সত্যবাদিতা কী, কাকে বলে, বলতে কী বুঝায়? গুরুত্ব, প্রভাব ও পরিণতি

সত্যবাদিতা কী, কাকে বলে, বলতে কী বুঝায় গুরুত্ব, প্রভাব ও পরিণতি

(১) সত্যবাদিতা কী, কাকে বলে, বলতে কী বুঝায়?

সত্যবাদিতার আরবি প্রতিশব্দ আস-সিক। সাধারণভাবে সত্য কথা বলার অভ্যাসকে সত্যবাদিতা বলা হয়।

অন্যকথায়, বাস্তব ও প্রকৃত ঘটনা বা বিষয় প্রকাশ করাকে সিদ্‌ক বলা হয়। অর্থাৎ কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিকৃতি ব্যতিরেকে হুবহু বা অবিকল বর্ণনা করাই হলো সিদ্‌ক বা সত্যবাদিতা।

যে ব্যক্তি সত্যবাদী তাকে বলা হয় সাদিক। আর মহাসত্যবাদীকে সিদ্দিক বলে।

সত্যবাদিতার বিপরীত হলো মিথ্যাচার। কোনো ঘটনা বা বিষয়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হলো মিথ্যাচার। মিথ্যাচারকে আরবিতে আল কাযিব বলে। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে তাকে বলা হয় কাযিব আর চরম মিথ্যাবাদী হলো কায্যাব। 

(২) সত্যবাদিতার গুরুত্ব

সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। মানবজীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম ও আচার-আচরণে সত্যবাদিতা ও সততা অবলম্বন করলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে। সদা সর্বদা সত্য, সুন্দর ও সঠিক কথা বলা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ।

তিনি বলেন,

“হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সঠিক কথা বলো।”

(সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৭০)

মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিনগণের একটি অন্যতম নিদর্শন হলো তাঁরা সত্যবাদী। জীবনের সর্বাবস্থায় তাঁরা সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করেন। শুধু নিজে নিজে সত্য বলার চর্চা করলেই হবে না বরং সত্যবাদীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকতে হবে। এতে সমাজে সার্বিকভাবে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও সত্যবাদীদের সাথি হও।”

(সূরা আত-তওবা, আয়াত ১১৯)

প্রকৃত মুমিন অবশ্যই সত্যবাদী হবেন। আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) ছিলেন সত্যবাদিতার মূর্ত প্রতীক। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করেছেন। তাঁর সাথি হযরত আবু বকর (রা.) ও ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী। তাই হযরত আবু বকর (রা.)-কে বলা হয় সিদ্দিক।

পড়ুন
নিফাক শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে? নেফাক বলতে কী বুঝায়? নিফাকের কুফল ও প্রতিকার

যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে তাকে সবাই ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী তাকে কেউ ভালোবাসে না, সম্মান করে না। বরং সকলেই তাকে ঘৃণা করে। কেননা মিথ্যা বলা মহাপাপ। এটি সকল পাপের মূল। মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ তায়ালা চরম অসন্তুষ্ট।

(৩) সত্যবাদিতার প্রভাব ও পরিণতি

মানবজীবনে সত্যবাদিতার প্রভাব সীমাহীন। সত্যবাদিতা মানুষকে নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। পাপ ও অশালীন কাজ থেকে রক্ষা করে। সত্যবাদী ব্যক্তি কোনোরূপ অন্যায় ও অত্যাচার করতে পারে না। একটি হাদিসে আমরা এর প্রমাণ পাই।

একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একদা জনৈক ব্যক্তি মহানবি (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল, ‘আমি চুরি করি, মিথ্যা বলি এবং আরও অনেক খারাপ কাজ করি। সবগুলো খারাপ কাজ একসঙ্গে ত্যাগ করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আপনি আমাকে যেকোনো একটি খারাপ কাজ ত্যাগ করতে নিৰ্দেশ দিন।’ মহানবি (সাঃ) বললেন, “তুমি মিথ্যা বলা ছেড়ে দাও।” লোকটি বলল, এ তো খুব সহজ কাজ। মহানবি (সাঃ)-এর কথামতো লোকটি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিল। পরে দেখা গেল যে, মিথ্যা বলা ত্যাগ করায় তার পক্ষে আর কোনো খারাপ কাজ করা সম্ভব হলো না। সে সবগুলো খারাপ কাজ ছেড়ে দিল। কেননা সে ভাবল, কেউ তাকে অপরাধের কথা জিজ্ঞেস করলে সে মিথ্যা বলতে পারবে না। বরং স্বীকার করতে হবে। এতে সে লজ্জিত হবে ও শাস্তি ভোগ করবে। এভাবে শুধু মিথ্যা ত্যাগ করায় লোকটি সকল খারাপ কাজ থেকে মুক্তি পেল। সত্যবাদিতা এভাবেই মানুষকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে সাহায্য করে।

সত্যবাদিতার পরিণতি হলো সফলতা ও মুক্তি।

যেমন বর্ণিত আছে,

“সত্যবাদিতা মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে।”

(আল-হাদিস)

সত্যবাদিতার ফলে মানুষ দুনিয়াতে সম্মানিত হয়, মর্যাদা লাভ করে। আর আখিরাতে সত্যবাদিতার প্রতিদান হলো জান্নাত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“এ তো সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদের তাদের সত্যবাদিতা বিশেষ উপকার দান করবে। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।”

(সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১১৯)

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“তোমরা সত্যবাদী হও। কেননা সত্য পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথে পরিচালিত করে।”

(বুখারি ও মুসলিম)

অন্য একটি হাদিসে আছে, 

একবার মহানবি (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কী আমল করলে জান্নাতবাসী হওয়া যায়? তিনি উত্তরে বললেন, “সত্য কথা বলা।”

(মুসনাদে আহমাদ)

সত্যবাদিতা নৈতিক গুণাবলির অন্যতম প্রধান গুণ। এটি মানুষকে প্রভূত কল্যাণ ও সফলতা দান করে। সুতরাং আমাদের সকলেরই সত্যবাদী ও সত্যাশ্রয়ী হওয়া একান্ত কর্তব্য।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

পড়ুন
নিফাকের (কপটতা) পরিচয় ও এর কুফল

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইলম শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার ইলমের গুরুত্ব

ইলম শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার? ইলমের গুরুত্ব

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ইলম শব্দের অর্থ কী? (২) ইলম কী, কাকে বলে? (৩) ইসলামে ইলমের গুরুত্ব (৪) ইলম কত প্রকার?
কাফের অর্থ কি, কাফের কাকে বলে, কাফের কারা, কাফের এর বৈশিষ্ট্যে সমূহ (সূরা বাকারা)

কাফের অর্থ কি? কাফের কাকে বলে? কাফের কারা? কাফের এর বৈশিষ্ট্যে সমূহ (সূরা বাকারা)

● ইসলাম
অোলোচ্য বিষয়: (১) কাফের অর্থ কি? কাফের কাকে বলে? কাফের কারা? (২) কাফের এর বৈশিষ্ট্যে সমূহ
আল্লাহর উপর ভরসা বৃদ্ধি ও দোয়া কবুলের ৫টি কার্যকর উপায় বা পদক্ষেপ

আল্লাহর উপর ভরসা বৃদ্ধি ও দোয়া কবুলের ৫টি কার্যকর উপায় বা পদক্ষেপ

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) কেন আল্লাহর উপর ভরসা গুরুত্বপূর্ণ? (২) দোয়া কবুলের ৫টি উপায়/পদক্ষেপ (৩) আল্লাহর উপর ভরসা দৃঢ় করার ৫টি উপায়/পদক্ষেপ (৪) কীভাবে এই পদক্ষেপগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবেন? (৫) দোয়া কবুল না হলে কী করবেন? (৬) উপসংহার
গিবত শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে গিবতের কুফল ও পরিণাম

গিবত শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে? গিবতের কুফল ও পরিণাম

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) গিবত শব্দের অর্থ কী? (২) গিবত কাকে বলে? (৩) গিবত কী? (৪) গিবতের কুফল ও পরিণাম
হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং আদর্শ জীবন গঠনে হাদিসের শিক্ষা

হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং আদর্শ জীবন গঠনে হাদিসের শিক্ষা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (২) আদর্শ জীবন গঠনে হাদিসের শিক্ষা
মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মুনাফিকের পরিচয় সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
ওযু করার নিয়ম

ওযু করার নিয়ম

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ওযু শব্দের অর্থ কি ও ওযু কাকে বলে? (২) ওযু করার নিয়ম (৩) ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ (৪) ওযুর ফরজ ৪টি (৫) ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি? (৬) ওযুর গুরুত্ব
হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার নিয়ম, মুসলমান হওয়ার কালেমা, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার

সহজ ৮ ধাপঃ হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার নিয়ম, মুসলমান হওয়ার কালেমা, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নিয়ম

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার নিয়ম, মুসলমান হওয়ার কালেমা, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নিয়ম।
শহীদ মিনার বা কোন স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি জ্বালানো সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

শহীদ মিনার বা কোন স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি জ্বালানো সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে শহীদ মিনার বা কোন স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি জ্বালানো সম্পর্কে ইসলামের বিধান সমপর্কে আলোচনা করা হলো-
ফজরের নামাজের সময় উঠতে দেরি হলে কী করবেন

ফজরের নামাজের সময় উঠতে দেরি হলে কী করবেন?

আলোচ্য বিষয়: (১) ঘুমের কারণে ফজরের নামাজ ছুটে গেলে কী করবেন? (২) ফ্রেশ হওয়ার গুরুত্ব এবং সীমাবদ্ধতা (৩) কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ (৪) নামাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা