সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে নাঃ সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার

সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে না, সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার

নিম্নে সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে না, সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার, এ সম্পর্কে একটি আলেচনা তুলে ধরা হলো-

সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার

সবসময় শুধু পড়াশোনা নিয়ে আপনার সন্তানকে চাপ সৃষ্টি করবেন না। এতে করে পড়াশোনার প্রতি একটা নিস্পৃহ ভাব আপনার অতি ভাল বা মেধাবী সন্তানের মধ্যেও জন্ম নিতে পারে।

এমন অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে আমি দেখেছি। শৈশবের শুরুতে বেশ ভাল রেজাল্ট তারা করে। কিন্তু পরবর্তী জীবনে বড়ো হবার সাথে সাথে তাদের পরীক্ষার ফল খারাপ হতে থাকে। এর প্রধান কারণ হিসেবে আমি অনুসন্ধান করে দেখেছি, তারা প্রত্যেকেই তাদের পরিবার কর্তৃক পড়াশোনার বিষয়ে প্রবল চাগের সম্মুবীন। সবসময় তারা পড়াটাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে সন্তানকে চাপ সৃষ্টি করে।

অনেক বাবা-মা সন্তানের আয়ত্তের বাইরের জিনিসকেও তারা শিক্ষার ভেতর টেনে আনতে চায়। তারা একইসাথে তাদের সন্তানদের সর্ব শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। এটা খুব খারাপ।

একটি শিশু একইসাথে নৃত্যশিখী, অংকনশিল্পী, অভিনেতা, ভাল ছাত্র, ভাল ক্রিকেটার, ভাল ফুটবলার বা ভাল গায়ক ইত্যাদি হতে পারে না।

তার মধ্যে হয়তো এমন ধরনের গুণ থাকতে পারে। তবে সেই গুণগুলোর মধ্যে কোনটার প্রভাব সবচেয়ে বেশি; সেদিকে দৃষ্টি দেয়া বাবা-মা সহ তার শিক্ষকেরও উচিত। 

আমার এক আত্মীয়ের ছেলে সুদীপের বয়স মাত্র তিন বছর। তখন তাকে আমি দেখেছি ছেলে সুদীপকে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় ভুগতে।

সুদীপ যখন তিন বছরের, তখন থেকেই তাকে নিয়ে কোচিং করাতে শুরু করেন তিনি। উদ্দেশ্য একটি ভাল স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করাতে হবে। গোড়ার দিকে এটা খুবই ভাল লক্ষণ বলে মনে হলো। কিন্তু বিষয়টা এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতে. এই শিশুটির ওপর চাপানো হলো আরও অনেক বোঝা।

তাকে ভর্তি করা হলো গানের স্কুলে, চিত্রাংকনের স্কুলে, অভিনয়ের স্কুলে, সাঁতার শেখার অডিটোরিয়ামে ইত্যাদি ইত্যাদি ৷ বলতে গেলে প্রায় সারাদিনই তাকে নিয়ে আমার উক্ত আত্মীয়ের ছোটাছুটির অন্ত ছিল না। এতে করে একদিকে তিনি নিজে যেমন ক্লান্ত হয়ে যেতেন– সেই সাথে তার সন্তানটিও ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়তো।

পড়ুন
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস

এরপর বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর থেকে রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত বাচ্চাটিকে নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকতেন কোচিং ক্লাশের পড়া সম্পূর্ণ করতে। এর ফল হয়েছিল মারাত্বক রকমের খারাপ। বাচ্চাটির ভেতর একধরনের বিষাদাচ্ছন্ন মনোভাব সবসময় জেগে থাকতো। তার হয়তো মনে হতে৷ এই পৃথিবী নিরানন্দ। কোন আনন্দ নেই এখানে।

পরবর্তীতে সুদীপের বয়স যখন ছয় বছর তখন পর্যন্ত তাকে কোন ভাল স্কুলে ক্লাশ ওয়ানে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। কারণ সেইসব স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হতে পারতো না।

উক্ত ঘটনা আমাদের সবার জন্যেই বেশ দুঃখের কারণ। পরবর্তীতে সুদীপকে আমি আমার নিজের কাছে নিয়ে আসি। পুরো একটি বৎসর আমি তাকে নিজের মতো করে পড়তে দিই। তার সব কোচিং বন্ধ করে দিয়ে নিজে নিজে তাকে পড়াতে থাকি আমার অবসরে।

তার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতে থাকি। তার সব বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিতে থাকি। আমার বাসায় একটা কম্পিউটার আছে। সেটাতে তাঁকে বসিয়ে দিয়ে কম্পিউটার গেম খেলার সুযোগ দিই। বিকেলে তাকে নিয়ে বাড়ির সামনের মাঠে নিয়ে গিয়ে পাড়ার তার বয়সী অন্যান্য ছেলেদের সাথে খেলতে দিই। একেবারে স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকি তার সাথে। এর ফল হয় অতীব সুন্দর। পরের বছর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় সে প্রথম স্থান অধিকার করে।

সূদীপ যখন ক্লাশ সিক্সের ছাত্র। এখন পর্যন্ত তার রোল নামার এক কিংবা দুই-এর নিচে নামেনি। ক্লাশে ভাল ছাত্র হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে সে সহজেই।

প্রকৃতির সকল প্রাণীই স্বাধীনভাবে খেলতে ভালবাসে। মানবশিশু থেকে শুরু করে সৃষ্টির যাবতীয় প্রাণী তাদের নিজ নিজ নিয়মে খেলে আনন্দ উপভোগ করে। মানবশিশুরা খেলার ভেতর দিয়ে নানারপ ভান করে অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করে। খেলা এবং তার ভেতর দিয়ে নানা কাজের ভান শিশুর সুখ ও স্বাস্থ্যের পথে একান্ত প্রয়োজনীয়। এরকম খেলার অন্য কোন উপকারিতার কথা চিন্তা না করলেও শুধু শিশুর স্বাভাবিক এবং সুস্থভাবে বুদ্ধির জন্যও এটা প্রয়োজন।

বিখ্যাত শিশু মনস্ততৃবিদ উইলিয়াম স্টার্ন তার বইতে খোলাখুলিভাবে লিখেছেন, “খেলার ভেতর দিয়ে একটি শিশু দুই প্রকারের শক্তি অর্জনের বাসনার প্রকাশ পায়। প্রথমতঃ কোন কাজ শিখার চেষ্টা, দ্বিতীয়তঃ ভান বা কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ।”

উপরের বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত পোষণ করি।

পড়ুন
সন্তান-এর চরিত্র ও অভ্যাস গঠনে মা বাবার ভূমিকা গ্রহণ এবং সহায়তা করা উচিত

একটি সুস্থ স্বাভাবিক শিশু খেলার ভেতর দিয়ে এমন ভান করতে ভালবাসে যাতে সে নিজের দৈহিক শক্তির পরিচয় দিতে পারে। সে দৈত্য, সিংহ কিংবা রেলগাড়ি হতে চায়। সে এমন প্রাণী সাজতে চায় বা এমন জিনিসের ভান করা পছন্দ করে যাতে অন্যের মনে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে।

আমি যখন আমার তিন বছর বয়সী ছেলেকে হারকিউলিসের গল্প বললাম, তখন সে হারকিউলিস হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। আমি তাকে বুঝালাম, ইচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে সে হারকিউলিসের মতো দক্ষ বীর হতে পারবে– যে দেশ ও জাতির জন্যে কল্যাণ বয়ে আনবে। আমার এই আশ্বস্ত বাক্যে তাকে অত্যন্ত সুখী হয়েছিল তা তার মুখ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

ভবিষ্যতে কৃতকার্য হওয়া যাবে এই আশা শিশুদের মধ্যে সঞ্চারিত করলে তার ফল পাওয়া যায় খুব দ্রত। এই আশ্বাসে তাদের ভেতর উদ্যমের সৃষ্টি হয়। শিশুদের কাজের কোন প্রেরণা বা খেলার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করলে শিশুরা উদ্যম অনুভব করে।

শিশুদের অনুকরণের অভ্যাস হতেই দেখা যায় বয়ষ্ক ব্যক্তিরা যা করে শিশুরাও তা করতে চায়।

শিশুদের কাজের প্রেরণা জোগাতে বড় ভাইবোনেরা খুব সাহায্য করতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য কি তা শিশুরা সহজে বুঝতে পারে এবং তাদের শক্তিও বয়ষ্ক লোকের দৈহিক শক্তির মত বেশি নয় বলে শিশুদের নাগালের সম্পূর্ণ বাইরে নয়। বয়ষ্ক লোকের সাথে তুলনায় শিশু নিজেকে যতখানি হীন মনে করে তার বড় ভাইবোনের সাথে তুলনা করে ততখানি ছোট মনে করে না।

শিশুদের মধ্যে স্বভাবতই হীনতাবোধ খুব বেশি। তার যদি স্বাস্থ্য ভাল হয় এবং উপযুক্তভাবে শিক্ষা পায় তবে এই হীনতাবোধ তাদেরকে চেষ্টায় প্রেরণা দেয়। তারা শক্তিমান হয়ে বয়ষ্কদের সমান হতে চায় কিন্ত তাদেরকে যদি দমন করে রাখা হয় তবে তাদের মনের স্বাভাবিক আনন্দ বা উচ্ছাস দূর হয়ে গিয়ে সেখানে বিরাজ করে নিরানন্দ মনোভাব। সে সহজেই বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখনও শিশুর মনের ওপর এই ধরনের প্রভাব ফেলবেন না। ক্রমাগত এই ধরনের প্রভাবে শিশু মানসিক বৈকল্যের শিকারও হয়ে পড়তে পারে।

পড়ুন
আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ?

খেলার শিক্ষামূল্য কি, শিশুর শিক্ষাদান ব্যাপরে খেলা কতখানি সাহায্য করে সে বিষয় আলোচনা করলে সকলেই স্বীকার করবেন যে, খেলার ভেতর দিয়ে শিশু নতুন প্রবণতা ও কৌশল আয়ত্ত করে তা উপকারী ও প্রশংসনীয়। কিন্তু আধুনিক কালের অনেকে ভাবনা বা কল্পনা অবলম্বনে শিশু যে খেলা করে তার শিক্ষামূল্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

বয়ষ্ক যুবক যখন মনের অথৈ কামনাগুলি তৃপ্তির জন্য রঙিন কল্পনাবিলাসে মগ্ন হয়, তখন এটাকে একপ্রকার মানসিক রোগ বলে অভিহিত করা যায়। মনের বাসনাকে কার্যে রূপান্তরিত করার পরিবর্তে স্বপ্নবিলাসী নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থেকে কল্পনায় বাসনার সার্থকতা আস্বাদ করতে চায়। এই প্রকার অলস কল্পনাবিলাস কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। সাধারণ মানুষের যে বিরূপ ভাব আছে তা কালক্রমে শিশুর কল্পনাবিলাসের উপরও গিয়ে পড়েছে। শিশুরা তাদের খেলার সরজ্জামগুলো রেলগাড়ি বা স্টিমার বা অন্য কোন কিছু বলে কল্পনা করে নেয়। আমাদের দেশের অনেক প্রাথমিক শিক্ষকরা তা পছন্দ করেন না। তারা এটাকে বলেন বিশৃঙ্খল কল্পনা। তাদের অভিমতকে আমি অস্বীকার করছি না। কেননা শিশুরা এভাবে প্রকৃতই কোন খেলায় মগ্ন হচ্ছে না। এমনকি শিশুদের নিজেদের কাছেও এটা পূর্ণাঙ্গ খেলা বলে মনে হয় না। এই ধরনের সরগ্রাম বা কল্পনা শিশুকে একপ্রকার আনন্দ দিলেও সেটা সুদৃঢ়ভাবে তাদের মনে গ্রোথিত হয়ে যায় না। বরং একটা শৃঙ্খলার সাথেই তারা এইসব কল্পনা করে। এইক্ষেত্রে এইসব কল্পনাকে বিশৃঙ্খল চিন্তা করে তার বিরুদ্ধে বাধা প্রয়োগ করা হয় তবে সেটা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

অনেক বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্তিকাদের অভিমত শিশুকে পরী, দৈত্য, ডাইনী, জাদুভরা কার্পেট, আলাউদ্দিনের চেরাগের গল্প ইত্যাদি অবাস্তব সব কাহিনী শোনানো ঠিক নয়। আমি তাদের সাথে একমত নই। এই গল্পগুলো তাদের শিশু সন্তানদের শোনানো উচিত। কারণ, শিশুরা বাস্তব এবং বাস্তবের ভানের মধ্যে কোন পার্থক্য করতে পারে না– এটা আমি বিশ্বাস করি না। এইসব গল্পের মধ্যে দিয়েই শিশুরা সত্য ও বাস্তবের সাথে কল্পনা এবং অবাস্তবের পার্থক্য বুঝতে পারবে।

পড়ুন
সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি?

তবে ভূতের গল্প বা দৈত্যের গল্প বলে তাদের নিয়ে একধরনের অলীক ভয় শিশুমনে গ্রোথিত করা মোটেই ঠিক কাজ নয়। আবার হিংস্র দৈত্যের বিভিন্ন নির্মম কর্মকান্ড সম্পর্কেও শিশুদেরকে কোন গল্প বলা উচিত নয়। তাহলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে তাদের মনে।

একটি শিশু যদি নিজেকে বিশাল দৈত্য মনে করে অন্য শিশুর সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করে তবে তাতে দোষের কিছু নেই। শুধু বাবা-মা কিংবা পরিচারিকাকে খেয়াল রাখতে হবে অন্য শিশুটিকে যেন সে আঘাত না করে বসে। যদি শিশুটি জানে, দৈত্য আসলে শুধু বড়ো আর শক্তিশালী এবং সে কখনও কাউকে বিনা কারণে আঘাত করে নাথ তাহলে সেই শিশুটি দৈত্য সাজবে ঠিকই কিন্তু বিনা কারণে তার খেলার সাথীকে আঘাত করবে না।

তবে একটা কথা ঠিক, কোন শিশু যখন কোন কিছুর ভান বা কল্পনা করে খেলার আনন্দ উপভোগ করতে থাকে তখন এটাকে কখনই সত্য বলে গ্রহণ করে না। কিন্তু যদি কেউ তাকে সবসময় স্মরণ করিয়ে দেয় যে এটা নিছক মিথ্যা কিংবা সেই কল্পনার বস্তুটি খুব হিংস্র তবে তার মধ্যে বিরশ ভাব দেখা যায় অথবা সেই হিংস্র ভাবটি প্রকাশ করে ফেলে।

বাল্যকালে শিশুর দেহ মনের উপযোগী উদ্দীপকের সাহায্যে যদি তার কল্পনা সরস ও সজীব রাখা হয়, তবে সেই শিশু যখন বয়ষ্ক মানুষের পরিণত হবে তখন তার কল্পনা, বয়ঙ্ক ব্যক্তির আশা-আকাঙ্খা ও নানা প্রবৃত্তিকে বাস্তবরূপ দিতে সাহায্য করবে।

শৈশবে শিশুর মনে নৈতিক ভাব বা আদর্শ প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা, বৃথা। এতে তাদের কোন সাড়া পাওয়া যাবে না। এঁ বয়সে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এরকম নৈতিক উপদেশের কোন প্রয়োজন নেই। এরকম করলে শিশুর মনে আসবে অবসাদ এবং ফল হবে যে, যে বয়সে শিশু এ ভাব গ্রহণে সক্ষম হতো তখনও সে এটা গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাবে না। অপ্রবেশ্য শিলায় পানি জমলে তা যেমন চুইয়ে নিচে নামে না। শিশুর মনেও তেমনই নৈতিক ভাব গ্রহণের বিরুদ্ধে একটা শক্ত স্তর গঠিত হবে।

পড়ুন
আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ?

ভিন্ন ভিন্ন বয়সে শিশুর মনে গতি-প্রকৃতি কেমন থাকে তা প্রত্যেক পিতামাতা এবং শিক্ষকের জানা দরকার। এজন্য বিশ্বের উন্নতদেশে শিশু মনন্তত্ব বিষয়টি শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বলে গন্য করা হয়।

শৈশবের খেলার সাথে পরবর্তীকালের খেলার পার্থক্য এই যে, বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে খেলাও ক্রমে বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে। প্রথমে শিশু একা একা নির্জনে খেলতে ভালবাসে। বড় ভাইবোনের সাথে মিলে খেলার সামর্থ্য তখন তার থাকে না। কিন্তু সে যখন অন্যের একসাথে খেললে আনন্দ পায় তখন একা খেলা আর তার কাছে পছন্দ হয় না।

পাশ্চাত্যে বিভিন্ন শিশু স্কুলে খেলাধুলার প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যদিও খেলার কতকগুলো উপকারিতা আছে তবুও আমার মনে হয় যদি খেলাধূলাকে চরম উৎকর্ষের দিকে ঝৌক দেয়া না হয় তবে এটা স্বাস্থ্যের পথে উপকারী তাতে সন্দেহ নেই। তবে খেলায় নিপুণতা প্রদর্শনই যদি মূল উদ্দেশ্য হয় তাহলে সেটা হবে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়গণের একক ক্ষেত্র এবং বাকি সব অংশগ্রহণকারীরা সেখানে হয়ে পড়বে দর্শক। যারা ভাল খেলা জানে তারাই শুধু তখন এখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। সর্ব সাধারণ সেখানে অংশ নিতে পারবে না।

শিশুদের মধ্যে এই ধরনের বিভাগ সৃষ্টি করা কখনও উচিত নয়। বড়ো হলে তারা আপনাআপনি এইসব প্রতিযোগিতামূলক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হয়ে পড়বে। তখন তাদের মধ্যেও এইসব বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার একটা তীব্র আকুতি লক্ষ্য করা যাবে।

শিশুমনের স্বাভাবিক বিকাশে খেলাধুলার একটা বড়ো ভূমিকা আছে এটা নিশ্চয় এখন সকলেই বুঝতে পারছেন। সুতরাং খেলাধুলাকে শিশুপাঠ্য তালিকায় একটা গুরুতৃপূর্ণ জায়গায় স্থান দেয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।

খেলার ভেতর দিয়ে সংঘ-গ্রীতি বা দলের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করার কথাই এখানে বলছি। অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ এই সংঘ-প্রীতি পছন্দ করেন। কেননা এর সাহায্যে খারাপ উদ্দেশ্যকেও তথাকথিত ভাল কাজে লাগানো যায়। ছাত্রদের কাজে উৎসাহ দিতে হলে অন্য এক দলকে প্রতিযোগিতায় পরাভূত করার বাসনা জাগিয়ে তুললেই কাজ সহজ হয়। এর অসুবিধা হল এই যে, যাতে প্রতিযোগিতা নেই সে রকম কাজে পরবর্তীতে এইসব ছাত্ররা উৎসাহ পাবে না। আমাদের দেশের স্কুলের খেলাধূলার তুলনায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথেই এর বেশি সম্বন্ধ ৷ কিন্তু বর্তমানে স্কুলের অনুষ্ঠিত খেলাধূলার মধ্যে প্রতিযোগিতার ভাব বিদ্যমান রছে। যদি প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতার মনোভাব প্রবর্তন করতে হয় তবে স্কুলের খেলাধুলায় এর পরিবর্তন আবশ্যক হবে।

পড়ুন
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস

স্কুল কলেজে ছেলে মেয়েদের বাড়তি মনোবিকাশের মাধ্যম হচ্ছে খেলার মাঠ।

সুতরাং মানুষে মানুষে ছন্দ ও প্রতিযোগিতা না করে পরস্পরের সহযোগিতায় মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে যত্নবান হোক এটাই আমার কাম্য।


অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কতটা সুস্থ, তা বুঝার ৫টি উপায়

আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কতটা ভালো/সুস্থ? তা বুঝার ৫টি উপায়

আলোচ্য বিষয়: আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কতটা ভালো? আপনাদের রিলেশনশিপ কি সত্যিই সুস্থ, নাকি শুধু চলছে বলে চলছে? এই ব্লগে আমরা এই পাঁচটি বিষয় নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করব, যাতে আপনি বুঝতে পারেন আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবস্থা কেমন। (১) লাভ বা ভালোবাসা: এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের প্রাণ (২) কেয়ার বা যত্ন: এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ (৩) ট্রাস্ট বা বিশ্বাস: এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি (৪) রেসপেক্ট বা সম্মান: এটি হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মর্যাদা (৫) রেসপন্সিবিলিটি বা দায়িত্ব: এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভারসাম্য ও ভরসার জায়গা (৬) কেন এই পাঁচটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ? কারণ এগুলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের চাবি (৫) শেষ কথা
স্ত্রীর কারণে সংসারে অশান্তি কেন হয়, ১০টি কারন

স্ত্রীর কারণে সংসারে অশান্তি কেন হয়? ১০টি কারন এবং স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন সুখী করার উপায়

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে স্ত্রীর কারণে সংসারে অশান্তি কেন হয় এবং স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন সুখী করার উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস

সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে বাবা-মায়ের যে ১০টি অভ্যাস সন্তানের ভবিষ্যত ধ্বংস করে তা তুলে ধরা হলো-
সন্তান-এর চরিত্র ও অভ্যাস গঠনে মা বাবার ভূমিকা গ্রহণ এবং সহায়তা করা উচিত

সন্তান-এর চরিত্র ও অভ্যাস গঠনে মা বাবার ভূমিকা গ্রহণ এবং সহায়তা করা উচিত

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে আপনার নিজের আদরের সন্তানের অভ্যাস ও চরিত্র গঠনে সহায়তা কেন এবং কিভাবে করা উচিত, এ বিষয়ে একটি আলোচনা তুলে ধরা হলো-
মাছি তাড়ানোর ৫ টি প্রাকৃতিক উপায়

মাছি তাড়ানোর ৫টি প্রাকৃতিক উপায়

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মাছি তাড়ানোর ৫টি প্রাকৃতিক উপায় তুলে ধরা হলো-
সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করার উপায় বা শিশুর ভয় দূর করার পদ্ধতি, কিভাবে শিশুর মনের ভয় দূর

সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করার উপায় বা শিশুর ভয় দূর করার পদ্ধতিঃ কিভাবে শিশুর মনের ভয় দূর করা যায়?

নিম্নে সন্তানের মন থেকে ভয় দূর করার উপায় বা শিশুর ভয় দূর করার পদ্ধতিঃ কিভাবে শিশুর মনের ভয় দূর করা যায়? এ সম্পর্কে এক জন মায়ের বিস্তর একটি আলোচনা/বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
তেলাপোকা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়

তেলাপোকা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে তেলাপোকা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়সমূহ তুলে ধরা হলো-
সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে না, সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার

সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে নাঃ সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সন্তানকে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে না, সন্তানকে খেলতে সুযোগ দেওয়া দরকার, এ সম্পর্কে একটি আলেচনা তুলে ধরা হলো-
আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ

আদর্শ সন্তান গঠনে মা বাবার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ?

নিম্নে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে পিতা-মাতার ভূমিকা কতটুকু গরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়ে একটি বিস্তর আলোচনা তুলে ধরা হলো-
সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি

সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি?

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সন্তানের মন থেকে অকারণ লজ্জা দূর করা কেন জরুরি, বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-