পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের অবস্থাঃ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?

পদার্থ কাকে বলে, পদার্থের অবস্থাঃ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে
আলোচ্য বিষয়:

পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- পদার্থ। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা পদার্থ কাকে বলে ও পদার্থের বিভিন্ন প্রকার অবস্থা যেমন- কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের প্রকারভেদ যেমন- মৌলিক পদার্থ, যৌগিক পদার্থ ও মিশ্র পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাহলে আর দেরি না চলুন এবার শুরু করা যাক।

(১) পদার্থ কাকে বলে?

পদার্থ কাকে বলে: আমাদের চারপাশে নানারকম জিনিস রয়েছে (যেমন- চেয়ার, টেবিল, মাটি, পানি, বায়ু, লোহা ইত্যাদি)। এ সবকিছুই পদার্থের তৈরি। যা জায়গা দখল করে, যার ওজন আছে, আকার ও আকৃতি আছে এবং বলপ্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে।

অর্থাৎ, যার ভর আছে, আয়তন  আছে, একটি  নির্দিষ্ট স্থান দখল করে এবং বল বা চাপ প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে। যেমন- বাতাস, পানি, চেয়ার, টেবিল, লোহা, কাঠ, মাটি ইত্যাদি। 

(২) পদার্থের বৈশিষ্ট্য

পদার্থের বৈশিষ্ট্য: পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সাধারণত ভর, ওজন, আয়তন, ঘনত্ব, স্থিতিস্থাপকতা, আকার ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এগুলো হলো-

ভর: কোনো বস্তু যেসব উপাদান দিয়ে গঠিত তার পরিমাণই হলো ভর। ভরের একক হলো (g / kg)গ্রাম বা কেজি। 

ওজন: কোন বস্তুকে পৃথিবী কত বল দ্বারা নিজের দিকে আকর্ষণ করছে তার পরিমাণকে ওজন বলে। ওজনের একক হলো নিউটন।  

আয়তন: কোন বস্তু যে যায়গা জুড়ে অবস্থান করে সেটিই হলো সেই বস্তুর আয়তন।

ঘনত্ব: কোন বস্তুর একক আয়তনের ভরকে এর ঘনত্ব বলে। 

(৩) পদার্থের অবস্থা কয়টি ও কি কি?

পদার্থের অবস্থা কয়টি ও কি কি: সাধারণত পদার্থ ৩টি অবস্থায় থাকতে পারে। পদার্থের অবস্থা ৩টি হলো-

  1. কঠিন পদার্থ (Solid Matter)
  2. তরল পদার্থ (Liquid Matter)
  3. বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ (Gaseous Matter)

এছাড়াও রয়েছে প্লাজমা অবস্থা।

ক) কঠিন পদার্থ কাকে বলে?

কঠিন পদার্থ: যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এর আকার ও আয়তনের পরিবর্তন হয় না তাকে কঠিন পদার্থ (Solid Matter) বলে। যেমন – লোহা, ইট, পাথর, কাঠ ইত্যাদি।

অর্থাৎ, কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন ও নির্দিষ্ট আকার এবং দৃঢ়তা আছে। এর অণুগুলো পরস্পরের অতি সন্নিকটে অবস্থান করে। অর্থাৎ, এদের আন্তঃআণবিক দূরত্ব খুবই কম। এ কারণে এদের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে। উদাহরণ: বালু, পাথর, লবণ ইত্যাদি।

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

  • নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তন সবসময় নির্দিষ্ট থাকে।
  • তাপ প্রয়োগে সাধারণত কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়। যেমন : বরফকে উত্তপ্ত করলে তা গলে পানিতে পরিণত হয়।
  • ব্যতিক্রম হলো : ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদি। এসব কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এবং ঠান্ডা করলে বাষ্প থেকে পুনরায় কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে। একে ঊর্ধ্বপাতন বলা হয়।
  • প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগেও কঠিন পদার্থের আয়তনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না।
  • কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা থাকে। বাহির থেকে বল প্রয়োগ না করলে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তনের বিকৃতি ঘটানো যায় না।
  • চাপ দিয়ে কঠিন বস্তুকে তরলে পরিণত করে, চাপ প্রত্যাহার করে পুনরায় কঠিনে পরিণত করা যায়। একে পুনঃশিলীভবন বলে।

খ) তরল পদার্থ কাকে বলে?

তরল পদার্থ: যেসকল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু আকার নেই এবং যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রেই আকার ধারণ করে, তাকে তরল পদার্থ (Liquid Matter) বলে। যেমন- পানি, তেল, দুধ ইত্যাদি।

অর্থাৎ, তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। এ কারণে এদের যে পাত্রে রাখা হয় তার আকার ধারণ করে। তরল পদার্থের অণুগুলো পরস্পরের কাছাকাছি থাকে। তবে এদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি কঠিন পদার্থের মত এত প্রবল নয়। যেমন: পানি, পেট্রোল, কেরোসিন, ভোজ্য তেল ইত্যাদি।

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

  • নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে তরল পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না।
  • একে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তখন সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
  • বায়ুর চাপ কম থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। যেমন – পাহাড়ের উপর পানির স্ফুটনাঙ্ক ৭০° সেঃ।
  • তাপমাত্রা বাড়ালে তরলের আয়তন বাড়ে। তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে তরল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে।
  • তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ কমালে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে তরল পুনরায় কঠিনে পরিণত হয়।
  • তরলের অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে।

গ) বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?

গ্যাসীয় পদার্থ বা বায়বীয় পদার্থ: যে সকল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই তাকে বায়বীয়/গ্যাসীয় পদার্থ (Gaseous Matter) বলে।

গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের আন্তঃআণবিক দূরত্ব পদার্থের তিনটি অবস্থার মাঝে সবচেয়ে বেশি, এ কারণে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে কম। এর ফলে তারা প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চলাচল করে। যেমন: নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, মিথেন ইত্যাদি।

গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

  • গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার বা আয়তন নেই। গ্যাস বর্ণহীন বলে তা দেখা যায় না।
  • গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ যত কমই হোক না কেন, তা যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের পুরো স্থান দখল করে থাকে।
  • গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম। এর ফলে তারা প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে।
  • একই তাপমাত্রা ও চাপে সমআয়তন সব গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।
  • তাপ প্রয়োগে গ্যাসীয় পদার্থ সবচেয়ে বেশি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়।

পানিই একমাত্র পদার্থ, যা প্রকৃতিতে কঠিন (বরফ), তরল (পানি) এবং বায়বীয় (জলীয়বাষ্প) এই তিন অবস্থাতেই পাওয়া যায়। যেমন- মেরু অঞ্চলের  বরফ, নদী, সমুদ্রের পানি তরল, বায়ুর জলীয় বাষ্প বায়বীয়। 

ঘ) প্লাজমা অবস্থা বলতে কি বুঝ?

প্লাজমা অবস্থা বলতে কি বুঝ: কঠিন, তরল ও বায়বীয় ছাড়াও পদার্থের আরেকটি অবস্থা রয়েছে। যাকে প্লাজমা অবস্থা বলা হয়।

এ পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের কাছাকাছি থাকে, তবে তাদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি কঠিন পদার্থের মত এত প্রবল নয়।

বজ্রপাতের সময় আমরা যে বৈদ্যুতিক ঝলক দেখতে পাই তা প্লাজমা। প্লাজমা অবস্থায় পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা থাকে। যেমন- বৈদ্যুতিক স্পার্ক, ফ্লুরােসেন্ট বাতি, নিয়ন আলো ইত্যাদি।

(৪) পদার্থ কত প্রকার ও কি কি?

পদার্থ কত প্রকার ও কি কি: পদার্থের গঠনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-

  1. মৌলিক পদার্থ
  2. যৌগিক পদার্থ ও
  3. মিশ্র পদার্থ

ক) মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে: যেসকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে ওই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না তাদেরকে মৌলিক পদার্থ বলা হয়।

যেমন- হাইড্রোজেন (H₂) অণুকে ভাঙলে শুধু হাইড্রোজেনের দুটি পরামাণু পাওয়া যায়, তাই হাইড্রোজেন (H) একটি মৌলিক পদার্থ। অক্সিজেন (O2) অণুকে অক্সিজেনের দুইটি পরমাণু ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। তাই O একটি মৌলিক পদার্থ।

এ পর্যন্ত ১১৮/১১৪ টি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাঝে ৯৮/৯২ টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এই ৯৮/৯২ টির মাঝে ১৪ টি তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে। সবচেয়ে হালকা মৌলিক পদার্থ হলো হাইড্রোজেন (H)।

মৌলিক পদার্থ কত প্রকার: মৌলিক পদার্থ সাধারণত চার ধরনের হয়। যথা-

  1. ধাতু
  2. অধাতু
  3. উপধাতু
  4. নিষ্ক্রিয় মৌল

ধাতু: তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী মৌলকে সাধারণত ধাতু বলা হয়। সাধারণত ধাতুসমূহ চকচকে ও কঠিন অবস্থায় থাকে। এদেরকে বল প্রয়োগে করে বিভিন্ন আকার দেওয়া যায়। সবচেয়ে হালকা ধাতু হলো লিথিয়াম। সবচেয়ে ভারী ধাতু ইউরেনিয়াম।

ধাতুসমূহ এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হতে পারে। যেমন: কপার (Cu),  অ্যালুমিনিয়াম (Al), লোহা (Fe) ইত্যাদি।  

অধাতু: এরা সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। অধাতুসমূহ এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক (-) আয়নে পরিণত হতে পারে। যেমন- ফ্লোরিন, সালফার, অক্সিজেন ইত্যাদি। 

উপধাতু: উপধাতু কখনো ধাতু আবার কখনো কখনো অধাতুর মত আচরণ করে। উদাহরণ- বোরন, সিলিকন, আর্সেনিক, জার্মেনিয়াম, বিসমাথ, অ্যান্টিমনি, পোলোনিয়াম, টেলুরিয়াম ইত্যাদি। 

নিষ্ক্রিয় মৌল: নিষ্ক্রিয় মৌল বলতে পর্যায় সারণির ১৮ তম শ্রেণীর মৌলগুলোকে বোঝায়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এরা নিষ্ক্রিয় থাকে বলে এদের নিষ্ক্রিয় মৌল বলা হয়। এরা কোন মৌলের সাথে সংযুক্ত হতে চায় না। এমনকি নিজেরা নিজেরা নিজেদের সাথেও না।

নিষ্ক্রিয় মৌলের সংখ্যা ৭টি। এগুলো হলো- হিলিয়াম (H), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপটন (Kr), জেনন (Xa), রেডন (Rn) এবং ওগানেসন (Og)। সবচেয়ে হালকা নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলো হিলিয়াম। আর সবচেয়ে ভারী গ্যাস অগানেসন।

খ) যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?

যৌগিক পদার্থ কাকে বলে: যে সকল পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততােধিক ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন- পানি।

কারণ পানির (H₂O) একটি অণুকে ভাঙলে হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু ও অক্সিজেনের একটি পরমাণু পাওয়া যায়। তাই পানি একটি যৌগিক পদার্থ।

গ) মিশ্রণ বা মিশ্র পদার্থ কাকে বলে?

মিশ্রণ বা মিশ্র পদার্থ কাকে বলে: দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোনো অনুপাতে মিশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে, তবে উক্ত সমাবেশকে মিশ্রণ বলে। 

যেমন- বায়ু একটি মিশ্র পদার্থ। কারণ বায়ুতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, আর্গন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি উপাদান নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে।

সমসত্ব ও অসমসসত্ব মিশ্রণ বলতে কি বুঝ?

সমসত্ব মিশ্রণ: যে মিশ্রণের সকল অংশে উপাদানসমূহ একই অনুপাতে বিদ্যমান এবং যার সর্বত্র একই ধর্ম প্রকাশ পায় তাকে সমসত্ত্ব মিশ্রণ বলে। যেমন- চিনির শরবত একটি সমসত্ব মিশ্রণ।

অসমসত্ব মিশ্রণ: যে মিশ্রণের বিভিন্ন অংশে তার উপাদানসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে থাকে এবং যার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ধর্ম প্রদান করে তাকে অসমসত্ব মিশ্রণ বলে। যেমন- বায়ু। কারণ এতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে।

(৫) পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন কত ধরণের হতে পারে: পদার্থের অবস্থা এর পরিবর্তন মূলত দুই ধরনের হতে পারে। যথা-

  1. ভৌত পরিবর্তন
  2. রাসায়নিক পরিবর্তন 

ক) পদার্থের অবস্থার ভৌত পরিবর্তন

পদার্থের অবস্থার ভৌত পরিবর্তন কাকে বলে: যে পরিবর্তনের ফলে শুধু পদার্থের বাহ্যিক অর্থাৎ বাইরের আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু তা নতুন কোন পদার্থে পরিণত হয় না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। যেমন- পানিকে বরফে ও বাষ্পে পরিণত করা, লোহাকে চুম্বকে পরিণত করা, চিনিকে পানিতে দ্রবীভূত করা ইত্যাদি।

খ) পদার্থের অবস্থার রাসায়নিক পরিবর্তন

পদার্থের অবস্থার রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে: যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক নতুন বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। সাধারণত তাপ,চাপ অথবা পদার্থের সংস্পর্শে এলে পদার্থের এ পরিবর্তন ঘটে থাকে।

রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে যে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় তার অণুতে অবস্থিত মৌলগুলো সাধারণত পূর্বের পদার্থ থেকেই আসে। যেমন- পানি এবং অক্সিজেনের সংযোগে লোহায় মরিচা ধরা, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে পানি তৈরি হওয়া, দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো ইত্যাদি।

(৬) প্রায় জিঙ্গাসিক কিছু প্রশ্ন

ক) উদ্বায়ী পদার্থ বলতে কি বোঝ?

উদ্বায়ী পদার্থ: যে সকল পদার্থকে তাপ দিলে তা সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়, তাদেরকে উদ্বায়ী পদার্থ বলে। উদাহরণ: কপূর, ন্যাপথলিন, আইয়োডিন, নিশাদল, অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড, কঠিন কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি।

খ) গলনাংক ও স্ফুটনাংক কাকে বলে?

গলনাঙ্ক (Melting point): কোনো পদার্থকে কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর করতে যে তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, তাকে সে পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। উদাহরণ: পানির গলনাঙ্ক ০° সেঃ।

স্ফুটনাঙ্ক (Boiling Point): যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে সেই পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে। পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০° সেঃ।

গ) আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে?

আন্তঃআণবিক শক্তি: অণুসমূহ পরস্পরকে যে শক্তিতে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃআনবিক আকর্ষণ শক্তি বলে। এ শক্তির কারণে অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিকটে থাকতে কিন্তু অণুসমূহ সর্বদা কম্পমান। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কম্পন বৃদ্ধি পায় এবং অণুসমূহ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হতে চায়।

আন্তঃআনবিক শক্তি নির্ভর করে পদার্থের প্রকৃতির উপর। এ শক্তির তুলনায় গতিশক্তি কম হলে অণুসমূহ নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে। অর্থাৎ কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেসকল বস্তুর আন্তঃআণবিক শক্তি বেশি, তাদের গলনাংক ও স্ফুটনাংকও বেশি। এ শক্তি কম হওয়ায় গ্যাসীয় পদার্থ সমূহের গলনাঙ্ক ০° সেঃ এরচেয়ে অনেক কম।

(৭) বিভিন্ন পদার্থ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

  • হিমায়িত CO2 কে- শুষ্ক বরফ বলা হয়।
  • অক্সিজেন (O) এমন একটি মৌলিক পদার্থ যা- পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আছে।
  • সবচেয়ে হালকা বস্তু/মৌলিক পদার্থ/গ্যাস/অধাতু হলো- হাইড্রোজেন (H)। 
  • সবচেয়ে হালকা নিষ্ক্রিয় গ্যাস- হিলিয়াম
  • সবচেয়ে হালকা ধাতু হলো- লিথিয়াম
  • সবচেয়ে ভারী মৌলিক গ্যাস- অগানেসন > রেডন (Rn)
  • সবচেয়ে ভারী ধাতু- ইউরেনিয়াম (U)
  • সবচেয়ে ভারী তরল ধাতু হলো- পারদ

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তরঙ্গ কাকে বলে, তরঙ্গ কত প্রকার ও কি কি, তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য

তরঙ্গ কাকে বলে? তরঙ্গ কত প্রকার ও কি কি? তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য

আলোচ্য বিষয়: (১) তরঙ্গ কাকে বলে? তরঙ্গ কি? (২) তরঙ্গ কত প্রকার ও কী কী? (৩) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ও অনুপ্রস্থ তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য কি কি? (৪) তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য কি কি? (৫) তরঙ্গ মাধ্যম (৬) তরঙ্গ সৃষ্টির কারণ (৭) তরঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর ক) তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কাকে বলে? খ) পানির ঢেউ অনুপ্রস্থ তরঙ্গ কেন? গ) তরঙ্গ বেগ কাকে বলে? ঘ) তরঙ্গের দশা কাকে বলে? ঙ) তরঙ্গমুখ কাকে বলে? চ) স্থির তরঙ্গ কাকে বলে? ছ) যান্ত্রিক তরঙ্গ কাকে বলে? জ) তাপ তরঙ্গ কি? ঝ) তরঙ্গের দ্রুতি কাকে বলে? ঞ) লম্বিক তরঙ্গ কাকে বলে? ট) তরঙ্গস্থিত কোনো বিন্দুর দশা বলতে কি বুঝায়? ঠ) কোন তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 1000Hz বলতে কি বুঝায়?
রাশি কাকে বলে, স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি কাকে বলে

রাশি কাকে বলে? স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি কাকে বলে? উভয়ের মধ্য পার্থক্য সমূহ

আলোচ্য বিষয়: (১) রাশি কাকে বলে? বা রাশি কি? (২) স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি কাকে বলে? (৩) স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশির মধ্যে পার্থক্য (৩) সম্পর্কিত আরও কিছু সংজ্ঞা
বল কাকে বলে, বল কত প্রকার ও কি কি

বল কাকে বলে? বল কত প্রকার ও কি কি?

আলোচ্য বিষয়: (১) বল কাকে বলে? (২) বলের বৈশিষ্ট্য (৩) বলের একক (৪) বলের মাত্রা (৫) বলের প্রকারভেদ
চুম্বক কি, চুম্বকত্ব কাকে বলে, চুম্বকের প্রকারভেদ ও ধর্ম

চুম্বক কি? চুম্বকত্ব কাকে বলে? চুম্বকের প্রকারভেদ ও ধর্ম

আলোচ্য বিষয়: (১) চুম্বক কাকে বলে? চুম্বক কি? (২) চুম্বকত্ব কী? চুম্বকত্ব কাকে বলে? (৩) চুম্বকের ধর্ম (৪) চুম্বক কত প্রকার ও কি কি? (৫) প্রাকৃতিক চুম্বক কি? (৬) কৃত্রিম চুম্বক কি? (৭) চৌম্বক পদার্থ কি বা কাকে বলে? (৮) চৌম্বক পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? (৯) অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে? (১০) চুম্বকের প্রয়োগ (১১) তড়িৎ চুম্বক কি? তড়িৎ-চুম্বকে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয় কেন? (১২) চুম্বক বলরেখা কি? চুম্বক বলরেখার ধর্ম লেখ (১৩) চৌম্বক নিয়ে আরও বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন: চৌম্বক মেরু কাকে বলে? প্রশ্ন: উপমেরু কাকে বলে? প্রশ্ন: পোলারিটি কাকে বলে? প্রশ্ন: চৌম্বক আবেশ কাকে বলে? প্রশ্ন: চৌম্বক বিভব কাকে বলে? প্রশ্ন: চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য কাকে বলে? প্রশ্ন: কুরী বিন্দু বা তাপমাত্রা কাকে বলে? প্রশ্ন: সলিনয়েড কাকে বলে? প্রশ্ন: চুম্বকের ওপর তড়িৎপ্রবাহের ক্রিয়া কাকে বলে? প্রশ্ন: পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক প্রমান কর? প্রশ্ন: ডায়া, প্যারা ও ফেরো চুম্বকের মাঝে পার্থক্য কি কি? প্রশ্ন: কোন বস্তুকে চুম্বকে পরিণত করা হলে এর ভর ও আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না কেন? প্রশ্ন: চুম্বক আকর্ষন ও মহাকর্ষ আকর্ষনের মধ্যে পার্থক্য কী কী? (১৪) আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
লোহা কি, লোহার বৈশিষ্ট্য ও রাসায়নিক ধর্ম

লোহা কি? লোহার বৈশিষ্ট্য ও রাসায়নিক ধর্ম

আলোচ্য বিষয়: (১) লোহা কি (২) লোহার বৈশিষ্ট্য (৩) লোহার রাসায়নিক ধর্ম (৪) লোহার ব্যবহার
পদার্থ কাকে বলে, পদার্থের অবস্থাঃ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে

পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের অবস্থাঃ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?

আলোচ্য বিষয়: (১) পদার্থ কাকে বলে? (২) পদার্থের বৈশিষ্ট্য (৩) পদার্থের অবস্থা কয়টি ও কি কি? (৪) পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? (৫) পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন (৬) প্রায় জিঙ্গাসিক কিছু প্রশ্ন (৭) বিভিন্ন পদার্থ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য