ছাগলের রোগ কয় ধরনের? রোগের লক্ষণ কি? রোগের চিকিৎসা কি?

(১) ছাগলের রোগ কয় ধরনের? রোগের লক্ষণ কি?
ছাগলের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে, যার মধ্যে ৮টি কিছু সাধারণ ও মারাত্মক রোগ নিচে আলোচনা করা হলো-
১। পিপিআর (PPR)
- লক্ষণ: জ্বর, মুখ ও চোখ দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া।
- চিকিৎসা: এটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়, যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, স্যালাইন।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত টিকা প্রদান।
২। ক্ষুরারোগ
- লক্ষণ: মুখ ও পায়ের ক্ষুরে ফোস্কা, জ্বর, লালা ঝরা।
- চিকিৎসা: ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে হবে।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত টিকা প্রদান।
৩। ছাগল বসন্ত (Goat Pox)
- লক্ষণ: জ্বর, ত্বকে ফোস্কা, শ্বাসকষ্ট।
- চিকিৎসা: ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে হবে।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত টিকা প্রদান।
৪। গলাফোলা রোগ
- লক্ষণ: জ্বর, গলা ফোলা, শ্বাসকষ্ট।
- চিকিৎসা: অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত টিকা প্রদান।
৫। কৃমি রোগ
- লক্ষণ: দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, ডায়রিয়া।
- চিকিৎসা: কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত কৃমিনাশক প্রয়োগ।
৬। নিউমোনিয়া
- লক্ষণ: কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর।
- চিকিৎসা: অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রতিরোধ: ভালো বাসস্থান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
৭। তড়কা রোগ
- লক্ষণ: শরীর শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মুখ দিয়ে লালা পড়া।
- চিকিৎসা: দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত টিকা প্রদান।
৮। একথাইমা
- লক্ষণ: মুখ ও ঠোঁটের চারপাশে ঘা, লালা ঝরা।
- চিকিৎসা: ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে হবে।
ছাগলের রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-
- নিয়মিত টিকা প্রদান করা।
- পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর বাসস্থান নিশ্চিত করা।
- পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা।
- নিয়মিত কৃমিনাশক প্রয়োগ করা।
- অসুস্থ ছাগলকে আলাদা রাখা।
- পশুচিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া।
ছাগলের যেকোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
(২) ছাগলের রোগের চিকিৎসা কি?

ক) ছাগলের তড়কা রোগ
এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী। এ রোগের জীবানু খাদ্য, পানি, ক্ষত বা শ্বাসের সাথে শরীরে ঢুকে। শরীরে ঢুকার ১ থেকে ৫ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেক সময় কোনো প্রকার লক্ষণ না দেখা দিয়েও ছাগল মারা যেতে পারে তবে এ ক্ষেত্রে মৃত ছাগলের নাক, মুখ বা পায়খানার পথ দিয়ে রক্ত বের হয়।
ছাগলের তড়কা রোগের লক্ষণ কি?
⨠ খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
⨠ জাবর কাটে না।
⨠ পেট ফুলে যায়।
⨠ শরীরে জুর থাকে।
⨠ শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ছাগলের তড়কা রোগের চিকিৎসা কি?
পেনিসিলিন, এম্পিসিলিন, টেরামাইসিন দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে সুস্থ অবস্থায় বছরে একবার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
খ) ছাগলের নিমোনিয়া রোগ
ফুসফুসের প্রদাহের ফলে নিমোনিয়া রোগ হয়। ছাগলের জন্য রোগটি একটি জটিল রোগ।
ছাগলের নিমোনিয়া রোগের লক্ষণ কি?
⨠ কাশি হয় ও সর্দি ঝরে।
⨠ জিহ্বা ফুলে যায় ও বাইরে বের হয়ে আসে।
⨠ জাবর কাটে না।
⨠ নিস্তেজ হয়ে শুয়ে থাকে।
ছাগলের নিমোনিয়া রোগের চিকিৎসা কি?
সালফাডিমাইডিন, ভেসুলং, টেরামাইসিন, পেনিসিলিন, এস্পিসিলিন, টাইলুসিন ডাক্তারের পরামর্শ মতে দিতে হবে।
গ) ছাগলের ধনুষ্টংকার রোগ
এটি অত্যান্ত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া থেকে এ রোগ হয়ে থাকে।
ছাগলের ধনুষ্টংকার রোগের লক্ষণ কি?
⨠ খাদ্য চিবাতে ও গিলতে কষ্ট পায়।
⨠ চলাফেরা করতে কষ্ট হয়।
⨠ মুখ থেকে লালা ঝরতে থাকে খিঁচুনি হয় -দেহ শক্ত হয়ে বেঁকে যায়।
ছাগলের ধনুষ্টংকার রোগের চিকিৎসা কি?
রোগাক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে করালে ভালো ফল পাওয়া মেতে পারে। প্রতি ১২ ঘন্টা পর পর তিন লক্ষ আই.ইউ. মাত্রা টিটেনাস এন্টিটকসিন ইনজেকশন দিতে হবে। ক্ষত হওয়ার সাথে সাথে ১৫০০-৩০০০ আই.ইউ. মাত্রায় টিটেনাস এন্টিটকসিন বা টেকসয়েড ব্যবহার করলে এ রোগ হয় না।
ঘ) ছাগলের ওলান প্রদাহ রোগ
ছাগলের ওলান ফোলাকে এ রোগ বলা হয়। আঘাতজনিত বা রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিতহয়ে এ রোগ হয়ে থাকে।
ছাগলের ওলান প্রদাহ রোগের লক্ষণ কি?
⨠ ওলান ফুলে উঠে।
⨠ গরম হয়ে যায়।
⨠ দুধের রঙ বিবরণ হয় র্াৎ পুঁজ বারক্ত মেশানো থাকে।
⨠ ওলান পেকে যায় ও বাটের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়।
ছাগলের ওলান প্রদাহ রোগের চিকিৎসা কি?
ওলানের সব দুধ বের করে ফেলে দিয়ে বাটের ভিতর নিচের যে কোনো একটি ওষুধ দিতে হবেঃ ১. টেরামাইসিন ২. পেনিসিলিন ৩. এম্পিসিলিন ৪. ফ্রোরটে্রাসাইক্রিন ৫. সালফানোমাইডম ৬. মেসিডেট।
ঙ) ছাগলের ক্ষুরা রোগ
এটি অত্যন্ত ছোয়াচে ও সংক্রামক রোগ যা সাধারণত ক্ষুর বিভক্ত প্রাণীদের হয়ে থাকে। এক ধরনের ভাইরাস এ রোগের কারণ।
ছাগলের ক্ষুরা রোগের লক্ষণ কি?
⨠ জর হয়।
⨠ মুখে ঘা হয়।
⨠ লালা ঝরে।
⨠ ক্ষুরে ঘা ও দুর্গন্ধ হয়।
⨠ ছাগল হাটতে পারে না।
ছাগলের ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা কি?
এ রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা নেই। তবে অন্যান্য রোগ জীবাণু ঘারা বাতে ক্ষত সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। ঘা দুই-তিন বার ধুয়ে এন্টিসেপটিক লাগাতে হবে।
চ) ছাগলের বসন্ত রোগ
ছাগলের জন্য বসন্ত রোগ অত্যন্ত খারাপ একটি অসুখ। বসন্ত হলে বাচ্চা ছাগলের মৃত্যু হার ১০০ ভাগ এবং বড় ছাগলে মৃত্যু হার শতকরা ৫০ ভাগ। তবে সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হলো বসন্ত হলে ছাগলের মূল্যবান চামড়ার ভীষণ ক্ষতি হয়। বাজারে এর দাম থাকে না। বাতাসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় ভ্যাকসিন হলো এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায়।
ছাগলের বসন্ত রোগের লক্ষণ কি?
⨠ ছাগলে গায়ে ভীষণ জবর আসে।
⨠ সারা গায়ে গুটি দেখা দেয়।
⨠ দেহ পশমহীন হয়।
⨠ পাতলা পায়খানা হতে থাকে।
⨠ মুখে অরুচি দেখা যায়।
ছাগলের বসন্ত রোগের চিকিৎসা কি?
বাচ্চার বয়স ৫ মাস হলে টিকা দিতে হবে। খামারের সকল ছাগলকে একসাথে টিকা দিতে হবে।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।



