মৎস্য অভয়াশ্রম কি বা মাছের অভয়াশ্রম কি? বাংলাদেশের মৎস্য সংরক্ষণ আইন

মৎস্য অভয়াশ্রম কি বা মাছের অভয়াশ্রম কি, বাংলাদেশের মৎস্য সংরক্ষণ আইন

এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- মৎস্য অভয়াশ্রম কি বা মাছের অভয়াশ্রম কি, তার সংজ্ঞা বলতে পারবেন। মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন। মৎস্য সংরক্ষণ আইনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবেন। মৎস্য সংরক্ষণ আইন সম্পর্কে জানতে পারবেন।

(১) মৎস্য অভয়াশ্রম কি বা মাছের অভয়াশ্রম কি?

মৎস্য অভয়াশ্রম কি বা মাছের অভয়াশ্রম কি

মৎস্য অভয়াশ্রম কি: মৎস্য অভয়াশ্রম হচ্ছে কোনো জলাশয় বা এর একটি নির্দিষ্ট অংশ যেমন- কোনো হাওর, বিল বা নদীর কোনো অংশ যেখানে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বা সারা বছর বা দীর্ঘমেয়াদের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। অনেক সময় উক্ত নির্দিষ্ট স্থানে মাছ আহরণ যেন না করা যায় এজন্য গাছের ডালপালা, বাঁশ ইত্যাদি স্থাপন করা হয়।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীনমুক্ত জলাশয়ে স্থাপিত ৪৩২ টি মৎস্য অভয়াশ্রম সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এসকল মৎস অভয়াশ্রমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।

মাছের অভয়াশ্রম কি: বিপন্ন ও বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রজাতির সংরক্ষণ অবাদ প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের উপাদান বৃদ্ধি এবং জলজ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের অভয় আশ্রম বলতে বোঝায় কোনো জলাশয় যেমন- হাওর, বাওড়, বিল বা নদীর কোনো একটি অংশ যেখানে বছরে নির্দিষ্ট সময়ে বা সারা বছর বা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।

আামাদের বাংলাদেশে মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে বিলুপ্ত প্রায় এবং বিপন্ন প্রজাতির মাছ যেমন মেনি, রানী, চিতল, ফলি, গুতুম, বামোস, কালি বাউস, টেংরা, আইড়, মধু পাবদা, রিটা, কাজলী, গজার, বাইম ইত্যাদির উৎপাদন এবং প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

নদী মাতৃক বাংলাদেশ জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এই দেশে রয়েছে অসংখ্য ছোট, বড় বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ জলাশয় (মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়) যার মোট আয়তন হচ্ছে প্রায় ৪৭ লক্ষ হেক্টর। আরও রয়েছে সুবিশাল সামুদ্রিক জলাশয় (বঙ্গোপসাগর) যার আয়তন হচ্ছে ১.৬৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।

পড়ুন
বাংলাদেশের কৃষিতে গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মৎস্য

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের শতকরা প্রায় ৮৮ ভাগই হচ্ছে মুক্ত জলাশয়। যেমন- নদী-নালা, খাল-বিল, সুন্দরবনের জলাভূমি, কাপ্তাই লেক, প্লাবন ভূমি। যার মোট আয়তন হচ্ছে ৪০.২৫ লক্ষ হেক্টর। অপরদিকে বদ্ধ জলাশয় রয়েছে মাত্র ১২ ভাগ যার মধ্যে রয়েছে পুকুর, দিঘি, ডোবা, হাওর ও চিংড়ি খামার। এদের মোট আয়তন হচ্ছে প্রায় ৮.৩৪ লক্ষ হেক্টর।

আমাদের এই বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মাছ উৎপাদনের শতকরা ৮০ ভাগ আসে অভ্যন্তরীণ জলাশয় হতে এবং বাকী ২০ ভাগ আসে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হতে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়সমূহে অতীতে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। ষাটের দশকে এর পরিমান ছিল মোট মৎস্য উৎপাদনের ৮০%। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত পানি ব্যবহার, কৃষিকাজে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, শিল্পায়নের ফলে পানি দূষণ, নির্বিচারে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় হতে এ উৎপাদন বর্তমানে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫% এ। বাকি উৎপাদনের ৪৭% আসে বিভিন্নবাদ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ থেকে এবং ১৮% আসে সামুদ্রিক মৎস্য হতে।

বাংলাদেশে মোট ২৬০ প্রজাতির স্বাদুপানির মাছের মধ্যে ১২টি চরম বিপণ্ণ, ২৮টি বিপণ্ণ ও ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

যে প্রজাতি প্রাকৃতিক জলাশয় হতে অচিরেই বিলুপ্ত হবার ঝুঁকি মোকাবেলা করছে তাকে চরম বিপন্ন প্রজাতি বলে। (যেমন- সরপুঁটি, মহাশোল, বাঘাআইড়)।

যে সকল প্রজাতি অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হবার ঝুঁকি মোকাবেলা করছে তাকে বিপন্ন প্রজাতি বলে।

যে সকল প্রজাতি বিপন্ন না হলেও মধ্যমেয়াদি ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি বলে।

(২) মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের গুরুত্ব

নিচে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-

১। মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে মাছের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করা যায়।

পড়ুন
বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা

২। মাছের নিরাপদ আশ্রয় তৈরির মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রায় বা মাছের বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণ করা যায়।

৩। অভয়াশ্রমের মাধ্যমে মাছের বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য নিশ্চিত করা যায়।

৪। মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে মাছের অবাধ প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণ করা যায়। 

৫। জলজ পরিবেশে মাছের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ করা যায়।

৬। মৎস্য অভয়াশ্রম প্রজননক্ষম মাছকে রক্ষার মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি ও মজুদ বৃদ্ধি করা যায়।

(৩) মৎস্য সংরক্ষণ আইনের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের একটি নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে মৎস্য খাতটি আবহমান কাল হতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু প্রাকৃতিক এবং মানুষ দ্বারা সৃষ্ট কতিপয় কারণ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের প্রধান অন্তরায়। ফলে মৎস্য সম্পদের উন্নয়ণ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তাই মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব, ভবিষ্যৎ চাহিদা, প্রাপ্যতা এবং যথাযথ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের বিষয়কে বিবেচনা করে মৎস্য বিষয়ক কতিপয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

জলাশয় থেকে অধিক মাত্রায় মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। জলাশয় থেকে অধিক মাত্রায় মৎস্য আহরণ এবং অপরিকল্পিতভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মাণের ফলে মাছের অবাধ বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ, ডিম পোনা, ধানী পোনা, রেণু পোনা নিধন, কারেন্ট জালের ব্যবহার, কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বর্তমানে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

সুতরাং মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা প্রাপ্যতা এবং যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য মৎস্য সংরক্ষণ আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(৪) বাংলাদেশের মৎস্য সংরক্ষণ আইন

বাংলাদেশের মৎস্য সংরক্ষণ আইন

বাংলাদেশের জলসম্পদ ও প্রাণিবৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দেশব্যাপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-দিঘি, ডোবা-নালা, হাওড়-বাওড় ও প্লাবন ভূমি। এ ছাড়াও রয়েছে বঙ্গোপসাগরের সুবিশাল জলরাশি। মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব, চাহিদা, প্রাপ্যতা এবং যথাযথ উন্নয়নের জন্য মৎস্য সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

পড়ুন
মৎস্য বা মাছ কী/কাকে বলে? মৎস্য ও মাছের মধ্যে পার্থ্যক্য কী? মৎস্য চাষ বিদ্যা কাকে বলে? একোয়াকালচার কী/কাকে বলে? এবং মাছ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ (দি প্রটেকশন এন্ড কনজারভেশন অব ফিশ এ্যাক্ট-১৯৫০) যা সাধারণভাবে মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ নামে পরিচিত। নির্বিচারে পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছ নিধন মৎস্য সম্পদের বৃদ্ধিতে প্রধান অন্তরায়।

মৎস্য সংরক্ষণ আইন কত সালে প্রণয়ন করা হয়: সরকার মাছের আকার, প্রজনন ও বৃদ্ধির সময়, বিচরণক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে কতিপয় বিধিনিষেধ আরোপ করে ১৯৫০ সালে মৎস্য সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করে। পরবর্তীতে বাস্তব প্রয়োজন বিভিন্ন সময়ে আইনটি সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়। 

এ মৎস্য সংরক্ষণ আইনের উল্লেখযোগ্য বিধিসমূহ নিম্নরূপ-

১। এ আইনে মাছ বলতে সকল কার্টিলেজিনাস, জেলি ফিশ, প্রণ, শ্রিম্প, এমফিরিয়ানস, টরটয়েজ, টারউলস, ক্রাস্টাসিয়ান, মোলাস্বস এ্যানিম্যালস এবং ইকাইনোডার্স এর জীবন চক্রের সকল ধাপকে বুঝাবে।

২। এ আইনে ফিশারি বলতে সকল প্রকার জলাশয়, প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম, মুক্ত বা আবদ্ধ, স্রোতশ্বী বা স্থির, আহরণ ইত্যাদি কর্মকান্ড জড়িত। তবে কৃত্রিম অ্যাকুরিয়াম উক্ত আইনের আওতাভূক্ত হবে না। 

৩। চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রতি বছর:

  • জুলাই হতে ডিসেম্বর (আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি হতে পৌষ মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ২৩ সে.মি. (৯ ইঞ্চি) এর ছোট আকারের কাতলা, রুই, মৃগেল, কালিবাউস, ঘনিয়া।
  • নভেম্বর হতে মে (কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হতে জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ২৩ সে.মি. (৯ ইঞ্চি) এর ছোট আকারের ইলিশ (যা জাটকা নামে পরিচিত)
  • নভেম্বর হতে এপ্রিল (কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হতে জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ৩০ সে.মি. (১২ ইঞ্চি) এর ছোট আকারের সিলন, বোয়াল ও আইর মাছ ধরা নিজের দখলে রাখা, পরিবহন বা বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।

৪। চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত সাধারণভাবে নদী-নালা, খাল-বিলে সুযোগ আছে এরূপ জলাশয়ে প্রতিবছর ১লা এপ্রিল থেকে ৩১ শে আগস্ট (চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকি মাছের পোনার ঝাক বা দম্পতি মাছ ধ্বংস বা ধরা এবং ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।

পড়ুন
মৎস্য বা মাছ কী/কাকে বলে? মৎস্য ও মাছের মধ্যে পার্থ্যক্য কী? মৎস্য চাষ বিদ্যা কাকে বলে? একোয়াকালচার কী/কাকে বলে? এবং মাছ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

৫। নদী-নালা, খাল-বিলে স্থায়ী স্থাপনার মাধ্যমে (ফিক্সড ইঞ্জিন) মৎস্য আহরন করা যাবে না; এরূপ ক্ষেত্রে স্থায়ী স্থাপন সীজ, অপসারণ বা বাজেয়াপ্ত করা যাবে।

৬। জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা নর্দমার উদ্দেশ্য ব্যতিত নদী-নালা, খাল এবং বিলে অস্থায়ী বা স্থায়ী বাঁধ বা কোনোরুপ অবকাঠামো গ্রহণ করা যাবে না।

৭। অভ্যন্তরীণ জলাভূমিতে বিষ প্রয়োগ, দূষণ, বাণিজ্যিক বর্জ্য বা অন্য কোনো উপায়ে মাছ ধ্বংসের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে মাছ মারা যাবে না।

৮। মাছ ধরার ক্ষেত্রে ৪.৫ সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যরে ফাঁস বিশিষ্ট ফাঁসজাল এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

৯। অভ্যন্তরীণ বা উপকূলীয় জলাভূমিতে বন্ধুক বা তীর ধনুক ব্যবহার করে মৎস্য আহরণ বা আহরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।

১০। ইলিশ অভয়াশ্রম সংরক্ষণ: সরকার ঘোষিত ৪টি ইলিশ অভয়াশ্রম এলাকায় প্রতি বছর মার্চ হতে এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার চর আলোক জেন্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার ভোলা জেলার ভেদুরিয়া হতে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তুম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলা জেলার মদনপুর। চর ইলিশা হতে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এবং প্রতি বছর নভেম্বর হতে জানুয়ারি পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো মাছ ধরতে বা ধরার কারণ সৃষ্টি করতে পারবে না।

১১। ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ: ইলিশ মাছের অবাধ প্রজননের সুযোগ দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার শাহেরখালী/হাইতকান্দি পয়েন্ট, ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দিন/পশ্চিম সৈয়দ আহলিয়া পয়েন্ট, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া গন্ডামারা পয়েন্ট এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালি পয়েন্ট সমূহের অর্ন্তগত প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রজনন ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১৫-২৪ অক্টোবর (১-১০ আশ্বিন) পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ।

পড়ুন
বাংলাদেশের কৃষিতে গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মৎস্য

১২। আইন ভঙ্গকারীদের জন্য শাস্তির বিধান:

  • প্রথম বার আইন ভঙ্গকারীর শাস্তি হবে কমপক্ষে ১ মাস হতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা জরিমানা।
  • পরবর্তিতে প্রতিবার আইন ভঙ্গের জন্য কমপেক্ষ ২ মাস হতে সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা জরিমানা।

১৩। উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ বা চিংড়ির পোনা আহরণ নিষিদ্ধ।

১৪। আইন ভঙ্গকারীকে ক্ষেত্র বিশেষে বিনা ওয়ারেন্টে এ্যারেস্ট করা যাবে।

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা মৎস্য অভয়াশ্রম কি বা মাছের অভয়াশ্রম কি, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের গুরুত্ব, মৎস্য সংরক্ষণ আইনের প্রয়োজনীয়তা, বাংলাদেশের মৎস্য সংরক্ষণ আইন প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

বাংলাদেশে জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এই দেশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয় যার মোট আয়তন প্রায় ৪৭ লক্ষ হেক্টর। আরও রয়েছে সুবিশাল বঙ্গোপসাগর যার আয়তন ১.৬৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।

কোনো জলাশয় যেমন-হাওড়, বাওড়, বিল বা নদীর কোনো একটি অংশ যেখানে বছরে নির্দিষ্ট সময়ে বা সারা বছর বা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করাকেই মাছের অভয়াশ্রম বলে।

মৎস্য সম্পদ রক্ষার কথা বিবেচনা করে ১৯৫০ সালে মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ প্রণয়ন করেছে সরকার। পরবর্তীতে বাস্তব প্রয়োজন বিভিন্ন সময়ে আইনটি সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়। এ আইন ভঙ্গকারীকে সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গলদা চিংড়ি চাষের পদ্ধতি

গলদা চিংড়ি চাষের পদ্ধতি

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের পদ্ধতি (২) ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষের পদ্ধতি
মাছ চাষে পানি, পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ এবং মাছ চাষে তার প্রভাব

মাছ চাষে পানি: পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ এবং মাছ চাষে তার প্রভাব

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) পানির ভৌত গুণাগুণ ও মাছ চাষে তার প্রভাব (২) পানির রাসায়নিক গুণাগুণ ও মাছ চাষে তার প্রভাব
সফলভাবে চিংড়ি মাছ চাষ করার জন্য, চিংড়ি মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা

সফলভাবে চিংড়ি মাছ চাষ করার জন্য, চিংড়ি মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) চিংড়ি মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব (২) চিংড়ি মাছের রোগের কারণ (৩) চিংড়ির মাছের রোগের সাধারণ লক্ষণ (৪) চিংড়ি মাছের রোগ ও উক্ত রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা/প্রতিকার (৫) চিংড়ি মাছের রোগ প্রতিরোধে করণীয়
মাছের রোগ কেন হয়? মাছের রোগ সৃষ্টিকারী নিয়ামক সমূহ ও তাদের আন্ত:ক্রিয়া এবং মাছের রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া

মাছের রোগ কেন হয়? মাছের রোগ সৃষ্টিকারী নিয়ামক সমূহ ও তাদের আন্ত:ক্রিয়া এবং মাছের রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) মাছের রোগ কেন হয়? মাছের সৃষ্টিকারী নিয়ামক সমূহ (২) মাছের রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর আন্ত:ক্রিয়া (৩) মাছের রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া
পাবদা মাছের চাষ পদ্ধতি

পাবদা মাছের চাষ পদ্ধতি

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে পাবদা মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- (১) পাবদা মাছের উপকারিতা (২) পাবদা মাছের ইংরেজি নাম, পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য (৩) পাবদা মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস (৪) পাবদা চাষের পুকুর প্রস্তুতি (৫) পুকুরে চুন প্রয়োগ (৬) পাবদা চাষে সার প্রয়োগ (৭) পাবদা মাছের পোনা মজুদ (৮) সুস্থ-সবল পাবদা পোনার বৈশিষ্ট্য (৯) পোনা মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা (১০) পোনা পরিবহণ (১১) পাবদা মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনা (১২) অন্যান্য ব্যাবস্থাপনা (১৩) নমুনাকরণ (১৪) অন্যান্য পরিচর্যা (১৫) মাছের বর্ধন (১৬) আহরণ ও বাজারজাতকরণ (১৭) সতর্কতা
ধান ক্ষেতে মাছ চাষ

ধান ক্ষেতে মাছ চাষ

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) ধান ক্ষেতে মাছ চাষের সুবিধা (২) ধান ক্ষেতে চাষ পদ্ধতি (৩) মাছ চাষের জন্য জমি নির্বাচন (৪) ধান ক্ষেত প্রস্তুতকরণ (৫) ধানের জাত নির্বাচন (৬) ধান ক্ষেতে মাছ আহরণ (৭) পরামর্শ
বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ (২) মৎস্য খাতের সাফল্য ও উন্নয়ন সম্ভাবনা (৩) মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সমস্যা ও উন্নয়ন কৌশল (৪) উন্নয়ন কৌশল
ফরমালিন কি, ফরমালিন মাছ চেনার উপায়, ফরমালিন দেওয়ার মাছ চেনার উপায় কী, ফরমালিন যুক্ত মাছ

ফরমালিন কি? ফরমালিন মাছ চেনার উপায়: ফরমালিন দেওয়ার মাছ চেনার উপায় কী? ফরমালিন যুক্ত মাছ চেনার উপায় এবং ফরমালিন মুক্ত মাছ চেনার উপায়

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) ফরমালিন কি? ফরমালিন কাকে বলে? (২) ফরমালিন মুক্ত মাছ চেনার উপায় (৩) ফরমালিন মাছ চেনার উপায়, ফরমালিন দেওয়ার মাছ চেনার উপায় কী? ফরমালিন যুক্ত মাছ চেনার উপায়
পোনা পরিবহণ পদ্ধতি মাছের পোনা পরিবহন ও মাছ বাজারজাতকরণ বা বিপণন ব্যবস্থা

পোনা পরিবহণ পদ্ধতি: মাছের পোনা পরিবহন ও মাছ বাজারজাতকরণ বা বিপণন ব্যবস্থা

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) মাছের পোনা পরিবহন কি ও কেন? (২) মাছের পোনা টেকসই বা কন্ডিশনিং পদ্ধতি (৩) সনাতন/প্রাচীন পোনা পরিবহণ পদ্ধতি (৪) আধুনিক পোনা পরিবহণ পদ্ধতি (৫) মাছ বাজারজাতকরণ বা বিপণন পদ্ধতি
মাছের রোগ ও তার প্রতিকার pdf, মাছের রোগের নাম তালিকা ও মাছের রোগ প্রতিরোধের উপায়

মাছের রোগ ও তার প্রতিকার pdf, মাছের রোগের নাম তালিকা ও মাছের রোগ প্রতিরোধের উপায়

● মৎস্য
আলোচ্য বিষয়: (১) সুস্থ মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ (২) রোগাক্রান্ত মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ (৩) মাছের রোগের শ্রেণিবিভাগ (৪) ব্যাকটেরিয়াজনিত মাছের রোগ ও প্রতিকার (৫) ছত্রাকজনিত মাছের রোগের ও প্রতিকার (৬) ভাইরাসজনিত মাছের রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার (৭) পরজীবীঘটিত মাছের রোগের ও তার প্রতিকার (৮) অপুষ্টিজনিত মাছের রোগের ও তার প্রতিকার (৯) মাছের রোগ প্রতিরোধের উপায় (১০) বাহ্যিক লক্ষণ দেখে সুস্থ রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরণ