ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানাকৃত টাকা কোথায় যায়? এই টাকা কে নেয়?

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানাকৃত টাকা কোথায় যায়, এই টাকা কে নেয়

আসসালামু আলাইকুম।

বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে গিয়ে যখন কর্মকর্তারা জরিমানা আরোপ ও আদায় করেন, তখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—এই জরিমানার টাকা কোথায় যায়? কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়?

এই টাকা কি আসলেই সরকারকে জমা দেওয়া হয়? বাজারে গেলে কোনো সবজি বিক্রেতা বা মাংস বিক্রেতা হয়তো মনে করেন, জরিমানার টাকা কর্মকর্তারাই নিয়ে নেন। এ ধরনের প্রশ্ন বা সন্দেহ অনেক সময় কর্মকর্তাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠে।

তাই এই বিষয়ে আজকে আলোচনা।

(১) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে, ভোক্তা অধিদপ্তরে কার্যক্রম

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
চিত্র- ভোক্তা অধিদপ্তরের একটি অভিযান

জানা যায়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তিনটি প্রধান উপায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন করে। যথা-

  1. প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
  2. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
  3. সচেতনতামূলক ব্যবস্থা

এই তিনটি কার্যক্রম মহাপরিচালকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে কর্মকর্তারা সম্পাদন করে থাকেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যা বাজার অভিযানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। বাজার অভিযানের সময় জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। তবে এই জরিমানা আদায়ের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায়। এই আলোচনায় সেই বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।

(২) ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া

কর্মকর্তারা যখন জরিমানা আরোপ ও আদায় করেন, তখন অবশ্যই একটি রশিদ প্রদান করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আলোকে কাজ করে। এই আইনের অধীনে মহাপরিচালককে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তিনি সেগুলো কর্মকর্তাদের মাঝে বণ্টন (ডেলিগেট) করেন। তখন কর্মকর্তারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অভিযোগ নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এই ক্ষমতা পাওয়ার পর কর্মকর্তাদের নামে একটি জরিমানা রশিদ বই ইস্যু করা হয়। এটি প্রধান কার্যালয় থেকে অফিশিয়াল পদ্ধতি মেনে ইস্যু করা হয়।

যেই কর্মকর্তার কাছে যেই সালে রশিদ বই ইস্যু করা হয়, সেই রশিদ বইয়ের সিরিয়াল নম্বর থাকে। এটি কোন কর্মকর্তা কোন অফিস বা কার্যালয়ের জন্য বরাদ্দ কার হয়েছে। এই সকল তথ্য প্রধান কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ের নথিতে রেকর্ড করা থাকে।

(৩) ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানার টাকার রশিদের ব্যবহার

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের জরিমানা রশিদ বইয়ে দুটি অংশ থাকে। যথা-

  1. সাদা অংশ: যেটি লিখে প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়।
  2. কার্বন কপি: যেটি কর্মকর্তাদের কাছে থেকে যায়।

এই কার্বন কপি সারাজীবন সংরক্ষণ করতে হয়। এটি সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। এটি অডিটযোগ্য এবং এর মাধ্যমে জরিমানার টাকা কীভাবে জমা দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই করা হয়।

কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক সভায় বলেন, যদি কেউ জরিমানা করে, তাহলে অবশ্যই রশিদ চাইতে হবে। রশিদ ছাড়া কখনোই জরিমানার টাকা পরিশোধ করা উচিত নয়। রশিদ ছাড়া টাকা চাইলে তা অনৈতিক ও বেআইনি। সেক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে।

(৪) ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে আদায়কৃত জরিমানার টাকা কোথায় যায়?

বাজার অভিযান শেষে কর্মকর্তারা অফিসে ফিরে আসেন। সেদিন যতগুলো প্রতিষ্ঠানে জরিমানা আরোপ করা হয়, তার একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এই রিপোর্টে কোন বাজারে কতটি প্রতিষ্ঠানকে কোন ধারায় কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে, তা উল্লেখ থাকে। এটি প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয় এবং নিজস্ব অফিসেও সংরক্ষিত থাকে।

জরিমানার টাকা সরকারের নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (কর বহির্ভূত রাজস্ব) হিসেবে গণ্য হয়। এটি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট কোড ব্যবহৃত হয়। কর্মকর্তারা অভিযানের দিন বা পরের দিনের মধ্যে এই টাকা সরকারি ব্যাংকে জমা দেন।

(৫) আদায়কৃত জরিমানার টাকার চালান জমার প্রক্রিয়া

জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার জন্য তিনটি কপি চালান তৈরি করা হয়। যথা-

  1. একটি কপি ব্যাংকের কাছে থাকে।
  2. একটি কপি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়।
  3. একটি কপি অফিসে সংরক্ষিত থাকে।

জমা দেওয়ার পর ব্যাংক থেকে একটি সিল ও চালান নম্বর প্রদান করা হয়।

(৬) অনলাইন চালান ভেরিফিকেশন

বর্তমানে ডিজিটাল ইন্টারনেটের যুগ হিসেবে অনলাইন চালান ভেরিফিকেশন সুবিধা চালু হয়েছে। গুগলে “অনলাইন চালান ভেরিফিকেশন” সার্চ করে চালান নম্বর, জমার তারিখ, ব্যাংকের নাম ও শাখার তথ্য দিয়ে যাচাই করা যায়।

(৭) স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানাকৃত টাকার লেদদেন প্রক্রিয়া এতটাই স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার সঙ্গে সম্পন্ন হয় যে এখানে কোনো গড়মিলের সুযোগ নেই। কর্মকর্তারা মাসিক ও বার্ষিক রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান, যেখানে মোট জরিমানা আদায় ও জমার হিসাব থাকে। এতে একটি টাকারও অমিল হলে কর্মকর্তা ও অধিদপ্তর উভয়ই বিপদে পড়তে পারে।

বন্ধুরা, পরিশেষে এটাই বলা যায়, যারা মনে করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের জরিমানার টাকা কর্মকর্তা বা অফিস নিয়ে নেয়, তাদের জন্য স্পষ্ট করা হচ্ছে—এটি সম্পূর্ণ সরকারি নন-ট্যাক্স রেভিনিউ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এই টাকার কোন অংশ অফিস বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নেয় না।

আশা করা যায়, এই আলোচনার মাধ্যমে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানাকৃত টাকা কোথায় যায়? এই টাকা কে নেয়? এ বিষয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে।

তো আজকে এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

[তথ্য সূত্র: Vokta Odhikar (DNCRP)]

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Debug: Using Category Slug public-services (● নাগরিক সেবা)
Result:
No posts found.