সূরা বাকারার ২৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ২৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ২৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষাসমূহ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ২৭ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-

অনুবাদ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

২৭.ٱلَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ ٱللَّهِ مِنۢ بَعْدِ مِيثَٰقِهِۦ وَيَقْطَعُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِى ٱلْأَرْضِ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَٰسِرُونَ

আল্লাযীনা ইয়ানকুদূ না ‘আহদাল্লা-হি মিম বা‘দি মীছা-কিহী ওয়া ইয়াকতা‘ঊনা মা আমারাল্লাহু বিহীআইঁ ইউসালা ওয়া ইউফছিদূ না ফিল আরদিউলাইকা হুমুল খাছিরূন।

যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথবিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ফাসিক ও নাফরমান লোকদের পরিচয় দিতে গিয়ে তাদের তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা-

  1. তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করে;
  2. যাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং
  3. পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করে।

আল্লাহ তা‘আলা ‘আলমে আরওয়াহ’ বা আত্মার জগতে হযরত আদম (আ)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হবে তাদের সবার আত্মা বের করেছিলেন এবং তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি ও বাকশক্তি দিয়ে সবার নিকট থেকে আল্লাহর একত্ব ও আনুগত্যের ওয়াদা নিয়েছিলেন। 

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?”

(সূরা আরাফ ৭:১৭২)

সকলেই সমস্বরে স্বীকার করে বলেছিলেন,

“তারা বলল, হাঁ, হে আমাদের প্রতি পালক।”

(সূরা আরাফ-৭: ১৭২) 

আলোচ্য আয়াতে ওয়াদা ভঙ্গের দ্বারা ঐ প্রতিশ্রুতির প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

পড়ুন
সূরা বাকারার ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

শরীআত ঘোষিত যে সব সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা ও ছিন্ন করা যেমন আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মধ্যে স্রষ্টা ও সৃষ্টি হিসেবে মনিব ও দাসত্বের যে সম্পর্ক রয়েছে তা অক্ষুণ্ণ না রাখা। অক্ষুণ্ণ না রাখা, তাদের অধিকার ও সম্মান না করা, সালাম না দেওয়া ও আত্মীয়-স্বজনদের হক আদায় না করা ইত্যাদি।

পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা, জনগণের অধিকার খর্ব করা, তাদের প্রতি অত্যাচার ও অবিচার করা, কাউকে অপদস্থ করা, হক নষ্ট করা, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা। কুফরির কারণে রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাথে শত্রুতা পোষণ করা, তাঁর প্রতি হিংসা করা এবং মুসলিমদের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে অভ্যন্তরীণ কলহ ও অনৈক্য সৃষ্টি করা।

‘আহদুন’ (عهد) শব্দের অর্থ হল রাজকীয় ফরমান। রাজা বা সম্রাট তার কর্মচারী ও প্রজাদের নামে যে নির্দেশ জারি করেন আরবি ভাষায় তাকেই ‘আহদুন’ বলা হয়। এই ফরমান যথাযথভাবে পালন করা অধীনস্থ প্রজাসাধারণের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কুরআনে উল্লিখিত ও ‘আহদুন’ শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।

আল্লাহর ‘আহদ’ অর্থ তাঁর সেই স্থায়ী ও মহান ফরমান যাতে গোটা মানব জাতিকে একমাত্র তাঁরই বন্দেগি, আনুগত্য অনুসরণ এবং ইবাদাত-বন্দেগি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,

“যারা আল্লাহর সঙ্গে সুদৃঢ় অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ আল্লাহ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।”

(সূরা বাকারা ২:২৭)

এ বাক্য দ্বারা হযরত আদম (আ) ও সৃষ্টির সময় সমগ্র মানব জাতির নিকট থেকে একমাত্র আল্লাহর ফরমান পালনের যে প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছিল, তা বুঝানো হয়েছে। সূরা আরাফের ১৭২ নং আয়াতে এ প্রতিশ্রুতির ও ফরমানের বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা

আয়াতের পর্যালোচনা হতে যেসব শিক্ষা পাওয়া যায় তা হলো-

  • ফিসক জঘন্যতম চারিত্রিক দোষ। কাফির-নাস্তিক, মুশরিক, মুনাফিক ও পাপাচারে লিপ্ত সবাই এ শ্রেণিভুক্ত।
  • এরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে যাবতীয় ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করে।
  • এরা আল্লাহর বিধান অমান্য করে।
  • আল্লাহর নিরংকুশ প্রভুত্ব ও একত্ববাদ অস্বীকার করে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।
  • ফাসিকরা সকল নবী-রাসূলের আনীত জীবন বিধানকে অস্বীকার করে।
  • এরা কুরআনের বিধি-বিধান সত্য বলে জেনেও তা অস্বীকার ও অমান্য করে।
  • এরা পৃথিবীতে আল্লাহর খিলাফতের দায়িত্বকে অমান্য করে।
  • এরা খোদ্রাদ্রোহিতায় লিপ্ত এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
  • এরা ঈমানের দাবিতে গড়ে ওঠা সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে পৃথিবীতে গোলযোগ ও অরাজকতা সৃষ্টি করে।
  • এরা পৃথিবীতে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।
পড়ুন
সূরা যিলযাল

সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান মেনে নিয়ে তা পৃথিবীতে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সুখন্ডশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসা প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের একান্ত কর্তব্য।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সগিরা গুনাহ কি কি, সগিরা গুনাহের তালিকা

সগিরা গুনাহ কি কি? সগিরা গুনাহের তালিকা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) কবিরা ও সগিরা গুনাহ বলতে কি বুঝায়? (২) সগিরা গুনাহ সমূহ কি কি? (৩) শেষ কথা
কাফের অর্থ কি, কাফের কাকে বলে, কাফের কারা, কাফের এর বৈশিষ্ট্যে সমূহ (সূরা বাকারা)

কাফের অর্থ কি? কাফের কাকে বলে? কাফের কারা? কাফের এর বৈশিষ্ট্যে সমূহ (সূরা বাকারা)

● ইসলাম
অোলোচ্য বিষয়: (১) কাফের অর্থ কি? কাফের কাকে বলে? কাফের কারা? (২) কাফের এর বৈশিষ্ট্যে সমূহ
শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ

শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

● ইসলাম
নিম্নে শিক্ষকের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করা হলো-
বিদআত কাকে বলে, ২১১টি সমাজে প্রচলিত বিদআত এর তালিকা

বিদআত কাকে বলে? ২১১টি সমাজে প্রচলিত বিদআত এর তালিকা

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে ২১১টি বিদআত এর তালিকা প্রদান করা হলো, দেখে মিলিয়ে নেন আপনি কোনটা করছেন না তো?
ইলম শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার ইলমের গুরুত্ব

ইলম শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার? ইলমের গুরুত্ব

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ইলম শব্দের অর্থ কী? (২) ইলম কী, কাকে বলে? (৩) ইসলামে ইলমের গুরুত্ব (৪) ইলম কত প্রকার?
বদনজর কি, বদনজরের হাদিস ও বদনজর থেকে বাঁচার উপায়

বদনজর কি? বদনজরের হাদিস ও বদনজর থেকে বাঁচার উপায়

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) বদনজর কী? (২) কোরআন ও বদনজরের হাদিস (৩) বদনজরের প্রভাব বৈজ্ঞানিকভাবে বোঝা সম্ভব? (৪) বদনজরের উদাহরণ আমাদের চারপাশে (৫) কোন ধরনের দৃষ্টি বদনজর সৃষ্টি করে? (৬) বদনজর থেকে বাঁচার উপায় (৭) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বদনজর (৮) বদনজরের দার্শনিক তাৎপর্য (৯) বদনজর থেকে সুরক্ষার ব্যবহারিক পদক্ষেপ (১০) উপসংহার
তওবা করার নিয়ম

তওবা করার নিয়ম

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: গুনাহ ও তওবাঃ তওবা কত প্রকার ও কি কি? তওবা করার নিয়ম, তওবা করার উপায়, আমি তওবা করতে চাই কিন্তু তওবা কিভাবে করতে হয়? তওবা কেন করতে হবে? তওবার উপকারিতা? তওবার গুরুত্ব ও ফজিলত? তওবা ও গুনাহ মাফ সম্পর্কে ১১টি হাদীস।
হারাম খাদ্যের পরিণাম সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

হারাম খাদ্যের পরিণাম সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিস

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে হারাম খাদ্যের পরিণাম সংক্রান্ত ১টি বিষয়ভিত্তিক হাদিসের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
মাজার সম্পর্কে ইসলাম কি বলে, মাজার সম্বন্ধে ভুল ধারণা ও কাজ সমূহ

মাজার সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? মাজার সম্বন্ধে ভুল ধারণা ও কাজ সমূহ

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: মাযার সম্বন্ধে ভ্রান্ত/ভুল/মিথ্যা ধারণা সমূহ- প্রশ্নঃ মাজার অর্থ কি? মাজার এর অর্থ? মাজার বাংলা অর্থ? মাজার নামের অর্থ? মাজার শব্দের অর্থ কি? মাজার এর মানে কি? মাজার এর অর্থ কি? প্রশ্নঃ মাজারে মানত করা কি জায়েজ? প্রশ্নঃ মাজারে সেজদা করা যাবে কি? প্রশ্নঃ মাজারের গিলাফ লাগানো কি? মাজার ইসলামের অংশ কি? ইসলামে মাজার এর কোন গুরুত্ব আছে কি? ইসলামিক মাজার বানোর অনুমতি আছে কি?
ওয়াদা পালন কী, কাকে বলে ওয়াদা পালনের গুরুত্বসমূহ

ওয়াদা পালন কী, কাকে বলে? ওয়াদা পালনের গুরুত্ব

● ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ওয়াদা পালন অর্থ কী? (২) ওয়াদা পালন কাকে বলে? (৩) ওয়াদা পালনের গুরুত্ব