকও দিতে পারি।
নর্মাল এন্টিবায়োটিক এর মধ্যে “অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ট্যাবলেট” দিতে পারি বা “ম্যালোনেক্স প্লাস” দিতে পারি এবং সঙ্গে যেটা আয়ুর্বেদিক একটা মেডিসিন “ক্যাটকফ” পাউডার ইউজ করতে পারবো।
এ ছাড়াও আমরা এন্টিবায়োটিক হিসাবে “টেট্রাসাইক্লিন” এর জায়গায় আমরা “পেনিসিলিন” গ্রুপের “এমোক্সিসিলিন” এর “এ্যামোকসিরাম ফোর ট্যাবলেট” আমরা ইউজ করতে পারি।
এছাড়া “টেরামাইসিন”, “কিনোলোনস” গ্রুপের “সিপ্রোফ্লক্সাসিন” বা “অ্যান্ড্রক্লক্সাসিন” যেকোন ট্যাবলেট আমরা ইউজ করতে পারি।
এটা হচ্ছে প্রথম অবস্থায় প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট।
(৫) ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে কিভাবে চিকিৎসা করব?
⇒ রোগটি যদি বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আমাদের ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করা জরুরী।
যদি আমরা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করি তাহলে আমাদের প্রথম দিতে হবে তাদের “এন্টিহিস্টামিন ইনজেকশন” তার মধ্যে যেমন- “এভিল” বা “বাইভিলিন ভেট” বা “ইনস্ট্রামিন” ইত্যাদি ব্যাবহার করতে পারি।
এর সঙ্গে যদি হালকা জ্বর থাকে শরীরে তার জন্য আমরা যে কোন একটা আমরা “অ্যানালজেসিক ইনজেকশন” দিতে পারি যেমন- “মেলোনেক্স প্লাস” বা “মেলোক্সিকাম” বা “কেটোপ্রফিন” বা “মিগলোমাইন” ইত্যাদি।
এই দুধরণের ইঞ্জেকশান মিক্স করে আমাদের ইঞ্জেকশান লাগাতে হবে।
⇒ এর পরে “এন্টিবায়োটিক” আমরা ইউজ করব। এন্টিবায়োটিক এর মধ্যে যেমন ধরুন আমরা “পেনিসিলিন গ্রুপ” এর যেকোনো মেডিসিন ইউজ করতে পারি বা “কিউলোনন্স” গ্রুপের যে কোন মেডিসিন ইউজ করতে পারি অথবা “টেট্রাসাইক্লিন” গ্রুপেরও আমরা যে কোন একটা এন্টিবায়টিক ইউজ করতে পারি।
⇒ এরপরে লাস্ট অসুস্থ ছাগলকে আমরা একটা “ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইঞ্জেকশন” করে দেবো। তো এই ভাবে তাকে আমরা ইনজেকশনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট করবে।
⇒ এছাড়া তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে মানের তার ফুসফুসের প্রদাহ যেটা ফুসফুসে হালকা যন্ত্রণা যন্ত্রণা। সেই ফুসফুসের যন্ত্রণা কমানোর জন্য তার নাকে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে সেটাকে স্বাভাবিক করার জন্য আমরা থাকি “ইনহেলার” দিতে পারি, যা সাধারনত ছোট ছোট ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় সেই ট্যাবলেট ইউজ করতে পারি বা “পিপারমেন্ট” ইউজ করতে পারি।
⇒ এছাড়াও “পাইন্টিনয়েল” বা “বেনজাইনয়েল” যেটা মেডিকেল এ পাওয়া যায় সেটা মেডিকেল থেকে নিয়ে এসে আমরা জল গরম করে সে জলের মধ্যে ঢেলে দিয়ে তার বাষ্প সেটা ছাগলের নাকের মধ্যে দিতে হবে। তাহলে তার নাকের ছিদ্র ক্লিয়ার হয়ে যাবে, তার শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটবে না।
তো খামারি ভায়েরা পোষ্টিটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে আজকে এই ছাগলের ঠান্ডার রোগ ও চিকিৎসা পর্ব এই পর্যন্তই। যদি আলোচনাটি ভাল লেগে থাকে তাহলে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক অবশ্যই করে রাখবেন তাহলে ভবিষ্যতে আমরা এই ধরণের পোষ্ট করলে আপনি ফেসবুক নোটিফিকেশন থেকে জানতে পারবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আর হ্যাঁ প্রথম অবস্থা নতুন কোন মেডিসেন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ ও তত্বাবধানে চিকিৎসা করবেন। নিজে নিজে শুধু মাত্র অনলাইনে একটুশোনা করে চিকিৎসা করতে যাবেন না। অবশ্যই অনলাইন থেকে একটা স্পষ্ট ধারণা নিতে পারেন যা আপনার খামার পরিচালনায় অনেক সাহায্য করবে।
আশা করছি আজকের এই আলোচনাটির মাধ্যমে আমরা ছাগলের ঠান্ডা রোগ রাইনাইটিস লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করলাম ও অনেক নতুন নতুন অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
[তথ্য সূত্র: Krisna Dakua, West Bengal, India]
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।