১৯ প্রকার নফল নামাজ পড়ার নিয়ম ও তাদের ফজিলত

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের, বিভিন্ন প্রকার যেসমস্ত নফল নামাজগুলো রয়েছে, যেমন- ইশরাক, চাশত, যাওয়াল বা সূর্য ঢলার, আওয়াবীন, সালাতুত তাসবীহ, এস্তেখারার, সালাতুল কাতল বা নিহত হওয়াকালীন, তওবার, ভয়াবহ পরিস্থিতির, সফরের, কছরের, সালাতুত তালিবে ওয়াল মাতলুব, সালাতুল মারীয বা অসুস্থ ব্যক্তির, সালাতুল খাওফ বা ভয়কালীন, সালাতুল ফাতাহ্ বা বিজয়ের, শোকরের, সালাতুল কুছ্ফ (সূর্য গ্রহণের), সালাতুল খুছুফ (চন্দ্র গ্রহণের), এস্তেস্কার ইত্যাদি নফল নামাজ পড়ার নিয়মগুলো সম্পর্কে অবশ্য বেসিক ধারণা থাকা উচিত।
আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের খুবই অল্প সংখ্যক মুসলমানই এই সকল নফল নামাজগুলো সম্পর্কে ধরণা রাখেন। তাই আসনু আমরা আজকের এই সুযোগে আমাদের অজানা নামাজগুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা নিয়ে রাখি।
নামাজগুলো নিজে না পড়লেও, শুধু জানার জন্য হলেও, একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের এগুলো জানা থাকা উচিত।
দুঃখজনক হলেও আমরা তো পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজগুলোই আদায় করিনা। আর তো নফল অনেক দূরের বিষয়।
তারপরেও দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যক মুসলামের উপর ফরজ। তাই আজকে একত্রে ১৯ প্রকার নফল নামাজ পড়ার নিয়ম ও তাদের ফজিলত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। চলুন সময় নিয়ে একটি একটি করে সবগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিই।
(১) ইশরাক এর নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ সূর্য উদয়ের পর যে দুই বা চার রাকআত নফল নামায পড়া হয়, তাকে ইরাক-এর নামায বলে। এই নামায দ্বারা এক হজ্জ ও এক উমরার ছওয়াব পাওয়া যায়।
◼ সূর্য উদয়ের আনুমাকি দশ/বার মিনিট পর থেকে ইম্রাকের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত ওয়াক্ত বাকী থাকে। তবে ওয়াক্তের শুরুতেই পড়ে নেয়া উত্তম।
◼ ফজরের নামায আদায়ের পর সেই স্থানেই বসে থেকে দোয়া দুরূদ, যিকির-আযকার ও তাসবীহ তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকবে; দুনিয়াবী কোন কথা বা কাজে লিপ্ত হবে না এবং সময় হয়ে গেলে ইরাকের নামায আদায় করবে। এভাবে ইশরাক এর নামায আদায় করাতে ছওয়াব বেশী। দুনিয়াবী কথাবার্তা বা কাজে লিপ্ত হয়ে গেলেও সময় হওয়ার পর ইরাকের নামায আদায় করা যায় তবে তাতে ছওয়াব কিছু কমে যায়।
◼ ইশরাকের নামায যে কোন সূরা/কিরাত দিয়ে পড়া যায়।
◼ দুই রাকআত ইশরাকের নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়- বাংলায়ঃ দুই রাকআত ইশরাক নামাযের নিয়ত করছি।
(২) চাশত এর নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ আনুমানিক নয়/দশটার দিকে যে নফল নামায পড়া হয় তাকে সালাতুয যোহা বা চাশতের নামায (বা আওয়াবীনের নামাযও) বলা হয়।
◼ এই নামায দুই রাকআত করে পাঠ করলে তাকে গাফেলদের তালিকাভুক্ত করা হয় না, চার রাকআত পাঠ করলে তাকে আবিদীন বা ইবাদতকারীদের তালিকাভুক্ত করা হয়। ছয় রাকআত পাঠ করলে ঐ দিন তার (নফল ইবাদতের) জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। আট রাকআত পাঠ করলে আল্লাহ তাকে আনুগত্যকারীদের তালিকাভুক্ত করেন, আর বার রাকআত পাঠ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটা ঘর তৈরী করেন।
◼ ইশরাক আদায়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত এই নামাযের ওয়াক্ত। তবে দিনের এক চতুর্থাংশ যাওয়ার পর অর্থাৎ, আনুমানিক নয়/দশটার দিকে পড়া উত্তম।
◼ এই নামায দুই থেকে বার রাকআত। তবে রাসূল (সাঃ) সাধারণতঃ চার রাকআত পাঠ করতেন। মাঝে মধ্যে বেশীও পাঠ করতেন।
◼ চাশত এর নামায যে কোন সূরা/কিরাত দিয়ে পড়া যায়।
◼ দুই রাকআত চাশতের নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়-বাংলায়ঃ দুই রাকআত চাশতের নামাযের নিয়ত করছি।
(৩) যাওয়াল বা সূর্য ঢলার নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ দুপুরে পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলার পর চার রাকআত নফল আদায় করা হয়; তাকে বলা হয় যাওয়ালের নামায বা সুর্য ঢলার নামায।
◼ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা এই নফল আদায় করতেন। সূর্য ঢলার সময় আসমানের রহমতের দরজা খোলা হয় বিধায় তখন এই নফল পাঠের ফযীলত অধিক।
◼ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সালামেই এই চার রাকআত নফল আদায় করতেন।
◼ চার রাকআত যাওয়াল নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়-বাংলায়ঃ চার রাকআত যাওয়াল নামাযের নিয়ত করছি।
(৪) আওয়াবীন নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ মাগরিবের ফরয এবং সুন্নাতের পর কমপক্ষে ছয় রাকআত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকআত নফলকে আওয়াবীনের নামায বলা হয়।
◼ হাদীসে এই ছয় রাকআত আওয়াবীনের ফযীলতে বার বৎসর ইবাদত করার ছওয়াব অর্জিত হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। অপর এক হাদীসে বিশ রাকআত পাঠ করলে জান্নাতে আল্লাহ তার জন্য একটা ঘর তৈরী করবেন বলা হয়েছে।
◼ দুই রাকআত আওয়াবীনের নিয়ত এভাবে করা যায়-বাংলায়: দুই রাকআত আওয়াবীনের নিয়ত করছি।
(৫) সালাতুত তাসবীহ নামাজ পড়ার নিয়ম
সালাতুত তাসবীহ নামাজ কাকে বলে?
◼ চার রাকআত নফল নামায যার প্রত্যেক রাকআতে ‘সুবহানাল্লহি ওয়ালহামদুল্লাহি ওলাইলাহা ইল্লালাহু আল্লাহু আকবার’ ৭৫ বার এবং সর্বমোট ৪ রাকআতে ৩০০ বার এই তাসবীহ পাঠ করা হয়, এই নামাযকে সালাতুত্ তাসবীহ বলে।
সালাতুত তাসবীহ নামাজ এর ফজিলত:
◼ এই নামায দ্বারা জীবনের ছোট বড় নতুন পুরাতন ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত গোপন প্রকাশ্য সব রকমের পাপ আল্লাহ মাফ করে দেন।
◼ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে বলেছিলেন: চাচা! পারলে প্রতিদিন এই নামায পড়ুন, তা না পারলে প্রতি সপ্তাহে পড়ুন, তা না পারলে প্রতি মাসে, না পারলে প্রতি বৎসরে, না হয় অন্ততঃ জীবনে একবার হলোেও এই নাযায পড়ুন।
সালাতুত তাসবীহ নামাজ এর নিয়ত:
◼ এই চার রাকআত নামাযের নিয়ত এভাবে করা যায়-আরবীতে বাংলায়ঃ চার রাকআত সালাতুত্ তাসবীহের নিয়ত করছি।
সালাতুত তাসবীহ নামাজ পড়ার নিয়ম:
চার রাকআত সালাতুত তাসবীহ নফল নামাযের নিয়ত করার পর-
- যথারীতি সূরা ফাতেহার পর সূরা/কিরাত পাঠ করে তারপর দাঁড়ানো অবস্থাতেই উক্ত তাসবীহ ১৫ বার পড়বে;
- তারপর রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পড়ার পর উক্ত তাসবীহ ১০ বার;
- তারপর রুকু থেকে উঠে ‘রব্বানা রাকাল হাম্দ’ বলার পর উক্ত তাসবীহ ১০ বার;
- তারপর সাজদায় গিয়ে সাজদার তাসবীহ বলার পর উক্ত তাসবীহ ১০ বার;
- সাজদা থেকে উঠে দুই সাজদার মাঝখানে বসে ১০ বার পড়বে।
- তারপর দ্বিতীয় সাজদায় অনুরূপ ১০ বার;
- তারপর দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠে বসে ১০ বার পড়বে।
- এই হলো ১ রাকআতে ৭৫ বার।
- এরপর (আল্লাহু আকবার বলা ব্যতীতই) দ্বিতীয় রাকআতের জন্য উঠবে এবং এইরূপে দ্বিতীয় রাকআত পড়বে।
- যখন দ্বিতীয় রাকআতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য বসবে, তখন আগে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বে
- তারপর আত্যাহিয়্যাতু পড়বে।
- তারপর আল্লাহ আকবার বলে তৃতীয় রাকআতের জন্য উঠবে।
- অতঃপর তৃতীয় রাকআত ও চতুর্থ রাকআতেও উক্ত নিয়মে উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
- কোন এক স্থানে উক্ত তাসবীহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম থেকে গেলে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবে।
- আর এই নামাযে কোন কারণে সাজদায়ে সহো ওয়াজিব হলোে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত (তৃতীয় রাকআতের সাজদা থেকে উঠে তাসবীহ পড়ার পর ৪র্থ রাকআতের জন্য উঠার সময়ও আল্লাহু আকবার বলবে না।) তাসবীহ পাঠ করতে হবে না।
- তাসবীহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলে গণনা করা যাবে না তবে আঙ্গুল চেপে চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
বিঃ দ্রঃ সালাতুত তাসবীহ পড়ার আর একটি নিয়ম রয়েছে। তবে উপরোল্লেখিত নিয়মটি উত্তম।
দ্বিতীয় নিয়মে যদি কেউ পড়তে চায়, তাহলো-
- নিয়ত বাধার পর প্রথম রাকআতে ছানা-সুবহানাকা … পাঠ করার পর উক্ত দোয়াটি ১৫ বার
- এবং সূরা কিরাত শেষ করে রুকুর পূর্বে ১০ বার পড়বে।
- তারপর রুকুতে, রুকূ থেকে খাড়া হয়ে, প্রথম সাজদায়, দুই সাজদার মাঝখানে এবং দ্বিতীয় সাজদায় পূর্বের নিয়মে ১০ বার করে পড়বে।
- এ নিয়মে দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠে বসে ১০ বার পড়তে হবে না বরং দ্বিতীয় সাজদা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে।
- দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকআতেও সূরা কিরাতের পূর্বে ১৫ বার এবং সূরা কিরাতের পর রুকূর পূর্বে ১০ বার করে উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
- এ নিয়মে প্রথম এবং শেষ বৈঠকে বসে আত্তাহিয়্যাতু-র পূর্বে ১০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে না।
সালাতুত তাসবীহ নামাজ এর কিছু মাসায়েল:
◼ এই নামায একাকী পড়তে হয়-জামাআতের সাথে এই নামায পড়া দুরস্ত নয়।
◼ মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতীত দিবা রাত্রির যে কোন সময়ে এই নামায পড়া যায়, তবে সবচেয়ে উত্তম হলো সূর্য ঢলার পর পড়া, তারপর দিনে, তারপর রাত্রে।
◼ যে কোন সূরা দিয়ে এই চার রাকআত নামায পড়া যায়, তবে কেউ কেউ বলেছেন, এই নামাযে সূরা আছর, কাউছার, কাফেরুন ও এখলাছ বা সূরা হাদীদ, হাশর, ছফ ও তাগাবুন পড়া ভাল।
(৬) এস্তেখারার নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ যখন কোন মোবাহ ও জায়েয কাজের ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দেয় (ফরয ওয়াজিব কিংবা নাজায়েয কাজের জন্য এস্তেখারা নেই।) যেমন কোথায় বিবাহ শাদী করব, বিদেশ যাত্রা করব কি-না, বা হজ্জে কোন তারিখে যাব (হজ্জে যাব কি না-এরূপ এস্তেখারা হয় না) ইত্যাদি বিষয়ে মন স্থির করতে না পারলে বিশেষ এক পদ্ধতিতে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করাকে এস্তেখারা বলে।
◼ এস্তেখারার নিয়ম হলো-
দুই রাকআত নফল নামায পড়ে মনোযোগের সাথে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা, তারপর মনের মাঝে যে দিকে ঝোঁক সৃষ্টি হয় কিংবা যে বিষয়টা অধিক কল্যাণজনক মনে হয়, তাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে মনে করে সেটা করা। এক দিনে মনের অবস্থা এরূপ না হলোে সাত দিন করা। তারপরও মন কোন দিকে না ঝুঁকলে ভাল মন্দ বিবেচনা পূর্বক কাজ করে ফেললে এস্তেখারার বরকতে এবং আল্লাহর রহমতে মঙ্গল হবে।
বিঃদ্রঃ এস্তেখারা রাতের বেলায় করা এবং এস্তেখারার পর শয়ন করা এবং স্বপ্নের মাধ্যমেই এস্তেখারার ফল জানা যাবে-এরূপ জরুরী নয়।
◼ এস্তেখারা যে কোন সময় করা যায়। এস্তেখারার পর শয়ন করাও জরুরী নয়-জাগ্রত অবস্থায়ও তার মন যে কোন এক দিকে ঝুঁকে যেতে পারে, আবার স্বপ্নের মাধ্যমেও কিছু জানতে পারে।
◼ ইস্তিখারার দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَعِينُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ (…) خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্দিরু অলা আক্দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা (কাজের নাম…) খাইরুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্দুরহু লী, অ য়্যাসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। অ ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনী বিহ।
ইস্তিখারা দোয়া বাংলাঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি আমার এই (কাজের নাম…) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বৰ্কত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।
◼ প্রথমে (هَذَا الأَمْرَ) ‘হা-যাল আমরা’ এর স্থলে বা পরে কাজের নাম নিতে হবে অথবা মনে মনে সেই জ্ঞাতব্য বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করতে হবে।
◼ এস্তেখারার উপরোক্ত আরবীতে বর্ণিত দোয়াটি পড়া উত্তম, না পারলে মাতৃভাষায়ও দু’আ করা যায়।
◼ এস্তেখারার নামায পড়ার সময় না পেলে শুধু দোয়া পড়াই যথেষ্ঠ।
(৭) সালাতুল কাতল বা নিহত হওয়াকালীন নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ কোন মুসলমান যদি অবগত হতে পারে যে, তাকে হত্যা করা হবে বা ফাঁসি দেয়া হবে, তার জন্য এই দুই রাকআত নফল নামায পড়ে নেয়া মোস্তাহাব। নামায পাঠ পূর্বক আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এই নামাযকে ‘সালাতুল কাতল’ বা নিহত হওয়াকালীন নামায বলে।
◼ এই নামাযের জন্য গোসল করে নেয়া মোস্তাহাব।
(৮) তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ কারও থেকে কোন পাপ সংঘটিত হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ পবিত্রতা অর্জন করে দুই রাকআত নফল নামায পাঠ পূর্বক আল্লাহর নিকট অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিজের পাপের প্রতি অনুতপ্ত হবে এবং ভবিষ্যতে না করার জন্য পাঁকা-পোক্ত ইরাদা করবে, তাহলে আল্লাহ তার পাপকে ক্ষমা করবেন। এই নামাযকে ‘সালাতুত্ তাওবা’ অর্থাৎ, তওবার নামায বলে।
◼ এর জন্য গোসল করে নেয়া মোস্তাহাব।
◼ সালাতুল হাজাত বা প্রয়োজনের মুহূর্তের নামায আল্লাহর নিকট বা বান্দার নিকট বিশেষ কোন প্রয়োজন হলোে কিংবা শারীরিক মানসিক যে কোন পেরেশানী দেখা দিলে উত্তম ভাবে উযূ করে দুই-রাকআত নফল নামায পড়বে। অতঃপর আল্লাহর হামদ ও ছানা (প্রশংসা) এবং দুরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।
(৯) ভয়াবহ পরিস্থিতির নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ যখন কোন ভয়াবহ পরিস্থিতি আসে তখনও নামায পড়া সুন্নাত। যেমন ঝড়ের সময়, ভূমিকম্পের সময়, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সময়, প্লাবনের সময়, কলেরা বসন্ত প্লেগ প্রভৃতি মহামারী ইত্যাদি দেখা দিলে। তবে এই নামাযের জন্য জামাআত নেই- প্রত্যেকেই নিজে নিজে পৃথকভাবে পড়বে এবং নামায পড়ে আল্লাহরঁ দিকে রুজু হয়ে দোয়া করবে।
◼এই নামাযের জন্য গোসল করে নেয়া মোস্তাহাব। মারাত্মক ধরনের বিপদে কুনূতে নাযেলার আমল মারাত্মক ধরনের বিপদ বা ফেতনার সময় ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলার আমল করা রাসূল (সাঃ) থেকে প্রমাণিত রয়েছে। যেমন- মুসলমানদের উপর শত্রুর আক্রমণ হলোে বা যুদ্ধ লাগলে মুসলমানদের জন্য দু’আ এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করার উদ্দেশ্যে এ আমল করা হয়ে থাকে।
◼ ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকআতে রুকূর থেকে উঠার পর সোজা দাঁড়িয়ে হাত ছাড়া অবস্থায় কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হয়। ইমাম কুনূত পাঠ করবেন আর মুক্তাদীগণ আস্তে আস্তে আমীন বলবেন।
◼ দু’আ পাঠ শেষ হলোে যথারীতি সাজদা করা হবে। কুনূতে নাযেলা (দোয়া) নিম্নোক্ত ভাবে পাঠ করা যায়।
ইমাম বাইহাকি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বাইহাকিতে ‘কুনুতে নাজেলা’য় পড়ার দোয়া এভাবে তুলে ধরেছেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলানা ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত। ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম। ওয়াংসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়্যিহিম। আল্লাহুম্মালআন কাফারাতা আহলিল কিতাবিল্লাাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিকা। ওয়া ইউকাজজিবুনা রুসুলাকা। ওয়া ইউকাতিলুনা আওলিয়াআকা। আল্লাহুম্মা খালিফ বাইনা কালিমাতিহিম। ওয়া যালযিল আকদামাহুম। ওয়া আনযিল বিহিম বাসাকাল্লাজি লা তারুদ্দুহু আনিল কাওমিল মুঝরিমিন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুছনি আলাইকা ওয়ালা নাকফুরুক ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাইঁ-ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া লাকা নুসাল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া লাকা নাসআ, ওয়া নাহফিদু, নাখশা আজাবাকালঝাদ্দা, ওয়া নারজু রাহমাতাক। ইন্না আযাবাকা বিল কাফিরিনা মুলহিক।
কুনুতে নাজেলা দোয়া বাংলাঃ হে আল্লাহ, ক্ষমা করুন আমাদের এবং মুমিন নারী-পুরুষদের, আর মুসলমান নারী-পুরুষদের। তাদের অন্তরসমূহ জুড়িয়ে দিন আর তাদের মাঝে মীমাংসা করে দিন। তাদের সাহায্য করুন আপনার ও তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে। হে আল্লাহ, অভিসম্পাত বর্ষণ করুন কাফের সম্প্রদায়ের ওপর, যারা আপনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং যারা অস্বীকার করে রাসুলদেরকে আর যুদ্ধবিগ্রহ করে ওলিদের সাথে। হে আল্লাহ, বিভেদ সৃষ্টি করে দিন তাদের ঐক্যের মাঝে এবং কম্পন সৃষ্টি করুন তাদের পদযুগলে আর নাজিল করুন এমন শাস্তি যা অপরাধী থেকে অপসারণ করা হয় না। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, হে আল্লাহ, আমরা আপনার নিকট সাহায্য এবং ক্ষমা চাই, সকল মঙ্গল আপনার দিকেই ন্যস্ত করি। আপনার অকৃতজ্ঞ হই না। যারা আপনার নাফরমানি করে আমরা তাদের পরিত্যাগ করে চলি। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব করি, আপনার জন্যে নামাজ পড়ি এবং আপনাকেই সিজদাহ করি। আমরা আপনার দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আপনার কঠিন আজাবকে ভয় করি এবং রহমতের আশা রাখি আর আপনার আজাব তো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।
(১০) সফরের নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ সফরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দুই রাকআত এবং সফর থেকে ফিরে দুই রাকআত নামায পড়া মোস্তাহাব। একে সফরের নামায বলে।
◼ সফর থেকে ফিরে আগে মসজিদে গিয়ে দুই রাকআত নামায পড়বে তারপর বাড়ি যাবে। এরূপ করা মোস্তাহাব।
◼ সফরের মধ্যেও যদি কোন স্থানে কিছুকাল অবস্থান করার ইচ্ছা হয়, তবে সেখানে বসার পূর্বেই দুই রাকআত নামায পড়ে নেয়া মোস্তাহাব। (বেহেশতী জেওরঃ ১ম)
(১১) কছরের নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ যদি কোন ব্যক্তি মোটামুটি ৪৮ মাইল (৭৭.২৩২ অর্থাৎ, প্রায় সোয়া সাতাত্তুর কিলোমিটার) রাস্তা অতিক্রম করে কোন স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকার লোকালয় থেকে বের হয়, তাকে শরী’আতের পরিভাষায় মুসাফির বলা হয়।
◼ মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামায (অর্থাৎ, জোহর, আসর ও ঈশার ফরয নামায)-কে দুই রাকআত পড়বে। একে কছরের নামায বলে।
◼ তিন রাকআত বা দুই রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামায, ওয়াজিব নামায এমনিভাবে সুন্নাত নামায পূর্ণ পড়তে হবে। এ হলো পথিমধ্যে থাকাকালীন সময়ের বিধান। আর গন্তব্যস্থানে পৌঁছার পর যদি সেখানে ১৫ দিন বা তদুর্ধকাল থাকার নিয়ত হয় তাহলে কছর হবে না- নামায পূর্ণ পড়তে হবে। আর যদি ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত থাকে তাহলে কছর হবে। গন্তব্যস্থান নিজের বাড়ি হলোে কছর হবে না, চাই যে কয় দিনই থাকার নিয়ত হোক।
◼ মুসাফির ব্যক্তি মুকীম ইমামের পিছনে এক্তেদা করলে কছর হবেনা, পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে।
◼ মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত ছেড়ে দেয়া দুরস্ত আছে। ব্যস্ততা না থাকলে সব সুন্নাত পড়তে হবে।
◼ যারা লঞ্চ, স্টীমার, প্লেন, বাস, ট্রাক ইত্যাদির চালক বা কর্মচারী, তারাও অনুরূপ দূরত্বের সফর হলোে পথিমধ্যে কছর পড়বে। আর গন্তব্য স্থানের মাসআলা উপরোক্ত নিয়মানুযায়ী হবে।
◼ ১৫ দিন বা তার বেশী থাকার নিয়ত হয়নি এবং পূর্বেই চলে যাবে চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছেনা-এভাবে ১৫ দিন বা তার বেশী থাকা হলোেও কছর পড়তে হবে।
(১২) সালাতুত তালিবে ওয়াল মাতলুব নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ যদি কোন ব্যক্তি শত্রুর পশ্চাদ্ধাবনে দ্রুত চলতে থাকে, তাহলে তার জন্য সেই চলন্ত অবস্থায় নামায পড়া জায়েয নয়, সওয়ারীতে থাকলে সওয়ারী থেকে অবতরণ করে তাকে নামায পড়তে হবে। এরূপ ব্যক্তির নামাযকে “সালাতুত্তালিব” বলে।
◼ যদি কোন ব্যক্তি শত্রু কর্তৃক তাড়িত হয়ে দ্রুত পথ চলতে থাকে, তাহলে সওয়ারীতে থাকা অবস্থায় চলতে চলতে ইশারায় নামায পড়ে নিতে পারে। আর যদি পায়ে হেটে পথ চলতে থাকে বা পানিতে সাঁতরাতে থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় নামায জায়েয নয়। এরূপ ব্যক্তির নামাযকে “সালাতুল মাতলূব” বলে।
(১৩) সালাতুল মারীয বা অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ অসুস্থ্য থাকার কারণে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম না হলোে বসে নামায পড়বে, বসে রুকু করবে এবং উভয় সাজদা করবে। রুকুর জন্য এতটুকু ঝুঁকবে যেন কপাল হাঁটুর কিনারা বরাবর হয়ে যায়।
◼ রুকু সাজদা করার ক্ষমতা না থাকলে মাথার ইশারায় রুকু সাজদা করবে। রুকুর তুলনায় সাজদার জন্য মাথা বেশী ঝুঁকাবে। সাজদার জন্য বালিশ ইত্যাদির প্রয়োজন নেই। বরং বালিশ ইত্যাদি উঁচু বস্তুর উপর সাজদা করা ভাল নয়।
◼ দাঁড়িয়ে নামায পড়তে অনেক কষ্ট হলোে বা রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকলে বসে নামায পড়া দুরস্ত আছে।
◼ কেউ দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু রুকূ সাজদা করতে সক্ষম নয় তাহলে সে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে এবং রুকূ সাজদার জন্য ইশারা করতে পারে। তবে তার জন্য বসে নামায পড়া উত্তম। রুকূ সাজদার জন্য ইশারা করবে।
◼ যদি নিজ ক্ষমতায় বসতে সক্ষম না হয় কিছুতে হেলান দিয়ে বা টেক দিয়ে বসতে সক্ষম হয়, তাহলে হেলান দিয়ে বসে নামায পড়বে। হাঁটু খাড়া রাখতে পারলে খাড়া রাখবে নতুবা হাঁটুর নীচে বালিশ দিয়ে হাঁটু উঁচু করে রাখবে যেন যথাসম্ভব কেবলার দিক থেকে পা ফিরে থাকে।
◼ যদি হেলান দিয়েও বসতে সক্ষম না হয় তাহলে মাথার নীচে বালিশ ইত্যাদি দিয়ে মাথা উঁচু করে কেবলামুখী করে দিয়ে নামায পড়বে। এরূপ অবস্থায় মাথা উত্তর দিকে দিয়ে ডান কাতে শুয়ে বা মাথা দক্ষিণ দিকে দিয়ে বাম কাতে শুয়ে কেবলার দিকে মুখ করেও নামায পড়া দুরস্ত আছে। এসব অবস্থায়ই মাথার ইশারায় রুকূ সাজদা করবে।
◼ যদি মাথা দ্বারা রুকু সাজদার জন্য ইশারা করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে চক্ষুর দ্বারা ইশারায় নামায আদায় হবে না। এরূপ অবস্থায় নামায ফরযও থাকে না। এরূপ অবস্থা পাঁচ ওয়াক্তের বেশী স্থায়ী হলোে তার কাযাও করতে হবে না।
◼ কারও বেহুশ থাকা অবস্থায় পাঁচ ওয়াক্তের বেশী নামায ছুটে গেলে তার কাযা করতে হবে না।
◼ দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর যদি এমন হয়ে যায় যে, দাঁড়ানোর শক্তি রইল না, তাহলে অবশিষ্ট নামায বসে পড়বে। রুকূ সাজদা করতে পারলে করবে নতুবা ইশারায় রুকূ করবে। এমনকি বসতে না পারলে শুয়ে শুয়ে অবশিষ্ট নামায আদায় করে নিবে।
◼ কেউ বসে নামায শুরু করার পর নামাযের মধ্যেই দাঁড়ানোর শক্তি এসে গেল, তাহলে অবশিষ্ট নামায দাঁড়িয়ে পূর্ণ করবে।
◼ যদি কেউ মাথার ইশারায় নামায পড়া শুরু করার পর বসে বা দাঁড়িয়ে রুকূ সাজদা করার মত শক্তি পায় তাহলে নতুন নিয়ত বেধে নতুন করে পূর্ণ নামায আদায় করতে হবে- পূর্বের নামাযের নিয়ত বাতিল হয়ে যাবে।
◼ রোগী পেশাব পায়খানার পর পানি দ্বারা এস্তেজা করতে সক্ষম না হলোে পুরুষ হলোে তার স্ত্রী কিংবা স্ত্রী হলোে তার স্বামী পানি দ্বারা এন্তেজা করিয়ে দিলে ভাল। নতুবা নেকড়ার দ্বারা মুছে ঐ অবস্থায়ই নামায পড়ে নিবে। যদি নেকড়ার দ্বারা মুছবার মত শক্তি না থাকে (এবং পুরুষের স্ত্রী বা স্ত্রীর স্বামী না থাকে) তাহলেও ঐ অবস্থায় নামায পড়ে নিবে।
◼ রোগীর বিছানা যদি নাপাক হয় এবং বিছানা বদলাতে যদি রোগীর অতিশয় কষ্ট হয় বা ক্ষতি হয়, তাহলে ঐ বিছানাতেই নামায পড়ে নিবে।
◼ ডাক্তার চক্ষু অপারেশনের পর নড়াচড়া করতে নিষেধ করলে এমতাবস্থায় শুয়ে শুয়ে হলোেও নামায পড়ে নিবে।
(১৪) সালাতুল খাওফ বা ভয়কালীন নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ মানুষ বা হিংস্র প্রাণী বা অজগর ইত্যাদি শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার মুহূর্তে যে নামায পড়া হয়, তাকে বলে ‘সালাতুল খাওফ’ বা ভয়কালীন নামায।
◼ ভয়কালীন মুহূর্তে জামা’আতে নামায পড়তে না পারলে একাকী নামায পড়ে নিবে। সওয়ারীতে বসা থাকলে আর নামতে না পারলে সওয়ারীতেই নামায পড়ে নিবে। তখন কেবলামুখী হওয়াও শর্ত নয়। আর যদি এতটুকুও অবকাশ না পায় তাহলে তখন নামায পড়বে না- পরে অবস্থা শান্ত হলোে কাযা করে নিবে।
◼ যে মুহূর্তে যুদ্ধ চলে তখন নামায পড়ার অবকাশ না পেলে বিলম্ব করবে এবং এ অবস্থায় ওয়াক্ত চলে গেলে পরে কাযা করে নিবে।
◼ যুদ্ধ চলাকালে সকলে একত্রে জামা’আতে নামায পড়তে না পারলে মুসলমানদেরকে দুইভাগে বিভক্ত করে আলাদা আলাদা জামা’আত করে নিবে। তবে যদি দলে এমন কোন বযুর্গ থাকেন যার পিছনে সকলেই নামায পড়তে চান এবং এক জামা’আত করতে চান তার জন্যও নিয়ম রয়েছে, বিজ্ঞ আলেম থেকে সে নিয়ম জেনে নিবে।
◼ নৌকা জাহাজ ইত্যাদি ডুবে গেলে সন্তরণকালে যদি নামাযের ওয়াক্ত যাওয়ার মত হয় এবং কিছুকাল বয়া, বাঁশ, তক্তা ইত্যাদির সাহায্যে হাত পা সঞ্চালন বন্ধ রাখা সম্ভব হয়, তাহলেও সম্ভব হলোে মাথার ইশারা দ্বারা নামায পড়ে নিতে হবে।
(১৫) সালাতুল ফাতাহ্ বা বিজয়ের নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন, উলামায়ে কেরামের পরিভাষায় এটাকে সালাতুল ফাতাহ্ বা বিজয়ের নামায বলা হয়। মুসলমান আমীরগণও বিভিন্ন দেশ এবং নগরী বিজয়ের পর বিজয়ের শোকর স্বরূপ আট রাকআত নামায পড়তেন।
◼ হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) মাদায়েন বিজয় ও খসরুর রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করতঃ এক সালামে আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন।
(سيرة المصطفى جـ/3 نقلا عن البخاري وروض الانف)
(১৬) শোকরের নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ কোন বিশেষ নেয়ামত পাওয়া বা কোন বিশেষ খুশীর খবর প্রাপ্ত হওয়ার মুহূর্তে শোকর স্বরূপ দুই রাকআত নামায পড়ার প্রামণ রাসূল (সাঃ) থেকে পাওয়া যায়। একে শোকরের নামায বলা হয়। একে সাজদায়ে শোকর’ও বলা হয় ৷
◼ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী “সাজদায়ে শোকর” কথাটির মধ্যে সাজদা’ দ্বারা রূপক অর্থে নামায বোঝানো হয়েছে। শোকর স্বরূপ এই দুই রাকআত নামায পড়ে নিবে, শুধু সাজদা করা সুন্নাত নয়। তবে সাধারণ ফতওয়া গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী উযূ সহকারে কেবলামুখী হয়ে একটা সাজদা দেয়ার মাধ্যমেও শোকর আদায় করা যায়।
(১৭) সালাতুল কুছ্ফ (সূর্য গ্রহণের নামাজ) পড়ার নিয়ম
◼ সূর্য গ্রহণের সময় মাকরূহ ওয়াক্ত না হলোে দুই রাকআত নামায পড়া সুন্নাত।
◼ সূর্য গ্রহণের নামাযের জন্য গোসল করা মোস্তাহাব।
◼ এই নামায জামা’আতের সাথে পড়তে হয়। বাদশাহ, তাঁর নায়েব এবং এক বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদের ইমাম নিজ নিজ মসজিদে কছুফের নামায পড়াতে পারেন। এরূপ ইমাম না পাওয়া গেলে প্রত্যেকে একা একা পড়বে। আর স্ত্রী লোক নিজ নিজ গৃহে পৃথক পৃথক ভাবে এই নামায আদায় করবে।
◼ এই নামায সুরা বাকারার ন্যায় অনেক লম্বা কিরাত, লম্বা রুকূ ও লম্বা সাজদা সহকারে পড়া সুন্নাত।
◼ এই নামাযে কিরাত আস্তে পড়া উত্তম।
◼ নামায শেষে ইমাম কেবলামুখী হয়ে বসে বা লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ সূর্যের গ্রহণ সম্পূর্ণ না ছুটে ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে। অবশ্য কোন নামাযের সময় এসে গেলে দু’আ বন্দ করে নামায পড়ে নিবে! (বেহেশতী জেওর ১ম)
◼ দুই রাকআত সালাতুল কুছুফের নিয়ত এভাবে করা যায়-বাংলায়ঃ দুই রাকআত কুছ্ফের নামায পড়ছি।
(১৮) সালাতুল খুছুফ (চন্দ্র গ্রহণের নামাজ) পড়ার নিয়ম
◼ চন্দ্র গ্রহণের সময়ও দুই রাকআত নামায পড়া সুন্নাত। তবে এই নামাযে জামা’আত সুন্নাত নয় বরং প্রত্যেকে পৃথক পৃথকভাবে নামায পড়বে এবং নিজ ঘরে থেকে পড়বে। মসজিদে যাওয়াও সুন্নাত নয়।
◼ চন্দ্র গ্রহণের নামাযের জন্য গোসল করা মোস্তাহাব।
◼ দুই রাকআত সালাতুল খুছ্ফের নিয়ত এভাবে করা যায়-বাংলায়ঃ দুই রাকআত খুছ্ফের নামায পড়ছি।
(১৯) এস্তেস্কার নামাজ পড়ার নিয়ম
◼ যখন অনাবৃষ্টিতে লোকের কষ্ট হতে থাকে, তখন দুই রাকআত নামায আদায় পূর্বক আল্লাহর নিকট পানির জন্য দরখাস্ত করা এবং দোয়া করা সুন্নাত। এই নামাযকে ‘এস্তেস্কার নামায’ বলে।
◼ এস্তেস্কার মোস্তাহাব নিয়ম এই যে, দেশের সমস্ত মুসলমান পুরুষ, বালক, বৃদ্ধসহ সম্ভব হলোে পায়ে হেঁটে গরীবানা লেবাস-পোশাকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মাথা নীচু করে ময়দানে হাজির হবে।
◼ ময়দানে গমনের পূর্বেই খাঁটি অন্তরে আল্লাহর নিকট তওবা এস্তেগফার করবে। কেননা পাপের দরুণই প্রায়শঃ বৃষ্টি বন্ধ হয় এবং অভাব-অনটন ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কারও হক নষ্ট করে থাকলেও তা আদায় করে যাবে। ময়দানে সাথে কোন কাফেরকে নিবে না। জীব-জানোয়ার সাথে নেয়া যায়, তাতে আল্লাহর রহমত আকর্ষিত হয়!
◼ ময়দানে আযান ইকামত ব্যতীত দুই রাকআত নামায জামাআতের সাথে আদায় করবে।
◼ এই নামাযে কিরাত উচ্চস্বরে পাঠ করা হয়। নামাযের পর ঈদের খুতবার ন্যায় দুইটা খুতবা পাঠ করতে হয়। তবে এই খুতবা পড়তে হয় মাটিতে দাঁড়িয়ে এবং হাতে লাঠি বা তলোয়ার নিয়ে।
◼ খুতবার পর ইমাম কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট পানির জন্য দোয়া করবে। উপস্থিত সকলেও দোয়া করবে।
◼ পরপর তিন দিন এরূপ করা মোস্তাহাব। এই তিন দিন রোযা রাখাও মোস্তাহাব। যদি ময়দানে পৌঁছার পূর্বেই কিংবা তিন দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বৃষ্টি হয়ে যায় তবুও তিন দিন এরূপে পূর্ণ করা মোস্তাহাব।
◼ ময়দানে যাওয়ার পূর্বে সদকা খয়রাত করাও মোস্তাহাব।
◼ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদর মোবারক উল্টিয়েছেন, দোয়ার মধ্যে হাতের পিঠ আসমানের দিকে করেছেন এবং হাত এতটুকু উঁচু করেছেন যে, বগল দৃষ্টি গোচরে এসেছে।
◼ হযরত ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মতে এগুলো করা জরুরী নয় তবে অবস্থা পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত ও শুভ লক্ষণ হিসেবে করা যেতে পারে।
◼ এস্তেস্কার নামাযের জন্য গোসল করা মোস্তাহাব।
( بہشتی گوہر، نمازمسنون والفقه على المذاهب الاربعة)
প্রিয় দ্বীনী ভাই-বোন বন্ধুরা, আজকের মত এই পর্যন্তই, বেশিরভাগ মানুষেই তো বড় লেখা পড়তে চায় না। তারপরেও চেষ্টা করা হয়েছে তত সংক্ষিপ্তভাবে প্রত্যকটি নফল নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়। আমি করি এই পোষ্টটি থেকে একটু হলেও অনেক না জানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোষ্টটি পড়ে উপকৃত হলে অবশ্য আপনার বন্ধু ও স্বজনদের সাথে শেয়ার করে দেবেন এবং একটি ভোলো কমেন্ট করে দিয়ে ভুলবেন না যেন। এত করে আমরা আরও উৎসাহ বোধ করি।
[তথ্য সূত্র: মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন]
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।








