গরু পালন পদ্ধতি, পরিচর্যা, গোয়ালঘর, খাদ্য, রোগ পরিচিতি ও ব্যবস্থাপনা

গরু পালন পদ্ধতি, পরিচর্যা, গোয়ালঘর, খাদ্য, রোগ পরিচিতি ও ব্যবস্থাপনা

(১) গরু পালন পদ্ধতি

গবাদিগরুর দুধ ও মাংস উৎপাদন লাভজনক করার জন্য সুবিধা মতো পালন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আমাদের বাংলাদেশে সনাতন পদ্ধতিতে গরু পালন করা হয়। এখানে সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না।

কৃষক সাধারণত গরুকে গোয়ালে রেখে, কখনো খুঁটা দিয়ে বেঁধে বা চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়ে পালন করে থাকে।

তাই তিন পদ্ধতিতে গরু পালন করা যায়-

  1. গোয়াল ঘরে পালন
  2. বাইরে বেঁধে পালন
  3. চারণভূমিতে পালন

ক) গোয়াল ঘরে রেখে পালন

আধুনিক গোয়াল ঘর তৈরি করে গরুকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায়। গোয়াল ঘর তৈরি করার সময় গরুর সংখ্যার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

গরুর সংখ্যা ৯ বা তার কম হলে এক সারিবিশিষ্ট ঘর এবং ১০ বা তার বেশি হলে দুই সারিবিশিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে।

ঘর তৈরির সময় প্রতিটি গরুর জন্য খাদ্য সরবরাহের পথ, চাড়ি, গরু দীড়ানোর স্থান, নর্দমা ও গরু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এখানে গরুকে তার প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য, যেমন: কীচা ঘাস, খড়, খৈল,ভুঁসি ও পানি সরবরাহ করা হয়।

গরুকে চারণভূমি বা বাইরে বাঁধার জায়গা না থাকলে এ পদ্ধতিতে গবাদিগরু পালন করা হয়। এখানে গরু কম আলো বাতাস পায় এবং সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হয়।

খ) বাইরে বেঁধে পালন

গোয়াল ঘরে গরুকে সবুজ ঘাস সরবরাহ করা সম্ভব না হলে বিকল্প বিষয় চিন্তা করতে হয়। এক্ষেত্রে সবুজ ঘাস রয়েছে এমন রাস্তা, বাগান বাড়ি বা মাঠে গরুকে বেঁধে ঘাস খাওয়ানো যায়। গরুকে শক্তভাবে বাধতে না পারলে অন্যের জমির ফসল নষ্ট করে থাকে। তাই গরু পালনকারীকে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

See also  গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত ধারণা)

গ) চারণভূমিতে পালন

যেসব দেশে অনেক কৃষিজমি রয়েছে সেখানে তারা গরুর জন্য উন্নত জাতের ঘাসের চাষ করে থাকে। সাধারণত গোসল্পদে উন্নত দেশগুলোই পরিকল্পিতভাবে গরুর জন্য চারণভূমি তৈরি করে থাকে। গরু তার প্রয়োজনীয় সবুজ ঘাস চারণভূমিতে চরে খেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খেল,ভুসি ও পানি গোয়াল ঘরে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

(২) গরুর পরিচর্যা

গরুকে আদর-যত্রের সাথে লালন-পালন করতে হয়। গরুর সার্বিক যত্রকে পরিচর্যা বলে। দুধেল গাভীর দৈনন্দিন পরিচর্যার অভাব হলে দুগ্ধ উৎপাদন কমে যায়। খামারের বাছুর, বাড়ন্ত গরু ও গর্ভবতী গাভীর বিশেষ যত নিতে হয়।

গরুর সঠিক পরিচর্যার জন্য নিয়লিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিতে হবে-

  • প্রতিদিন গরুর গোবর, মূত্র ফেলে দিয়ে বাসস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • চাড়ি থেকে বাসি খাদ্য ফেলে দিয়ে তাজা খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • গরুর শরীর পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত গোসল ও প্রয়োজনে ব্রাশ করতে হবে।
  • গরুকে প্রজনন, গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন যত্র নিতে হবে।
  • দোহনকালে গাভীকে বিরক্ত করা যাবে না।
  • বাছুরের বিশেষ যত্র নিতে হবে এবং বাছুর যাতে পরিমিত দুধ পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(৩) গরু পালনের জন্য একটি আদর্শ গোয়াল ঘর

মানুষের মতো গরুরও আশ্রয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সুস্থভাবে বাচা এবং অধিক উৎপাদনের জন্য গরুর ঘর তৈরি করতে হয়। গরুর থাকা খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য যে আরামদায়ক ঘরে আশ্রয় দেওয়া হয় তাকে গোয়াল ঘর বলে।

গোয়াল ঘরে গরুকে ২৪ ঘণ্টা আবদ্ধ না রেখে মাঝে মধ্যে আলো বাতাসে ঘুরিয়ে আনা গরুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

একটি আদর্শ গোয়াল ঘরের স্থান নির্বাচন-

পারিবারিক বা বাণিজ্যিক যে উদ্দেশেই গরু পালন করা হোক না কেন খামারিকে গোয়াল ঘরের স্থান নির্বাচনের সময় নিমলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করতে হবে।

  • গোয়াল ঘর উচু স্থানে করতে হবে।
  • গরুর সংখ্যার বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
  • গোয়াল ঘর মানুষের বাসস্থান থেকে দূরে হবে।
  • গোয়াল ঘর বা খামার এলাকা থেকে সহজে পানি নিষ্কাশন হতে হবে।
  • গোয়াল ঘরের চারপাশ পরিষ্কার হবে।
  • গোয়াল ঘরে যেন সূর্যের আলো পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • গরুর জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহের বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
  • বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গোয়াল ঘর তৈরির সময় বাজার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয় চিন্তা করতে হবে।
See also  ১৫টি উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় ও লক্ষণসমূহ

নিয়ে গোয়াল ঘর বা খামারে গরু পালন করার সুবিধাসমূহ-

গরুর বাসস্থান বা গোয়াল ঘরের অনেক সুবিধা রয়েছে। গোয়াল ঘরে একক বা দলগতভাবে গরু পালন করলে ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয় ও উৎপাদন খরচ কমে আসে।

  • গরুর একক ও নিবিড় যত্ন নেওয়া সহজ হয়।
  • গরু থেকে অধিক দুধ ও মাংস পাওয়া যায়।
  • রোদ, বৃষ্টি ও ঝড় থেকে পশ্কে রক্ষা করা যায়।
  • পোকামাকড় ও বন্য পশুপাখি থেকে রক্ষা করা যায়।
  • দুগ্ধ দোহন সহজ হয়।
  • গোয়াল ঘরে রাখার কারণে গরু শান্ত হয়ে উঠে।
  • রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
  • চিকিৎসাসেবা সহজ হয়।
  • সহজে গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা যায়।
  • গোবর ও অন্যান্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা সহজ হয়।
  • শ্রমিক কম লাগে ও উৎপাদন খরচ কমে আসে।

গোয়াল ঘরের আকার গরুর সংখ্যার উপর নির্ভর করে। গরুর সংখ্যা ১০ এর কম হলে এক সারিবিশিষ্ট ঘর এবং ১০ বা তার অধিক হলে দুই সারিবিশিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে।

চিত্র: এক সারিবিশিষ্ট গোয়াল ঘর চিত্র: দুই সারি বিশিষ্ট গোয়াল ঘর

(৪) গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

গরু জাবরকাটা প্রাণী হওয়ায় বেশি পরিমাণ আশ জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকে। এদের খাদ্য হিসেবে সবুজ ঘাস, খড় ও দানাদার খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

দেশি গরু কম দুধ উৎপাদন করায় অনেকে কোনো দানাদার খাদ্য সরবরাহ করে না। কিন্তু উন্নত জাতের সংকর গাভী বেশি দুধ উৎপাদন করায় সবুজ ঘাস ও খড়ের সাথে অবশ্যই পরিমিত দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়।

ক) সবুজ ঘাস

সবুজ ঘাসই গাভীর প্রধান খাদ্য। কিন্তু বাংলাদেশে চারণভূমি ও খোলা সবুজ মাঠ না রেললাইন ও বাঁধের ধারে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করতে হবে। উন্নত জাতের ঘাস হিসেবে নেপিয়ার, পারা, জার্মীন, গিনি এবং দেশি ঘাস চাষ করা যেতে পারে।

See also  ইসলামে দৃষ্টিতে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও গরু মোটাতাজা করার ঔষধ খাওয়ানো

তাছাড়া গরুকে সবুজ ঘাসের পরিবর্তে সুবিধামতো কোনো গাছের পাতা যেমন: ইপিল-ইপিল, আম পাতা, কলা পাতা, কীঠাল পাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি খাওয়ানো যায়।

রান্নাঘরের বিভিন্ন তরিতরকারি ও ফলের খোসা ফেলে না দিয়ে গরুকে সরবরাহ করা যেতে পারে।

উন্নত ও সংকর জাতের গাভীর ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩-৪ কেজি সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হবে। তাই ওজনভেদে একটি গরুকে দৈনিক ১২-১৫ কেজি সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হয়।

খ) খড়

আমাদের বাংলাদেশে শুধু সবূজ ঘাস দিয়ে গরু পালন করা যায় না। তাই ঘাসের সাথে ধানের খড় সরবরাহ করতে হবে।

উন্নত ও সংকর জাতের গাভীর ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ কেজি খড় সরবরাহ করতে হবে। তাই ওজনতেদে একটি গরুকে দৈনিক ৩-৫ কেজি খড় সরবরাহ করতে হয়।

ধানের খড়কে কেটে পানিতে ভিজিয়ে নরম করলে গরুর জন্য খেতে ও হজম করতে সুবিধা হয়।

খড়কে এককভাবে না দিয়ে খড়ের সাথে খৈল, ভূসি, ভাতের মাড় ও ২০০-৩০০ গ্রাম ঝোলা গুড় মিশিয়ে খাওয়ালে গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও দুধ উৎপাদন বেড়ে যায়।

গ) দানাদার খাদ্য

গরুর জন্য বিভিন্ন দানাশস্য ও এদের উপজাতসমূহকে দানাদার খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

গাভীকে দৈনিক যে পরিমাণ দানাদার খাদ্য দিতে হয় তা দুই ভাগ করে সকালে ও বিকালে দুধ দোহনের আগে সরবরাহ করতে হবে। .

উন্নত ও সংকর গাভীর ক্ষেব্রে প্রথম ৩ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য ২ কেজি দানাদার এবং পরবর্তী প্রতি ৩ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য আরও ১ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

গাভীর দানাদার খাদ্য তালিকা-

দানাদার খাদ্যপরিমাণ
গমের ভুসি৪০%
চালের কুঁড়া২০%
ভুট্টার গুঁড়া২০%
সরিষার খৈল২০%
মোট১০০%

ঘ) খনিজ লবণ

একটি দুধেল গাভীকে দৈনিক ১০০-১২০ গ্রাম লবণ ও ৫০-৬০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া সরবরাহ করতে হবে।

See also  গরুকে কৃমির ঔষধ/কৃমিনাশক খাওয়ানোর নিয়ম? গরুকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম?

ঙ) পানি

একটি উন্নত জাতের গাভী দৈনিক ৪০ লিটার পানি পান করতে পারে। তাই গরুকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

(৫) গরুর বিভিন্ন প্রকার রোগ পরিচিতি

গরুর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিচ্যুতিকে রোগ বলা হয়। রোগাক্রান্ত গরুর খাদ্য গ্রহণ কমে যাবে। গরু ঝিমাতে থাকবে। প্রশ্রাব ও পায়খানায় সমস্যা হয় ৷ অনেক ক্ষেত্রে এদের শরীরের লোম খাড়া দেখায় ও তাপ বেড়ে যায়।

গরু আমাদের অনেক উপকারে আসে। কিন্তু এসব গরু মানুষের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গরুরর দুধ, মাংস এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়। অনেক গরু যত্ন ও চিকিৎসার অভাবে মারাও যায়। তাই গরু পালনকারীর রোগ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা উচিত।

গরু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, এখানে গরুর কিছু রোগ ও রোগের পরিচিতি বর্ণনা করা হলো।

গরুর রোগসমৃহকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়-

  1. সংক্রামক রোগ
  2. পরজীবীজনিত রোগ
  3. অপুষ্টিজনিত রোগ ও
  4. অন্যান্য সাধারণ রোগ

ক) সংক্রামক রোগ

যে সকল রোগ রোগাক্রান্ত গরু হতে সুস্থ গরুর দেহে সংক্রমিত হয় তাকে সংক্রামক রোগ বলে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে গরুতে এ সকল রোগ হয়ে থাকে।

উল্লিখিত রোগের মধ্যে সংক্রামক রোগই সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। সংক্রামক রোগের মধ্যে আবার ভাইরাসজনিত রোগ গরুর বেশি ক্ষতি করে থাকে, যেমন: খুরা-রোগ, জলাতঙ্ক, গোবসন্ত ইত্যাদি।

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগের মধ্যে গবাদিপশ্ততে বাদলা, তড়কা, গলাফোলা, ওলান-ফোলা, বাছুরের নিউমোনিয়া ও ডিপথেরিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নিম্নে কয়েকটি রোগের কারণ ও লক্ষণ দেওয়া হলো।

i) খুরা রোগ

সকল জোড়া খুর বিশিষ্ট গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হয় ৷ এটি একটি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। লালা, খাদ্য দ্রব্য ও বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ প্রাণীরা সংক্রমিত হয়।

খুরা রোগ রোগের লক্ষণ হলো-

  1. গরুর খুরায়, মুখে ও জিহবায় ফোসক্কার মত দেখা যায় ৷ পরে ফোস্কা থেকে ঘা হয় এবং মুখ হতে লালা ঝারে।
  2. তাপমাত্রা বাড়ে ও খাবারে অরুচি হয়। ধীরে ধীরে পণ দুর্বল হয়ে পড়ে।
  3. অনেক সময় গরু মারা যায়। কম বয়স্ক গরু বা বাছুরের মৃত্যুর হার বেশি।
See also  গরুর ভিটামিন ইনজেকশন

ii) বাদলা

গবাদি পশুর ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যস্ত এই রোগ হতে দেখা যায়। এটি একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক ব্যাধি। ক্ষতস্থান ও মলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।

বাদলা রোগে আত্রান্ত হলে গরুর নিমোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়-

  1. আক্রান্ত গরু খুঁড়িয়ে হাটে।
  2. শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে যায় ও ব্যাথা অনুভব করে।
  3. ফোলা স্থানে পচন ধরে ও কয়েক ঘন্টার মধ্যে আক্রান্ত গরু মারা যায়।
  4. আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হয়।
  5. শরীরের তাপমাত্রা ১০৪০-১০৫০ফা.) বেড়ে যায়।

iii) তড়কা

তড়কা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক ব্যাধি।

নিচে তড়কা রোগের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো-

  1. তড়কা রোগ হলে গরু মাটিতে পড়ে যায়।
  2. শরীরের তাপমাত্রা ১০৪০-১০৫০ফা.) ও গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়।
  3. মৃত গরুর নাক, মুখ ও পায়ুপথ দিয়ে রক্ত নির্গত হয়।

খ) পরজীবীজনিত রোগ

যেসব ক্ষুত্র প্রাণী বড় প্রাণীর দেহে আশ্রয় নেয় তাদেরকে পরজীবী বলে। এরা আশ্রয়দাতার দেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে থাকে ও বংশবিস্তার করে।

পরজীবীকে দুইভাগে ভাগ করা হয়-

  • বহিঃপরজীবী: উকুন, মশা, মাছি, আটালি, মাইট ইত্যাদি গরুর চামড়ার উপর বাস করে এবং দেহ হতে রক্ত শোষণ করে গরুর ক্ষতি করে থাকে।
  • দেহাভ্যস্তরের পরজীবী: এরা গরুর দেহের ভেতর বাস করে, যা কৃমি নামে পরিচিত। কৃমি দেখতে পাতা, ফিতা ও গোল বলে এদেরকে পাতা কৃমি, ফিতা কৃমি ও গোল কৃমি বলা হয়। এরা আশ্রয়দাতার দেহের ভিতর হতে পুষ্টি গ্রহণ করে গরুকে রোগাক্রান্ত করে তোলে।

গ) অপুষ্টিজনিত রোগ

আমিষ, শর্করা, ম্নেহ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পানি ইত্যাদি যে কোনো একটি পুষ্টি উপাদানের অভাবে গরুর রোগ হলে তাকে অপুষ্টিজনিত রোগ বলা হয়।

মানুষ ও গরুর শরীরে খাদ্যের অন্যান্য উপাদানের তুলনায় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ খুবই কম পরিমাণে দরকার হয়। প্রধানত এ দুইটি পুষ্টি উপাদানের অভাবে গরু অপুষ্টিজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। যেমন: দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, দৈহিক বৃদ্ধি না হওয়া, ত্বক অমসূণ হওয়া, দেরিতে দাঁত উঠা, হাড় বেঁকে যাওয়া, দুধ জ্বর (Milk Fever) ইত্যাদি।

See also  আদর্শ গরুর খামার ব্যবস্থাপনাঃ খামারের বর্জ্য, পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা, কম্পোস্ট ও কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়া

ঘ) অন্যান্য সাধারণ রোগ

অন্যান্য সাধারণ রোগের মধ্যে পেট ফাঁপা, উদরাময় ও বদহজম উল্লেখযোগ্য। সাধারণত খাদ্যে অনিয়ম, পচা-বাসি খাদ্য ও দুষিত পানির কারণে এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বাছুরকে খাদ্য সরবরাহের সময় এ বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক।

(৬) গরুর রোগ ব্যবস্থাপনা

গরুর খামারে রোগ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুতৃপূর্ণ বিষয়। গরুর রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ ব্যবস্থাপনা করা হয়।

গরুর খামারে রোগ না হওয়ার জন্য গৃহীত উপায়সমূহকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলা হয়। খামারে রোগ দেখা দেওয়ার পর চিকিৎতসাসহ অন্যান্য গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

ক) গরুর রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ

গরুরর স্বাস্থ্য ও উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি প্রবাদ হচ্ছে, “রোগব্যাধির চিকিৎসা অপেক্ষা প্রতিরোধই শ্রেয়” ৷ তাই গরুর খামারের উৎপাদন চলমান রাখার জন্য গরুর রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে।

নিম্নে গরুর খামারে রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ বর্ণনা করা হলো-

  1. গোয়াল ঘর ও এর চারপাশ নিয়মিত পরিক্ষার ও শুকনো রাখা।
  2. কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য বন্য গরুকে খামারে ঢুকতে না দেওয়া।
  3. খামারে সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ করা।
  4. গরুকে নিয়মিত টিকা দেওয়া ৷
  5. গরুকে সময়মতো কৃমিনাশক উঁষধ খাওয়ানো।
  6. গরুকে সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  7. খাদ্যের পাত্র ও পানির পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করা।
  8. গরুকে তাজা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা।
  9. সম্ভব হলে বিভিন্ন বয়সের গরুকে আলাদা রাখা ৷
  10. গরুকে অতি গরম ও ঠাণ্ডা হতে রক্ষার ব্যবস্থা করা।

খ) গরুর রোগ হলে করণীয়

গরুতে রোগ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ সময় নিম্নে বর্ণিত বিষয়সমূহ অনুসরণ করতে হবে-

  1. রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে অসুস্থ গরুকে সুস্থ গরুর দল থেকে আলাদা করা।
  2. অসুস্থ গরুকে চিকিৎসা প্রদান করা।
  3. অসুস্থ গরুকে আলাদা ঘরে পর্যবেক্ষণ করা।
  4. প্রয়োজনে অসুস্থ গরুর রক্ত ও মলমৃত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
  5. রোগাক্রান্ত গরুকে বাজারজাত না করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গাভী পালন করার পদ্ধতি

গাভী পালন পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) গাভী পালন (২) গাভীর বাসস্থান (৩) গাভীর পরিচর্যা (৪) গাভীর খাদ্য (৫) গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (৬) গাভীর বাছুর পালন (৭) গাভীর বাছুরের বাসস্থান (৮) গাভীর বাছুরের পরিচর্যা ... Read More
ছাগলের রোগ কয় ধরনের, রোগের লক্ষণ কি, রোগের চিকিৎসা কি

ছাগলের রোগ কয় ধরনের? রোগের লক্ষণ কি? রোগের চিকিৎসা কি?

আলোচ্য বিষয়: (১) ছাগলের রোগ কয় ধরনের? রোগের লক্ষণ কি? (২) ছাগলের রোগের চিকিৎসা কি? ... Read More
ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা

ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা

আলোচ্য বিষয়: ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা সম্পর্কিত একটি ব্লগ আর্টিকেল এর ৫টি ধারাবাহিক পর্বের তালিকা প্রদান করা হলো- ... Read More
ইসলামে দৃষ্টিতে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও গরু মোটাতাজা করার ঔষধ খাওয়ানো

ইসলামে দৃষ্টিতে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও গরু মোটাতাজা করার ঔষধ খাওয়ানো

আলোচ্য বিষয়: (১) গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধে খাওয়ানো গরুর উপসর্গ ও লক্ষণ (২) মানব শরীরে গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধের প্রভাব (৩) গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট, ইনজেকশন বা ঔষধ প্রয়োগের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? ... Read More
informationbangla.com default featured image compressed

আবদ্ধ পদ্ধতীতে ছাগল পালন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ

আলোচ্য বিষয়: (১) আবদ্ধ পদ্ধতীতে ছাগল পালন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য (২) আবদ্ধ পদ্ধতীতে ছাগল পালন পদ্ধতির সুবিধা (৩) আবদ্ধ পদ্ধতীতে ছাগল পালন পদ্ধতির অসুবিধা ... Read More
informationbangla.com default featured image compressed

গাভীর ওলানফোলা বা ম্যাসটাইটিস রোগের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

আলোচ্য বিষয়: (১) ম্যাসটাইটিস কী? (২) ম্যাসটাইটিসের লক্ষণ (৩) ম্যাসটাইটিসের কারণ (৪) ম্যাসটাইটিসের প্রকারভেদ (৫) ম্যাসটাইটিসের অর্থনৈতিক প্রভাব (৬) ম্যাসটাইটিস চিকিৎসা পদ্ধতি (৭) ম্যাসটাইটিস প্রতিরোধের উপায় (৮) উপসংহার ... Read More
ঘাসের উন্নত জাত পরিচিত এবং ঘাস উৎপাদন চাষ পদ্ধতি

ঘাসের উন্নত জাত পরিচিত এবং ঘাস উৎপাদন চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) নেপিয়ার ঘাসের জাত পরিচিত এবং ঘাস উৎপাদন চাষ পদ্ধতি (২) জার্মান ঘাসের জাত পরিচিত এবং ঘাস উৎপাদন চাষ পদ্ধতি (৩) জাম্বু ঘাসের জাত পরিচিত এবং ঘাস উৎপাদন চাষ পদ্ধতি ... Read More
মুক্তভাবে ছাগল চাষ বা ছাগল পালন এর বৈশিষ্ট্য সমূহ

মুক্তভাবে ছাগল চাষ বা ছাগল পালন এর বৈশিষ্ট্য সমূহ

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মুক্তভাবে ছাগল চাষ বা ছাগল পালন এর বৈশিষ্ট্য সমূহ উল্লেখ করা হলো- ... Read More
informationbangla.com default featured image compressed

ছাগলকে ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স কেন খাওয়াবেন? ছাগলের ভিটামিন ঔষধ এর নাম

আলোচ্য বিষয়: ছাগলের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে কোন কোন উপাদানগুলি থাকে? এবং কোন উপাদানের কি কাজ? প্রয়োগ বিধি। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমরা কি কি ভাবে শরীরে প্রয়োগ করতে পারে? বিস্তারিত জানতে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন- (১) ছাগলের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর উপাদান (২) ছাগলের ভিটামিন “বি” ঔষধ এর নাম (৩) ছাগলের ভিটামিন “বি” এনজেকশন এর নাম ... Read More
informationbangla.com default featured image compressed

স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে ১২+ প্রশ্নোত্তর আকার স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো- ... Read More