শাফাআত কাকে বলে?

শাফাআত কাকে বলে

(১) শাফাআত

শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ করা, অনুরোধ করা ইত্যাদি।

ইসলামি পরিভাষায়, কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুলগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে।

কিয়ামতের দিন শাফাআত সাধারণত দুটি কারণে করা হবে। যথা-

  • পাপীদের ক্ষমা ও পাপ মার্জনার জন্য।
  • পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও কল্যাণ লাভের জন্য।

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের সব কাজকর্মের হিসাব নেবেন। তারপর আমল অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ করবেন। এ সময় পুণ্যবানগণ জান্নাত লাভ ও পাপীরা জাহান্নাম ভোগ করবে। নবি-রাসুল ও পুণ্যবান বান্দাগণ এ সময় আল্লাহর অনুমতিক্রমে আল্লাহর দরবারে শাফাআত করবেন। ফলে অনেক পাপীকে মাফ করা হবে। এরপর তাদেরকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

আবার অনেক পুণ্যবানের জন্যও এদিন শাফাআত করা হবে। ফলে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।

শাফাআত সাধারণত দুই প্রকার। যথা-

  1. শাফাআতে কুবরা
  2. শাফাআতে সুগরা

(২) শাফাআতে কুবরা

কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে এক বিশাল ময়দানে সমবেত করা হবে। সেদিন সূর্য খুব নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত থাকবে।

এ সময় তারা হযরত আদম (আঃ), হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহিম (আঃ), হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য আল্লাহর নিকট শাফাআত করতে অনুরোধ করবে। তাঁরা সকলেই অপারগতা প্রকাশ করবেন।

এ সময় সকল মানুষ মহানবি (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হবে। তখন মহানবিও (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন।

অতঃপর আল্লাহ তায়ালা হিসাব-নিকাশ শুরু করবেন।

এ শাফাআতকে বলা হয় শাফাআতে কুবরা। একে শাফাআতে উযমাও (সর্বশ্রেষ্ঠ শাফাআত) বলা হয়।

এরূপ শাফাআতের অনুমতি বা অধিকার একমাত্র মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর থাকবে।

এ ছাড়া নবি করিম (সাঃ) জান্নাতিগণকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তার সুপারিশ কবুল করবেন, এর পর জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।

(৩) শাফাআতে সুগরা

কিয়ামতের দিন পাপীদের ক্ষমা ও পুণ্যবানদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফাআত করা হবে। এটাই হলো শাফাআতে সুগরা।

নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলিম, হাফিজ এ শাফাআতের সুযোগ পাবেন।

আল কুরআন ও সিয়াম (রোযা) কিয়ামতের দিন শাফাআত করবে বলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিম্নোক্ত বিষয়ে শাফাআতে সুগরা করা হবে-

  • যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হবে তাদের মাফ করে জান্নাতে দেয়ার জন্য শাফাআত।
  • যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য শাফাআত।
  • জান্নাতিগণের মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য শাফাআত।

আমরা শাফাআতে বিশ্বাস স্থাপন করব। আল্লাহকে ভালোবাসব, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদর্শ অনুযায়ী চলব। ফলে পরকালে প্রিয়নবি (সাঃ)-এর শাফায়াত লাভ করে জান্নাতে যাব।

কিয়ামতের দিন নবি-রাসুল ও নেক বান্দাগণ আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তায়ালা এসব শাফাআত কবুল করবেন এবং বহু মানুষকে জান্নাত দান করবেন। তবে শাফাআতের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকবে আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ)-এর অধিকারে।

তিনি নিজেই বলেছেন,

“আমাকে শাফাআত (করার অধিকার) দেওয়া হয়েছে।”

(সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

শাফাআত একটি বিরাট নিয়ামত। আল্লার দয়া ও মহানবি (সাঃ)-এর শাফাআত ব্যতীত কিয়ামতের দিন সফলতা, কল্যাণ ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে না।

সুতরাং আমরা প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শাফাআতে বিশ্বাস করব। তাঁকে ভালোবাসব ও পূর্ণরূপে অনুসরণ করব। তাহলে আমরা তাঁর শাফাআত লাভে সক্ষম হব।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কাযা নামাজের বিধান ও মাসায়েলঃ উমরী কাযা ও নামাজের ফজিলত এবং ফিদা কাযার বিস্তারিত

কাযা নামাজের বিধান ও মাসায়েলঃ উমরী কাযা এবং ফিদা কাযার বিস্তারিত

○ ইসলাম
(১) কাযা নামাজের বিধান ও মাসায়েল ◆ কারও কোন ফরয নামাজ ছুটে গেলে স্মরণ আসা মাত্রই কাযা পড়া ওয়াজিব-বিনা ওজরে কাযা করতে বিলম্ব করা পাপ। ◆ কাযা নামাজ পড়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই; হারাম ও মাকরূহ ওয়াক্ত ছাড়া যে কোন সময় পড়া যায়। ◆ কারও যদি এক, দুই, তিন, চার বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয় এবং এর পূর্বে তার কোন কাযা নেই, তাহল তাকে ‘ছাহেবে তারতীব’ বলে। তাকে দুই ধরনের তারতীব রক্ষা করতে হবে- ১। ওয়াক্তিয়া নামাজের পূর্বে এই কাযাগুলো পড়ে নিতে হবে, অন্যথায় ওয়াক্তিয়া নামাজ শুদ্ধ হবে না। ২। এই কাযা নামাজগুলোও ধারাবাহিকভাবে (আগেরটা আগে এবং পরেরটা পরে) পড়তে হবে। ছাহেবে তারতীবের জন্য এই ধরনের তারতীব রক্ষা করা ফরয। যদি কারও যিম্মায় ছয় বা আরও বেশী ওয়াক্তের Read
ইস্তেখারার দোয়া, istikhara dua in bangla (নামাজ ও দোয়া পড়ার নিয়ম সহ)

ইস্তেখারার দোয়া, নামাজ ও দোয়া পড়ার নিয়ম সহ (istikhara dua in bangla)

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ইস্তেখারার দোয়া কি? উদ্দেশ্য, কখন, কেন, কিভাবে করতে হয়? (২) ইস্তেখারার দোয়া সম্পূর্ণটা আরবি (৩) ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ (৪) ইস্তেখারার দোয়া বাংলা অর্থ (৫) ইস্তেখারার নামাজ ও দোয়া পড়ার নিয়ম (৬) ইস্তিখারার দোয়ার বিষয়ে কিছু কথা (৭) ইস্তিখারা দোয়া কখন করা যাবে না? Read
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো- Read
ঈদ কাকে বলে

ঈদ কাকে বলে?

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ঈদ কাকে বলে? (২) ঈদ কত ধরণের? (৩) ঈদের তাৎপর্য Read
মাখরাজ ১৭ টি কি কি (makhraj bangla)

মাখরাজ ১৭ টি কি কি (makhraj bangla)

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) আরবি মাখরাজ ক) মাখরাজ কি? খ) আরবি হরফের মাখরাজ কয়টি? (২) ২৯টি আরবি হরফ বাংলা উচ্চারণ সহ (৩) আরবি হরফের মাখরাজ ১৭ টি কি কি? makhraj bangla Read
informationbangla.com default featured image compressed

নামায পড়ার নিয়মঃ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) নামায পড়ার নিয়ম ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা (২) মুক্তাদী-র জন্য মাসআলা মাসায়েল (৩) জামাতের নামাজ সম্পূর্ণ না পাওয়া বা নামাজ ছুটে গলে তার মাসআলা মাসায়েল (৪) ইমামের জন্য মাসআলা মাসায়েল (৫) নামাযে মনোযোগ সৃষ্টির জন্য যা যা করণীয় Read
সূরা যিলযাল

সূরা যিলযাল

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সূরা যিলযাল এর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ (with 100% HD Picture + text copy + Audio mp3 + Video mp4 download option) সহ উক্ত সূরা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে- (১) সূরা যিলযাল এর পরিচিতি (২) সূরা যিলযাল এর বাংলা অর্থ (৩) সূরা যিলযাল এর বাংলা উচ্চারণ (৪) সূরা যিলযাল এর ব্যাখ্যা (৫) সূরা যিলযাল এর শিক্ষা (৬) সূরা যিলযাল এর শানে নুযুল (৭) সূরা যিলযাল এর তাফসির Read
তায়াম্মুম করার নিয়ম, তাইয়াম্মুমের মাসআলা মাসায়েল

তায়াম্মুমের নিয়ম, তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি?

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) তায়াম্মুম কাকে বলে? (২) তায়াম্মুমের ফরয কয়টি? (৩) তায়াম্মুমের সুন্নাত কয়টি? (৪) তায়াম্মুমের নিয়ম (৫) তায়াম্মুমের নিয়ত (৬) ধাপে ধাপে তায়াম্মুমের নিয়ম বর্ণনা (৭) কি কি বস্তু দ্বারা তাইয়াম্মুম করা জায়েয? তায়াম্মুমের উপকরণ (৮) কোন অপবিত্রতায় তায়াম্মুম করা যায়? (৯) কখন তাইয়াম্মুম করতে হবে? কখন তায়াম্মুম করা যাবে না? (১০) তাইয়াম্মুম ভঙ্গের কারণ (১১) তায়াম্মুমের আয়াত (১২) তায়াম্মুম প্রবর্তনের কারণ ও ইতিহাস (১৩) তায়াম্মুম এর কিছু মাসআলা মাসায়েল Read
গোসলের ফরজ কয়টি, গোসল ফরজ হওয়ার কারণ ও গোসলের দোয়া

গোসলের ফরজ কয়টি? গোসল ফরজ হওয়ার কারণ ও গোসলের দোয়া

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) গোসলের ফরজ কয়টি? (২) গোসলের সুন্নত কতটি? (৩) গোসলের মুস্তাহাব কি কি? (৪) গোসলের ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদবসমূহ (৫) গোসলের ফরয সমূহের বর্ণনা (৬) গোসলের সুন্নত সমূহের বর্ণনা (৭) কি কি কারণে গোসল ফরয হয়? (৮) যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না, সেগুলো কি? (৯) গোসল কখন সুন্নত হয়? (১০) ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম কি? Read
surah falaq bangla, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণসহ অর্থ

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণসহ অর্থ (surah falaq bangla)

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) সূরা ফালাক বাংলা (২) সূরা ফালাক আরবি (৩) সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ (৪) সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ছবি (৫) surah falaq uccharon audio mp3 (৬) surah falaq bangla uccharon video mp4 (৭) সূরা ফালাক এর ফজিলত (৮) সূরা ফালাক এর শানে নুযুল (৯) সূরা ফালাক এর তাফসীর/ব্যাখ্যা (১০) সূরা ফালাক এর শিক্ষা Read