জাইমোভেট এর কাজ কি? ZYMOVET Powder

আসলেই কি জাইমোভেট কাজ করে? জাইমোভেট পাউডার হার্বাল নাকি এলোপ্যাথি? জাইমোভেট অতিরিক্ত খাওয়ালে কোন অসুবিধা হতে পারে কি? কি পরিমাণে কি নিয়মে খাওেয়ালে ভালো হয়? ভাইমোভেট নিয়মিত খাওনো যায় কোন কারণ ছাড়া?
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় দর্শক মণ্ডলী। ‘ইনফরমেশন বাংলা’ ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগতম। আজকের এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো জাইমোভেট পাউডার নিয়ে, যা গবাদি পশুর হজমশক্তি ও ক্ষুধা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকরী একটি ঔষধ। এই পাউডারটি গরু, ছাগল, ভেড়া এবং অন্যান্য গবাদি পশুর জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং এটি বাংলাদেশের একমি কোম্পানির একটি প্রোডাক্ট।

জাইমোভেট একমি কোম্পানির পাউডার ঔষধ। সব ঔষধের দোকানে এটি পাবেন। জাইমোভেট মূলত ভেষজ উপাদান সমৃদ্ধ পাউডার যা খাবার পানির সাথে গুলিয়ে খাওয়াতে হয়। জাইমোভেট পাউডার গবাদি পশুর হজম ও ক্ষুধা বৃদ্ধির সহায়ক।
(১) জাইমোভেট এর কাজ
১. গরুর পেটে গ্যাস হলে জাইমোভেট পাওডার তা উপসমে কাজ করে।
২. গরু, মহিষ, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি গবাদি পশুর হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩. গবাদিপশুর পেটের পিএইচ এর মান নিয়ন্ত্রিত রাখতে সাহায্য করে।
(২) জাইমোভেট এর উপাদান
জাইমোভেটের উপাদান গুলো দেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে পেট ফাঁপা বা গ্যাসের জন্য এটি চমৎকার ঔষধ। এটি ৫ টি উপাদান দিয়ে তৈরিঃ
- এ্যামোনিয়াম বাইকার্বোনেট
- সোডিয়াম বাইকার্বোনেট
- নাক্সভোমিকা
- জিনজার পাউডার
- জেনসিয়ান পাউডার।
(৩) উপাদান সমূহের কাজ
কোন কারনে গরু, মহিষ, ঘোড়া, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি রুমিন্যান্ট প্রাণির হজম ক্ষমতা কমে গেলে। গরুর পেটে গ্যাস জনিত কারণে এটি খাওয়ানো হয়।
- এ্যামোনিয়াম বাইকার্বোনেট এবং সোডিয়াম বাইকার্বোনেট উভয়ে মূলত খাবার সোডা বা বেকিং সোডা। সোডা মূলত পেটে সৃষ্ট এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে পেটের এসিডিটির পরিমাণ কমায়।
- নাক্সভোমিকা হলো একধরনের ভেসজ উপাদান যা পিত্তরস তৈরি করে খাবার দ্রুত হজম করায়।
- জিনজার পাউডার হলো শুকনো আদার গুড়া, আদা যে কি পরিমান গ্যাস কমাতে পারে সেটা আমরা সবাই জানি।
- জেনসিয়ান পাউডার, জেনসিয়ান হলো অপরাজিতা ফুলের মতো দেখতে এক ধরনের পাহাড়ি ভেসজ ফুল যা ক্ষুধা বৃদ্ধি করে।
(৪) জাইমোভেট খাওয়ানোর নিয়ম
এই ধরনের পাওডার ঔষধ একটু র্গন্ধ যুক্ত হয়। অনেক সময় খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করলে দেখা যায় গরু বা ছাগল খাদ্য ও ঔষধ সবই নষ্ট করে খাই না।
গরুকে তার তিনবেলা খাবারর সাথে মিশে খাওয়ানো যায়।
অথবা, গরুকে পানি, চিনি/গুড় ও জাইমোভেট পাওডার দিয়ে শরবত বানিয়ে দিলে, সে নিজে নিজে সব পানি খায়, বিশেষ করে বিকেল বেলা তাদের পানি তৃষ্ণা থাকে, একটুও নষ্ট করে না।
অথবা, পাউডারকে আধা লিটার পরিষ্কার খাবার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে প্লাস্টিক বা কাচের বোতলে নিয়ে গরুর গলায় সাবধানতার সাথে আস্তে ঢেলে দিতে হবে। ঘেয়াল রাখতে হবে যেন গরুর শ্বাসনালীতে ঔষধ না যায়। শ্বাসনালতে ঔষধ ঢুকলে গরু মারা যেতে পারে। এটা সর্বশেষ পদ্ধতি, যদি উপরের পদ্ধতিগেুলোতে খাওয়ানো সম্ভব না হয়।
বিঃদ্রঃ একবার পানিতে মেশানো ঔষধ সংরক্ষণ করে রাখা যাবে না। প্রতিদিনের টা প্রতিদিন দিতে হবে।
(৫) জাইমোভেট খাওয়ানোর পরিমাণ
গরু, মহিষ ও ঘোড়া: ১০০-৩০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১-২টি স্যাশেট। ৩০১-৫০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩টি স্যাশেট।
বাছুর, ছাগল, ভেড়া: ১৫-২৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১/৩টি থেকে ১/২টি স্যাশেট।
প্রয়োজনীয় মাত্রার জাইমোভেট পাউডার ১-৩ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার করে পর পর ২-৩ দিন খাওয়াতে হবে। অথবা, রেজিস্টার্ড ভেনেরিনারি চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবহার্য।
(৬) উপসংহার
খামারিদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার খামারে যদি দুই-চারটি গরু বা অন্যান্য পশু থাকে, তবে প্রতিনিয়ত ভেটেরিনারি ডাক্তারের উপর নির্ভর করলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। জাইমোভেট পাউডারের মতো ঔষধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে আপনি নিজেই খামারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন। এটি আপনার খামারের ব্যয় কমাতে এবং লাভ বাড়াতে সহায়ক হবে।
জাইমোভেট পাউডার গরু, মহিষ, ঘোড়া, বাছুর, ছাগল এবং ভেড়ার বদহজম, ক্ষুধামন্দ, খাওয়ার অনীহা, পাকস্থলীর প্রদাহ, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, নতুন গরু খামারে আনার পর যদি তার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকে বা পেট ফেঁপে থাকে, তবে এই পাউডারটি কার্যকরী সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি গর্ভবতী বা দুগ্ধবতী পশুদের ক্ষেত্রেও নিরাপদে ব্যবহার করা যায়, কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
- বড় গরু: সকালে এক প্যাকেট এবং বিকালে এক প্যাকেট। বিদেশী জাতের গরু (যেমন ফ্রিজিয়ান) এর ক্ষেত্রে সকালে দুই প্যাকেট এবং বিকালে দুই প্যাকেট দেওয়া যেতে পারে। তবে, ডোজ নির্ধারণের আগে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- ছাগল, ভেড়া ও বাছুর: সকালে অর্ধেক প্যাকেট এবং বিকালে অর্ধেক প্যাকেট।
এই পাউডার সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে পশুর বদহজম এবং ক্ষুধামন্দের সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়।
জাইমোভেট পাউডার শুধু ভেটেরিনারি দোকানেই নয়, বিভিন্ন মুদি দোকানেও পাওয়া যায়, কারণ এটি একটি বহুল পরিচিত এবং ব্যবহৃত ঔষধ। এর প্রতি প্যাকেটের মূল্য মাত্র ২০ টাকা, যা আপনারা নিকটস্থ যেকোনো ভেটেরিনারি দোকান থেকে সহজেই কিনতে পারবেন।
জাইমোভেট পাউডার খামারিদের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী সমাধান। এটি আপনার গবাদি পশুর হজমশক্তি এবং ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং খামারের ব্যয় কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারির পরামর্শ নিয়ে এটি ব্যবহার করুন।
আমাদের এই ধরনের তথ্যবহুল আলোচনা পেতে ‘ইনফরমেশন বাংলা’ ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আামাদের তথ্যগুলো ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার খামারের উন্নতি ও সফলতার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।



