রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি ভালোবাসা সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি ভালোবাসা সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

নিম্নে রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি ভালোবাসা সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

অনুবাদ

হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি [মুহাম্মদ (স)] তার-নিকট তার পিতা, সন্তানাদি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় না হব।”

(বুখারি ও মুসলিম)

ব্যাখ্যা

একজন মানুষকে প্রকৃত মুমিন-মুসলিম হতে হলে রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি কী পরিমাণ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, আনুগত্য ও ত্যাগের মনোভাব পোষণ করতে হবে তা এ হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স)-কে নিজের ও অন্যান্য আপনজনের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে। মনে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তিনি এই আনুগত্য ও ভালোবাসা পাওয়ার একমাত্র হকদার। 

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এ মর্মে ঘোষণা করেছেন,

“নবী মুমিনদের নিকট নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর”

(সূরা আহযাব, আয়াত নং ৬)

রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রকৃত উদাহরণ সাহাবায়ে কিরাম তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে রেখে গেছেন। রাসূলুল্লাহ (স)-এর আহ্বানে তাঁরা নিজেদের সমস্ত ধন-সম্পদ ব্যয় করেছেন, তাঁকে রক্ষা করার জন্য লড়াইয়ের ময়দানে জীবন দিয়েছেন। আনুগত্য করতে গিয়ে জীবনের আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়েছেন। স্ত্রী-পুত্র-পরিজন ত্যাগ করে রাসূলের (স) সঙ্গী হয়েছেন। নিজেদের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে হিজরত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (স)-কে তাঁর চাচা আবু তালিবও ভালোবাসতেন। কিন্তু তাঁর এ ভালোবাসা ভাতিজা হিসেবে ছিল, রাসূলুল্লাহ হিসেবে ছিল না।

রাসূলুল্লাহ (স)-কে অধিক ভালোবাসার অর্থ পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনকে ঘৃনা করা কিংবা উপেক্ষা করা নয় ; বরং এর অর্থ হল প্রয়োজনের সময় এদের আকর্ষণ পরিত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ (স)-এর আহ্বানে সাড়া দেওয়া। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, যখন কোন লোক অসুস্থ ছেলেমেয়েকে বাসায় রেখে চাকরি ক্ষেত্রে, ব্যবসায় ক্ষেত্রে ও অন্যান্য জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য চলে যায়; তখন এ কথা বলা হয় না যে, ছেলেমেয়ের জন্য তার অন্তরে দরদ নেই। এর দ্বারা ক্ষুদ্রতম স্বার্থকে বৃহত্তম স্বার্থের জন্য ত্যাগ করা বুঝায়।

পড়ুন
হারাম খাদ্যের পরিণাম সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

শিক্ষা

আমাদেরকে এ হাদিস থেকে এ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে যে-

১. আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (স)-কে সকলের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে।

২. রাসূলুল্লাহ (স)-এর আদর্শকে মুক্তির একমাত্র পথ বলে গ্রহণ করতে হবে।

৩. রাসূলুল্লাহ (স)-কেই একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতে হবে।

৪. রাসূলুল্লাহ (স)-এর আদর্শ নিজ জীবন ও সমাজে চালু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা-সংগ্রাম চালাতে হবে।

৫. তাঁকে পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী-পরিজন এক কথায় সবার চেয়ে রাসূলুল্লাহ (স)-কে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে।

৬. রাসূলুল্লাহ (স)-এর ভালোবাসাকে সমুন্নত রাখার নিমিত্তে সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বদা ও প্রস্তুত থাকতে হবে।

এসবই এ হাদিসের মূল শিক্ষা।

সারসংক্ষেপ

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি ভালোবাসা সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলাম।

রাসূলুল্লাহ (স)-কে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে- ১. তাঁর আদর্শ গ্রহণ, ২. পালন, ৩. রক্ষা করা, ৪. এর জন্য জীবন উৎসর্গ করা, ৫. তাঁর আনীত শরীআতকে ধ্বংসের কবল হতে রক্ষা করা, নবি (স) এর সন্তুষ্টির উদ্দেশে নিজের ধন-সম্পদ এবং জীবন উৎসর্গ করা। পিতামাতা, সন্তানাদি ও অপরাপর মানুষের ওপর রাসূলুল্লাহ (স)-এর মর্যাদা অনুভব করতে না পারলে ইমানের পূর্ণতা ও পরিপক্কতা অর্জিত হয় না।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মোজা মাসেহ করার নিয়ম

মোজা মাসেহ করার নিয়ম

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) মোজায় মাসেহের শর্তসমূহ (২) কোন ধরনের মোজায় মাসেহ করা জায়েয? (৩) মোজায় কত দিন মাসেহ করা জায়েয? (৪) মোজায় মাসেহের নিয়ম/পদ্ধতি (৫) যেসব কারণে মোজায় মাসেহ ভঙ্গ হয়ে যায়? (৬) মোজার ওপর মাসেহ কখন বাতিল হবে? (৭) মোজার মাসেহ সংক্রান্ত আরও কিছু মাসয়ালা মাসায়েল
আল আসমাউল হুসনা কাকে বলে, অর্থ কী, বলতে কী বুঝায়

আল-আসমাউল হুসনা কাকে বলে, অর্থ কী, বলতে কী বুঝায়?

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) আল-আসমাউল হুসনা এর পরিচয় (২) আল-আসমাউল হুসনা এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য (৩) কয়েকটি আল-আসমাউল হুসনা এর অর্থ ও ব্যাখ্যা
মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
শালীনতা অর্থ, মানে কী, কাকে বলে শালীনতার গুরুত্বসমূহ

শালীনতা অর্থ, মানে কী, কাকে বলে? শালীনতার গুরুত্ব

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) শালীনতা অর্থ কী? (২) শালীনতা কাকে বলে? (৩) শালনিতা মানে কী? (৪) শালীনতার গুরুত্ব
কুরবানি ও আকিকা কি, কেন, কিভাবে নিয়মনীতি

কুরবানি ও আকিকা কি, কেন, কিভাবে?

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) কুরবানি অর্থ কি? (২) কুরবানি কাকে বলে? (৩) কুরবানী আমাদের কি শিক্ষা দেয়? (৪) কুরবানির ইতিহাস (৫) কুরবানির নিয়মাবলি ও বিধিবিধান (৬) আকিকি শব্দের অর্থ কি? (৭) আকিকি কি/কাকে বলে? (৮) আকিকা করা কি ফরজ/বাধ্যতামূলক? (৯) আকিকা দেওয়ার নিয়ম
তাজবিদ কাকে বলে, তাজবিদ শব্দের অর্থ কি

তাজবিদ কাকে বলে? তাজবিদ শব্দের অর্থ কি?

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) তাজবিদের পরিচয় ক) তাজবিদ শব্দের অর্থ কি? খ) তাজবিদ কাকে বলে? গ) মাখরাজ কাকে বলে? ঘ) সিফাত কাকে বলে? (২) তাজবিদের গুরুত্ব
ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কী এর প্রয়োজনীয়তা এবং উক্ত বিষয়ে ইসলাম কী বলে

ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কী? এর প্রয়োজনীয়তা ও উক্ত বিষয়ে ইসলাম কী বলে?

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ভ্রাতৃত্ববোধ কী? (২) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কী? (৩) ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এর প্রয়োজনীয়তা (৪) ইসলাম ধর্মে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
রোজা সম্পর্কে আলোচনা (a to z)

রোজা সম্পর্কে আলোচনা (a to z)

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: বিস্তারিতভাবে রোজা সম্পর্কে আলোচনা: কি, কাকে বলে, কখন, কেন, কত প্রকার, কারণ, কয়টি, কি কি, করণীয়, সেহরি, ইফতার, কাযা, কাফফারা, ফজিলত, গুরুত্ব ও ভূমিকা। (১) রোজা কাকে বলে? রোজা মানে কি? (২) রোজা কখন ফরজ হয়? (৩) কাদের জন্য রোযা রাখা ফরজ বা বাধ্যতামূলক নয়? (৪) রোজা কেন ফরজ করা হয়েছে? (৫) রোজা/সাওম কত প্রকার? (৬) রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি? (৭) রোজা পালনে সাহরি গ্রহণ (৮) রোজা পালনে ইফতার গ্রহণ (৯) রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ/রোজা হালকা হওয়ার কারণ (১০) রোজা ভাঙার কারণ/রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ/রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি? (১১) রোজা ভঙ্গ হলে করনীয় (১৩) রোজার ফযিলত (১৪) মানবতার গুণাবলি বিকাশে রোজার গুরুত্ব ও ভূমিকা
সূরা বাকারার ৬ ও ৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ৬ ও ৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ৬ ও ৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ

শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

● ইসলাম
নিম্নে শিক্ষকের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করা হলো-