গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খাওয়াতে হয়?

প্রশ্নঃ আমার বকনার পেটে প্রচুর কৃমি হয়েছে, কৃমির ওষুধ খাওয়াব, গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয়? ঔষধের নাম জানতে চাচ্ছি…
উত্তরঃ গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর লিভার টনিক/Liver Tonic ও ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যামাইনো এসিড ঔষধসমূহ খেতে হয়।
- পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়তা:
কৃমি গরুর শরীর থেকে পুষ্টি শোষণ করে নেয়। কৃমির ওষুধ দেওয়ার পর শরীর থেকে কৃমি দূর হয়ে গেলেও, কিছু সময়ের জন্য গরুর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই সময় ভিটামিন ও মিনারেল দিলে গরু দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:
কৃমির প্রভাবে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর পর ভিটামিন A, D, E, B-কমপ্লেক্স ইত্যাদি দিলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। - খাদ্যে রুচি ও ওজন বাড়াতে সহায়ক:
অনেক সময় কৃমির কারণে গরুর খাওয়ার রুচি কমে যায়। কৃমি দূর করার পর ভিটামিন দিলে গরুর খাওয়ার রুচি ও ওজন ধীরে ধীরে বাড়ে। - লিভার টনিক:
কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়ার পর পশু দুর্বল হয়ে পড়লে ভালো মানের লিভার টনিক ব্যবহার করা উচিত। এটি পশুর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
(১) গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পরঃ লিভার টনিক/Liver Tonic
ব্যবহার ক্ষেত্র: লিভার টনিক গবাদিপশুর বদহজম ও জীবাণুঘটিত রোগের কারণে সৃষ্ট লিভারের ক্ষতিপূরণে, ভিটামিনের অভাব পূরণে এবং লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার্য একটি আদর্শ লিভারটনিক। লিভার টনিক কলিজা বা যকৃতের (Liver) সুষম কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
| ঔষধের নাম (ইংরেজি) | ঔষধের নাম (বাংলায়) | প্যাকিং সাইজ | প্রস্তুতকৃত প্রতিষ্ঠানের নাম |
| Livatone | লিভাইন | ১০০, ৫০০ মি.লি. বোতল | Globe |
| Hepatonic | হেপাটোনিক | ৫০০ মি.লি. ও ১ লিটার | SK+F |
| Hepazol | হেপাজল | ১০০, ৫০০ মি.লি. ও ১ লিটার | Intercept |
| SiVita Hepaguard | সিভিটা হেপাগার্ড | ১ লিটার | Pharma and Firm |
| Livaplex | লিভাপ্লেক্স | ৫০০ মি.লি. ও ১ লিটার | Popular |
| Hapevex | হেপাভেক্স | ৫০০ মি.লি., ১ লিটার | ACI |
| Hepatovit | হেপাটোভিট | ১ লিটার | ACME |
| RestoLiv solusion | রেসটোলিভ সলিউশন | ১০০, ৫০০ মি.লি. ও ১ লিটার | Opsonin |
| Tonoliv | টেনোলিভ | ১ লিটার | Bengal |
| F Hepaton Liquid | এফ হেপাটন লিকুইড | ১০০ মি.লি. ও ১ লিটার | FnF |
| Liva-Vit liquid | লিভা-ভিট তরল | ১০০ মি.লি. ও ১ লিটার | Square |
| Digestim Liquid | ডাইজেসটিম তরল | ১০০ মি.লি., ১ লিটার | – |
| Hepamin fort | হেপামিন ফোর্ট | ১ লিটার | Elanco |
| Hepavt Liquid | হেপাভেট লিকুইড | ৫০০, ১০০ মি.লি. | Jayson |
| Heparen | হেপারেন | ৫০০ মি.লি. বোতল | Renata |
ব্যবহারের নিয়ম: ছোট এবং বড় প্রাণির জন্য ২০ মি.লি. প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য।
উপরোল্লিখিত মাত্রার ঔষধ বিভিন্ন প্রাণিতে ৫-৭ দিন সেবন করাতে হবে অথবা রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান এর পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
(২) গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পরঃ ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যামাইনো এসিড ঔষধসমূহ
Vitamin, Mineral & Amino Acid Drugs
ব্যবহার ক্ষেত্র: গবাদিপশুর দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি, দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা ত্বরান্বিত করতে এবং Deworming-এর পরে ব্যবহার্য।
| ঔষধের নাম (ইংরেজি) | ঔষধের নাম (বাংলায়) | প্যাকিং সাইজ | প্রস্তুতকৃত প্রতিষ্ঠানের নাম |
| Bol. A milk | বো. এ মিল্ক | ৩ গ্রাম | ACME |
| Pow. Ranmix Total | রানমিক্স টোটাল পাউডার | ১ কেজি স্যাসেট | Navana |
| Pow. Ayumin | আয়ুমিন পাউডার | ১, ১২ কেজি | ACI |
| Pow. Amnovit | এমনোভিট পাউডার | ২৫০ গ্রাম, ১ কেজি | Bengal |
| Inj. Aminovit Plus vet | ইঞ্জে. অ্যামাইনোভিটা গ্লাস ভেট | ২০, ৫০, ১০০ ভায়াল | Popular |
| Aminovit Plus vet oral | অ্যামাইনোভিটা গ্লাস ভেট ওরাল | ২৫০, ৫০০ মি.লি. বোতল | Popular |
| Inj. Aminovital-High | ইঞ্জে. এ্যামাইনোভাইটাল-হাই | ২০, ১০০ মি.লি. ভায়াল | Rafique Medicine |
| Inj. Amilyte-C | ইঞ্জে. অ্যামাইলাইট | ৫০ ও ১০০ মি.লি. | Pharma & Firm |
| Pow. Calphostonic | ক্যালফসটোনিক পাউডার | ১০০, ৫০০ গ্রাম, ১ কেজি | ACI |
| Pow. GM-Tonic | জিএম-টনিক পাউডার | ১০০ গ্রাম ও ১ কেজি | Intercept |
| Inj. Vita-S Super | ইঞ্জে. ভিটা-এস সুপার | ১০, ৫০, ১০০ মি.লি. ভায়াল | Chemist |
| SiVita Aminoboost | সিভিটা এমাইনোবুস্ট | ৫০০ মি.লি., ১ লিটার বোতল | Pharma & Firm |
| Inj. vitatonic | ইঞ্জে. ভিটাটোনিক | ১০ মি.লি., ৩০ মি.লি. ভায়াল | Renata |
| CALFVIT | কাফভিট | ২৫ মি.লি. প্যাক | Speed care |
| Pow. Growth Tonic | গ্রোথ টনিক পাউডার | ১০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম ও ১ কেজি | Speed care |
জেনেরিক নাম/ঔষধের উপাদান: প্রতি বোলাসে আছে- এ্যালবেনডাজোল ইউ এস পি ৬০০ মিগ্রা.
জেনেরিক মাত্রা: ১০ মি.গ্রা./কেজি দৈহিক ওজন
ব্যবহারের নিয়ম: প্রাণির প্রতি ৪০ কেজি ওজনের ১ বোলাস যা অর্ধেক মাত্রা সকালে অর্ধেক মাত্রা বিকালে খাওয়াতে হবে পরপর ৩-৫ দিন।
**এ্যালমেক্স-ভেট গর্ভাবস্থায় ২য় পর্যায় থেকে ব্যবহার করা নিরাপদ।
(৩) গবাদি পশুর জন্য কৃমিনাশক ওষুধের গুরুত্ব ও ব্যবহার
গবাদি পশু যেমন গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদির সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে কৃমিনাশক ওষুধের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। এই প্রাণীদের পাকস্থলী চারটি ভাগে বিভক্ত এবং আকারে বড় হওয়ায় কৃমির সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। কৃমি না মারলে এটি পশুর পাকস্থলীতে আদর্শ পরিবেশ পায়, যার ফলে খাদ্যের পুষ্টি শোষণে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ, পশুর বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কৃমি পশুর পাকস্থলী, লিভার, ফুসফুস এবং এমনকি চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সংক্রমণ ঘটায়। এর ফলে-
- পুষ্টির ক্ষতি: আপনি পশুকে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করলেও, কৃমি সেই খাবারের পুষ্টি শোষণ করে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, ১০ কেজি খাবার দেওয়ার পরও মাত্র ৫ কেজির সমান ফলাফল পাওয়া যায়, বাকি অংশ কৃমি গ্রহণ করে।
- স্বাস্থ্য সমস্যা: কৃমির সংক্রমণ বাড়লে পশুর পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যার ফলে পাতলা পায়খানা হয়। এই অবস্থায় কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
- মারাত্মক ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদে কৃমি লিভার বা অন্যান্য অঙ্গ নষ্ট করে পশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সঠিক কৃমিনাশক ব্যবহারের নিয়ম হলো-
১. ওজন পরিমাপ: কৃমিনাশক ওষুধের ডোজ পশুর ওজনের উপর নির্ভর করে। সঠিক ওজন জানা না থাকলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায় বা কৃমি পুরোপুরি মরে না। ওজন পরিমাপের জন্য ফিতা বা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করা যায়। অভিজ্ঞ খামারি বা পশু চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়াও উপকারী।
উদাহরণস্বরূপ- দেশি গরুর ওজন সাধারণত ১০০-১২০ কেজি হয়। এ ক্ষেত্রে ৬০ কেজি ওজনের জন্য একটি ব্রড স্পেকট্রাম ট্যাবলেট (যেমন ট্রাইক্লাবেন্ডাজল বা লিভামিসোল গ্রুপের) দেওয়া যায়। ১০০-১২০ কেজি গরুর জন্য ২টি ট্যাবলেট প্রয়োজন।
২. ব্রড স্পেকট্রাম ট্যাবলেট: ট্রাইক্লাবেন্ডাজল এবং লিভামিসোল গ্রুপের ওষুধ পাকস্থলী, লিভার, ফুসফুস এবং চোখের কৃমি ধ্বংস করতে সক্ষম। এই ওষুধগুলো বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে (প্রায় ২০ টাকা) পাওয়া যায়।
৩. ডোজের নিরাপত্তা: এই গ্রুপের ওষুধ তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত নিরাপদ। অর্থাৎ, সামান্য বেশি ডোজ দেওয়া হলে ক্ষতি হয় না, তবে কম ডোজ দেওয়া হলে কৃমি মরে না, যা আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৪. লিভার টনিকের প্রয়োজনীয়তা: কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়ার পর পশু দুর্বল হয়ে পড়লে ভালো মানের লিভার টনিক ব্যবহার করা উচিত। এটি পশুর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
গবাদি পশুর সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে কৃমিনাশক ওষুধের নিয়মিত ও সঠিক ব্যবহার অপরিহার্য। সঠিক ওজন পরিমাপ, মানসম্মত ওষুধ নির্বাচন এবং পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে আপনার পশু কৃমিমুক্ত থাকবে এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে। এতে আপনার খামারের লাভজনকতাও বৃদ্ধি পাবে।
দ্রষ্টব্য: ওষুধের দাম বা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের জন্য স্থানীয় পশু চিকিৎসক বা নির্ভরযোগ্য ফার্মেসির সাথে যোগাযোগ করুন।
[তথ্যসূত্র: ডা. এ.বি হায়াত সরকার]
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।



