মুনাফিক কাকে বলে? মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি? মুনাফিক এর লক্ষণ সমূহ

মুনাফিক কাকে বলে, মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি, মুনাফিক এর লক্ষণ সমূহ

প্রিয় পাঠক, এখানে আমরা কুরআনে কারীমের সূরা আল-বাকারার দ্বিতীয় রুকুতে আলোকে মুনাফিকদের চরিত্র জানার ও বুঝার চেষ্টা করব।

এই আলোচনাটি সম্পূর্ণ অধ্যয়নে আপনি- মুনাফিক কাকে বলে? মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি? মুনাফিক এর লক্ষণ সমূহের বর্ণনা জানতে পারবেন।

(১) মুনাফিক কাকে বলে? মুনাফিকের পরিচয়

মুনাফিক কাকে বলে: মুনাফিক অর্থ একজন প্রতারক বা ভন্ড ধার্মিক ব্যক্তি। যে প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে; কিন্তু গোপনে অন্তরে কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে প্রতারণা করে তাকে মুনাফিক বলে। তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়।

মুনাফিকের পরিচয়: মুনাফিকি মানে কপট বিশ্বাসী। নিফাক বা মুনাফিকি অত্যন্ত জঘন্য পাপ। সমাজ, দল, রাষ্ট্র তথা সমষ্টিগত জীবনে নিফাকের দুষ্ট ব্যাধি সর্বদা বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে। তারা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিতে তৎপর থাকে। তাই ইসলামে একে অমার্জনীয় পাপ বলা হয়েছে।

মুনাফিক সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পাবার জন্য মুসলিম সেজে গোপনে ইসলামের মারাত্মক ক্ষতির চেষ্টায় লিপ্ত থাকে।

মুনাফিক প্রতি যুগেই কিছু না কিছু ছিল। মহানবীর (স) সময়ে মদীনায় আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বে মুনাফিক শ্রেণির সৃষ্টি হয়।

(২) মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি? মুনাফিক এর লক্ষণ সমূহ

মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি: মুনাফিকের লক্ষণ কয়টি তার কোন নির্দিষ্ট নাম্বারিক করা নেই। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন স্থানে মুনাফিকদের চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন, হাদিসে এসেছে-

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“মুনাফিকের চিহ্ন হলো তিনটি- এক. কথা বললে মিথ্যা বলে। দুই. ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে। এবং তিন. আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।” মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম।”

(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

এছাড়াও, সূরা বাকারাতে বর্ণিত মুনাফিক এর লক্ষণ সমূহ হলো-

পড়ুন
সুদ ও ঘুষ অর্থ, কী, কাকে বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ-ঘুষের কুফল, পরিণতি ও বিধান

ক) এরা প্রকৃত বিশ্বাসী নয়

মুনাফিকরা প্রকাশ্যভাবে নিজেদেরকে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী বলে দাবি করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার নয়। বরং অন্তরে তারা ইসলামের প্রতি ঘোর অবিশ্বাস পোষণ করে থাকে। সূরা আল-বাকারায় বলা হয়েছে-

‘তারা ঈমানদার নয়’। (সূরা আল-বাকারা ২: ৮) 

খ) মুনাফিকরা ধোঁকাবাজ

মুনাফিকরা ধারণা করে যে, তারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু‘মিনদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারা কেবল নিজেদেরকেই ধোঁকা ও প্রব নার জালে আবদ্ধ করে ধ্বংস ও ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, অথচ তারা এ সহজ কথাটি বুঝতে পারে না।

গ) মুনাফিকরাই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী

মুনাফিকরা গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীতে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখে। এ ব্যাপারে যখন তাদেরকে বলা হয় যে, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টি করো না। তখন তারা সাধু-তপস্বী সেজে বলতে থাকে:

“আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী” (সূরা আল-বাকারা ২: ১১)

প্রকৃতপক্ষে এরাই যাবতীয় অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। 

ঘ) মুনাফিকের হৃদয়ে কপটতার রোগ

মুনাফিকদের হৃদয়ে রয়েছে কপটতা ও প্রব নার রোগ। কখন কাকে ক্ষতি করবে, কখন কার বিরুদ্ধে লাগবে, কখন সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে- এ হীন চারিত্রিক রোগ নিয়ে তারা সর্বদা ঘুরে বেড়ায়।

ঙ) মুনাফিক দ্বিমুখী

মুনাফিকরা যখন ঈমানদারদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, তারা ঈমান এনেছে। আবার যখন তাদের দুষ্ট দলপতির সাথে মিলিত হয় তখন বলে, তারা তাদের সঙ্গেই রয়েছে। এরা দ্বিমুখী চরিত্রের। কোথাও তাদের স্বস্তি নেই।

চ) মুনাফিক নির্বোধ

মুনাফিকদেরকে খাঁটিভাবে ঈমান আনতে বলা হলে তারা মুখের উপর বলে দেয়, তারা কি নির্বোধদের ন্যায় অন্ধভাবে ঈমান আনবে? মহান আল্লাহ বলেন- “প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বোধ ও অজ্ঞ। কিন্তু এতটুকু বাস্তবতা তারা বুঝতে পারে না।”

ছ) মুনাফিক পথহারা, অন্ধ ও বধির

মুনাফিকরা পথহারা, তাদের অন্তর ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তাই মহান আল্লাহ তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বধির, মূক ও অন্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

পড়ুন
স্বদেশপ্রেম কী? স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব ও উপায়

মহানবী (স) মুনাফিকদের কিছু লক্ষণ তুলে ধরে বলেন, মুনাফিকরা-

  1. কথায় কথায় মিথ্যা বলে;
  2. প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে;
  3. আমানতের খিয়ানত করে এবং
  4. ঝগড়া বিবাদে অশ্লীল গালমন্দ করে।

এসব লক্ষণ ও চরিত্র যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তারাই মুনাফিক। এদের হীন ষড়যন্ত্র ও অনিষ্ট হতে সর্বদা সতর্ক থাকতে কুরআন ও হাদিসে সাবধান করা হয়েছে।

মহানবী (স)-এর নবুওয়াত লাভের প্রাথমিক যুগে মাক্কী জীবনে মূলত মানুষ দু’টো দলে বিভক্ত ছিল। প্রথমটি মহানবী (স) অনুগত একত্ববাদী মুসলিম আর অপর দলটি ছিল বহুত্ববাদী, কাফির ও মুশরিক। কিন্তু মহানবীর (স) মদীনায় হিজরাতের পর সুবিধাবাদী একটি তৃতীয় দলের সৃষ্টি হয়। এরা হৃদয়ে কুফরি ও শিরক গোপন রেখে কেবল সুবিধাভোগের লক্ষে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের দাবি করত। মহানবীর (স) প্রতি কপট আনুগত্য দেখাত। এ অন্তর্ঘাতমূলক দলটি মুনাফিক নামে পরিচিত।


অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কর্তব্য সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
surah ikhlas bangla, সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণসহ অর্থ-অনুবাদ

সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণসহ অর্থ/অনুবাদ (surah ikhlas bangla)

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণসহ অর্থ একত্রে (২) সূরা ইখলাস আরবি (৩) surah ikhlas bangla (৪) সূরা ইখলাসের বাংলা অর্থ/অনুবাদ (৫) surah ikhlas bangla picture HD (৬) surah ikhlas uccharon audio mp3 (৭) surah ikhlas bangla uccharon o ortho video mp4 (৮) সূরা ইখলাস এর ফজিলত (৯) সূরা ইখলাস/সূরা এখলাছ পরিচিতি (১০) সূরা ইখলাসের শানে নুযুল বা নাযিলের কারণ (১১) সূরা ইখলাসের বিষয়বস্তু (১২) সূরা ইখলাসের তাফসির/ব্যাখ্যা (১৩) সূরা ইখলাসের শিক্ষা
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
আল কুরআন কি, আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আল কুরআন কি? আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) আল কুরআনের পরিচয় ক) কুরআর শব্দের অর্থ কি? খ) কুরআন কাকে বলে? গ) আল কুরআন কি? (২) আল কুরআন অবতরণ (৩) আল কুরআন সংরক্ষণ (৪) আল কুরআন সংকলন (৫) আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্য (৬) আল-কুরআনের গুরুত্ব (৭) নাযিরা তিলাওয়াত (৮) কুরআন তিলাওয়াতের আদব
যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাত কে দিবে, কাকে দিবে, এবং কাকে দেওয়া যাবে না

যাকাত দেওয়ার নিয়ম কি? যাকাত কে দিবে? কাকে দিবে? এবং কাকে দেওয়া যাবে না?

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: যাকাত দেওয়ার নিয়ম কি? যাকাত কে দিবে? কাকে দিবে? এবং কাকে দেওয়া যাবে না? যাকাত দেওয়ার নিয়মসমূহকে নিম্নোক্ত মোট ৬টি পয়েন্টে তুলে ধরা হলো: (১) যাকাত কাকে বলে? যাকাত কি ও কেন? (২) যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি? যাকাত কাদের উপর ফরজ? (৩) নিসাব কাকে বলে? নিসাব পরিমাণ সম্পদ কত টাকা? কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়? কত টাকা হলে যাকাত ফরজ? (৪) যাকাতের খাত কয়টি? কাদের যাকাত দেওয়া যাবে? কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়? কে যাকাত পাওয়ার যোগ্য? (৫) যাকাত কাদের দেয়া যাবে না? যাকাত কাকে দেওয়া দেয়া যাবে না? যাকাত কারা পাবে না? যাকাতের টাকা কাদের দেওয়া যাবে না? (৬) যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইসলামের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা

ইসলামের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ইসলামে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (২) ভ্রাতৃত্ব (উখুয়াত) (৩) উম্মাহ (৪) ইসলামি দাওয়াহ (৫) ইসলামি দাওয়াহ মাধ্যম ও কৌশল (৬) দাঈ এর গুণাবলী (৭) খিদমতে খালক (৮) মানবাধিকার সংরক্ষণে ইসলাম (৯) পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম
সূরা বাকারার ১ ও ২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ১ ও ২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ১ ও ২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
মিতব্যয়িতা কী, কাকে বলে মিতব্যয়িতার গুরুত্ব

মিতব্যয়িতা কী, কাকে বলে? মিতব্যয়িতার গুরুত্ব

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) মিতব্যয়িতা কী, কাকে বলে? (২) মিতব্যয়িতার গুরুত্ব
সূরা বাকারার ৩, ৪, ৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ৩, ৪, ৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ৩, ৪, ৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
আল্লাহ তায়ালার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আল্লাহ তায়ালার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

● ইসলাম
নিম্নে আল্লাহ তায়ালার পরিচয়কে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো-