ফল কাকে বলে? ফুল কাকে বলে? সবজি কাকে বলে? এদের গুরুত্ব

ফল কাকে বলে, ফুল কাকে বলে, সবজি কাকে বলে, এদের গুরুত্ব

ফল ও সবজি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। ফল ও সবজিতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় তা মানবদেহকে রোগব্যাধির হাত থেকে সুরক্ষা করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২২০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন কিন্তু গ্রহণ করে মাত্র ৬০ গ্রাম।

ফলজাত সামগ্রী উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপিত হচ্ছে যা মানুষের কর্মসংস্থানে ও আয় বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও চিকিৎসাশাস্ত্রে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামাজিক কর্মকান্ডে ফল ব্যবহার হয়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে জন প্রতি ১১৫ থেকে ১২৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু বাংলাদেশে আমরা খেতে পারছি মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম। বিদেশী ফলের আমদানি কমিয়ে আমাদের প্রচলিত অপ্রচলিত সব ধরনের ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

কৃষি গবেষক, কৃষি বিজ্ঞানী তথা কৃষিবিদগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমানে বাংলাদেশে ফল ও শাকসবজির অনেক উন্নত জাত বের হয়েছে। এ সব ফল ও শাকসবজির উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচুর পুষ্টি উপাদান, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা, দারিদ্র বিমোচন, পতিত জমির সদ্ব্যবহার, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, অধিক লাভের উৎস, বেকার সমস্যার সমাধান, নতুন শিল্পের সৃষ্টি ও বিকাশ, খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সংকোচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আবার ফুল বা সুদৃশ্য গাছগুলো মানসিক আনন্দ দানের একটি অন্যতম উপাদান। কতগুলো ফুলে সৌন্দর্য মানুষকে চিত্তের আনন্দ দেয় আবার কতগুলো ফুলের গন্ধ খুবই মনোমুগ্ধকর। গৃহ, প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও মসজিদ প্রাঙ্গনে এ ফুল ও সুদৃশ্য গাছ শোভা বর্ধন করে।

এই পোষ্টটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- ফল কাকে বলে, ফলের পরিচিতি বর্ণনা করতে পারবেন, ফলের গুরুত্ব উল্লেখ করতে পারবেন। ফুল কাকে বলে, ফুলের পরিচিতি বর্ণনা করতে পারবেন, ফুলের গুরুত্ব উল্লেখ করতে পারবেন। সবজি কাকে বলে, সবজির পরিচিতি বর্ণনা করতে পারবেন, সবজির গুরুত্ব উল্লেখ করতে পারবেন।

See also  বেবী কর্ণ ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

(১) ফল কি? ফল কাকে বলে?

ফলের পিক বা ছবিঃ ফল কি, ফল কাকে বলে, ফলের গুরুত্ব
ফলের পিক বা ছবি

ফল কি/ফল কাকে বলে: ফুলের গর্ভাশয় নিষিক্ত, পরিপুষ্ট ও পরিণত হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে তাকে ফল বলে। অর্থাৎ নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া গর্ভাশয়ে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তার কারণে ধীরে ধীরে গর্ভাশয়টি ফলে পরিণত হয়।

প্রকৃত ফল কাকে বলে: শুধু গর্ভাশয় ফলে পরিণত হলে তাকে প্রকৃত ফল বলে। যেমন- আম, কাঁঠাল।

অপ্রকৃত ফলকাকে বলে: গর্ভাশয় ছাড়া ফুলের অন্যান্য অংশ পুষ্ট হয়ে যখন ফলে পরিণত হয় তখন তাকে অপ্রকৃত ফল বলে। যেমন- আপেল, চালতা ইত্যাদি।

ফল কত প্রকার: প্রকৃত ও অপ্রকৃত ফলকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

  1. সরল ফল (সরল ফল আবার দুই প্রকার- রসাল ফল ও নীরস ফল);
  2. গুচ্ছ ফল;
  3. যৌগিক ফল।

১০ টি ফলের নাম: যেমন- কলা, আপেল, স্ট্রবেরি, আনারস, তরমুজ, আম, কমলা, ডুমুর, বরই, পেঁপে, জাম্বুরা ইত্যাদি।

বাংলাদেশে কত ধরনের ফল পাওয়া যায়: বাংলাদেশে মোট ১৩০ প্রজাতির ফল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি বুনো ফল। অর্থাৎ এসব ফল চাষাবাদ বা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় না। বাকি ৭০ প্রজাতির ফল ব্যাপকভাবে না হলে স্বল্প আকারে প্রচলিত এবং এর বেশিরভাগ ফল চাষ করা হয়।

(২) ফলের গুরুত্ব

মানুষের খাদ্য তালিকায় ফল একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ফল যেহেতু রান্না করে খাওয়া হয় না বলে সমস্ত পুষ্টি উপাদান অবিকৃত অবস্থায় দেহ গ্রহণ করে। খাদ্য হিসেবেই নয়, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে, চিকিৎসা শাস্ত্রে, সামাজিক কর্মকান্ডে ইত্যাদিতে ফল বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে।

ফলের অনেক গুরুত্ব রয়েছে, যেমন-

১। পুষ্টি সরবরাহে ফলের অবদান: সব ফলেই সব ধরণের পুষ্টি উপাদান কমবেশি আছে। বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং সর্বোৎকৃষ্ট উৎস হলো ফল। 

কোন ফলে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান অধিক রয়েছে তা থাকে তা বর্ণনা করা হলো-

See also  ধানের রোগ ও প্রতিকার এবং ধানের বিভিন্ন পোকা ও প্রতিকার

শর্করা: কিসমিস, খেজুর, আম, কলা, বেল, কাঁঠাল ইত্যাদি।

চর্বি: কাজু বাদাম, অ্যাভেকেডো, বাদাম, কাঠাল বীজ ইত্যাদি। 

খনিজ লবণ: খেজুর, কলা, লিচু, বেল, কাজুবাদাম ইত্যাদি।

ভিটামিন: 

ভিটামিন এ- পাকা আম, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল, কমলা খেজুর ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)- কলা, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-২- বেল, পেপে, লিচু, আনার ডালিম ইত্যাদি।
ভিটামিন সি- আমলকী, পেয়ারা, কমলা, লেবু ও আনারস ইত্যাদি।

পানি: তরমুজ, নারিকেল, আনারস।

২। উৎপাদন বৃদ্ধিতে ফলের অবদান: দানাজাতীয় খাদ্য শস্যের গড় ফলনে চেয়ে ফলের গড় ফলন অনেক বেশি হয় ফলে কৃষক একক জায়গা থেকে লাভবান হয়।

৩। ফল চাষে পতিত জমি ব্যবহার: অনেক পতিত জমি, বসতবাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংলগ্ন জমি যেখানে মাঠ ফসল জন্মানো সম্ভব হয় না এই সব জমি বা জায়গায় সঠিক ব্যবহার শুধু ফল গাছ লাগিয়ে সম্ভব।

৪। আয় বৃদ্ধিতে ফলের অবদান: দানা জাতীয় শস্য অপেক্ষা ফলের গড় ফলন বেশি তেমনি ফলের দাম ও অনেক বেশি। ফল চাষে কৃষক খাদ্য শস্যের চেয়ে ফল চাষে অনেক বেশি আয় করতে পারে। ফল বাগানে আন্ত:শস্য যেমন-আদা, হলুদ চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারে।

৫। ঔষধ হিসেবে ফলে অবদান: বিভিন্ন প্রকার ফল ঔষধ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: পেটের পীড়ায় বেল ও পেপে খেতে বলা হয়। ত্রিফলা (আমলকি, হরিতকি ও বয়রা) বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফল ছাড়াও গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন: ছাল, পাতা, মুল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৬। নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ফলের অবদান: বিভিন্ন ফল ও ফলজাত দ্রব্যের উপাদানের জন্য নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। ফলের বাণিজ্যিক নার্সারী স্থাপনের মাধ্যমে স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। দেশে ফলের রস, আচার, স্কোয়াশ, জ্যাম, জেলি ইত্যাদির জন্য নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান করলে বিদেশ থেকে এসব আমদানি করতে হবে না। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া বয়স্ক ফল গাছের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি এবং ডালপালা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

See also  ফসল কি? অর্থকরী ফসল কাকে বলে? প্রধান ২০টি ফসলের নাম

৭। জাতীয় অর্থনীতিতে ফলের অবদান: ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বিদেশ থেকে ফল ও ফলজাত আমদানী করতে অর্থের প্রয়োজন হয়। যেখানে ফল ও ফলজাত দ্রব্য বাংলাদেশে উৎপন্ন হলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

৮। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ফলের অবদান: ফল গাছ রাস্তার দুধারে মাটি ক্ষয় রোধ করে, ছায়া প্রদান করে অতিবৃষ্টি ও ঝড়ের তীব্রতা কমায় ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

(৩) ফুল কি? ফুল কাকে বলে?

ফুলের পিক বা ছবিঃ সবজি কি, সবজি কাকে বলে, সবজির গুরুত্ব
ফুলের পিক বা ছবি

ফুল কি/কাকে বলে: সপুষ্পক উদ্ভিদের যে রূপান্তরিত অংশ ফল ও বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশবিস্তারে সাহায্য করে তাকে ফুল বলে। কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা শীর্ষে অথবা পাতার কক্ষে ফুল জন্মায়। 

ফুল উদ্ভিদের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন অংশ। সমস্ত সপুষ্পক উদ্ভিদের ফুল ফোটে ও এরা উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে।

উদ্যানতত্ত্ব ফসলের মধ্যে যে সব ফসল শুধু ফুলের জন্য চাষ করা হয় তাকে ফুলজাতীয় ফসল বলে।

ফুল ও সুদৃশ্য গাছপালা উৎপাদনের কলাকৌশল পুস্পোদ্যান বিদ্যা বা Floriculture নামে অভিহিত।

(৪) ফুলের গুরুত্ব

  • ফুল এর সৌন্দর্য ও সুগন্ধ মানুষের চিত্তের তৃপ্তিদানের অতি উৎকৃষ্ট উপাদান। পরিবেশ সৌন্দর্য বর্ধনে অনেক সুদৃশ্য গাছপালা বাগানে থাকলে তা সমাজের মানুষের আনন্দ দান করে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফুল ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন- জন্মদিনে, বিবাহে, অভ্যর্থনায়, শ্রদ্ধাঞ্জলিতে, বিদায়, টেবিল ও গৃহসজ্জায় প্রধান উপকরণ ফুল।
  • ফুলদানিতে নিয়মিত টাটকা ফুল সাজিয়ে রাখা ব্যক্তির রুচিবোধের পরিচায়ক। জাপানীদের ফুলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। জাপানে পুষ্পসজ্জা শিল্প হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া বাড়ির সামনে ও স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে ফুল বাগান জন সাধারণের মন তুষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য উপকরণ।
  • ফুল শুধু মনের আনন্দ দেয় না, ফুল থেকে মৌমাছি অমূল্য সম্পদ মধু সংগ্রহ করে।
  • নানাবিধ সুগন্ধযুক্ত ফুলের নির্যাস থেকে পারফিউম, সেন্ট, আতর ইত্যাদি তৈরি হয়।
  • অনেক উন্নত দেশে ফুল ও সুদৃশ্য গাছের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
See also  খেসারী ডাল চাষ পদ্ধতি

(৫) সবজি কি? সবজি কাকে বলে?

সবজির পিক বা ছবিঃ সবজি কি, সবজি কাকে বলে, সবজির গুরুত্ব
সবজির পিক বা ছবি

সবজি কি/কাকে বলে: মূলত সবজি হলো উদ্ভিদের অংশ যা মানুষ বা অন্যান্য প্রাণী খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। যে উদ্ভিদের কান্ড, ফল, ফুল রান্না অথবা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় তাকে সবজি বলে।

সালাদ কাকে বলে: যে সবজির পাতা, কান্ড,ফল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয় এবং প্রধান খাদ্যের সাথে পরিবেশন করা হয় তাকে সালাদ বলে।

বাংলাদেশের জাতীয় সবজির নাম কি: ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, বাংলাদেশের জাতীয় সবজির নাম নির্ধারিত হয়নি। তবে, বেগুনকে জাতীয় সবজি করার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। বেগুন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি যা বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি যা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।

(৬) সবজির গুরুত্ব

সবজির অনেক গুরুত্ব রয়েছে, যেমন-

১। ক্যালরির উৎস হিসেবে সবজির গুরুত্ব: খাদ্যের তাপশক্তি আসে প্রধানত শ্বেতসার ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য থেকে। এ উপাদানগুলো সবজিতে প্রচুর পরিমাণে নেই। আমাদের দেশে আলু, মেটে আলু,মুখীকচু,ও মিষ্টি আলু ইত্যাদি কন্দাল ফসল এবং কাঁচকলার প্রধান খাদ্য উপাদান হলো শ্বেতসার। এদের ব্যবহার বৃদ্ধি করে খাদ্যকে ক্যালরিতে অধিকতর সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

২। আমিষের উৎস হিসেবে সবজির গুরুত্ব: সবজি আমিষের উল্লেখযোগ্য উৎস নয়। সবজিতে আমিষের পরিমাণ গড়ে শতকরা ২ ভাগের কম।তবে সবজি অন্যান্য উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে নেয়া আমিষের আত্তীকরণ বৃদ্ধি করে।বিভিন্ন রকমের উদ্ভিজ্জ খাদ্য একত্রে মিশিয়ে খেলে একটির এমাইনো এসিডের ঘাটতি অন্যটি দ্বারা পূরণ হয়।

৩। খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ পদার্থের উৎস হিসেবে সবজির গুরুত্ব: খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ পদার্থের দিক দিয়ে পত্রবহুল সবজি খুবই সমৃদ্ধ। যে সমস্ত দেশে পুষ্টি সমস্যা নেই সেখানেও খাদ্যপ্রাণ ও খণিজ পদার্থের এক বৃহৎ অংশ আসে সবজি থেকে। খনিজ পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও লৌহের প্রকট ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় আমাদের দেশে।তাই অধিক পরিমাণে বিভিন্ন জাতের সবজি খেলে ক্যালসিয়াম ও লৌহের অভাব বহুলাংশে দূর হবে।

See also  সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম)

৪। সবজির অর্থনৈতিক গুরুত্ব: আমাদের বাংলাদেশে জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে, তাই এ অল্প জমিতে সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। অপরদিকে সবজি স্বল্পকালীন ফসল। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে অল্প সময়ে ভাল ফলন পাওয়া যায়। যেহেতু জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সবজির চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তাই বাড়ির আশেপাশে সবজি চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায় তাছাড়া বেকার সমস্যা দূরীকরণে সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।এছাড়াও কৃষিভিত্তিক কারখানা স্থাপন করেও আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি। যেমন-টমেটো, বেগুন, লাউ ইত্যাদিও জুস, আচার ও মোরব্বা তৈরি করে বেশিদিন রেখে এবং অভ্যন্তরীন ও আর্ন্তজাতিক বাজারে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

৫। সবজির ভেষজ গুরুত্ব: সবজির অনেক ভেষজ গুন রয়েছে। সবজিতে বিভিন্ন খাদ্যপ্রান যেমন- খাদ্যপ্রান এ,বি,সি এবং ক্যারোটিন পাওয়া যায়। খাদ্যপ্রান এ-রাতকানা রোগ ও অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করে, খাদ্যপ্রান সি-দাঁতের মাড়ি শক্ত ও মাড়ি থেকে রক্ত ঝরা বন্ধ করে। এছাড়াও স্কার্ভি ,বেরি বেরি এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে বিভিন্ন সবজি। কিছু কিছু সবজি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে মানুষের রক্ত চলাচল এবং রক্ত বিশুদ্ধকরণে সাহায্য করে। বিভিন্ন সবজি যেমন-পিয়াজ রক্তে কোলেষ্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে উচ্চরক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ সবজি শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। সবজি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্র ও কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। খাদ্যপ্রান এ ও সি এন্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে বার্ধক্য ঠেকায়।করলা ডায়াবেটিস এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 


প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফল কাকে বলে, ফুল কাকে বলে, সবজি কাকে বলে, এদের গুরুত্ব প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

ফল বলতে নিষিক্ত পরিপক্ক গর্ভাশয়কে বুঝায়। নিষিক্ত পরিপক্ক গর্ভাশয় ছাড়াও বিশেষ প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ পার্থোনোজেনিটিকভাবে বা ডিম্বক সরাসরি ফলে পরিণত হয়। এগুলোকে অপ্রকৃত ফল বলে। প্রকৃত বা অপ্রকৃত ফল পরিণত বা পাকা অবস্থায় রান্না ছাড়াই খাওয়া হয় তাদেরকে উদ্যানতাত্ত্বিক ফল বলে। ফল যেহেতু রান্না করে খাওয়া হয় না তাই সমস্ত পুষ্টি উপাদান অবিকৃত অবস্থায় দেহ গ্রহণ করে। এছাড়া ঔষধি হিসেবে, সামাজিক কর্মকা-ে ফল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সবজির পুষ্টিজাত, অর্থনৈতিক ও ভেষজ গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। উদ্যানতত্ত্ব ফসলের মধ্যে যেসব ফসল শুধু ফুলের জন্য চাষ করা হয় তাকে ফুলজাতীয় ফসল বলে। বর্ষজীবী ফুলকে শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন ও উভয় মৌসুমের এই তিনভাগে ভাগ করা হয়। ফুল চাষের জন্য আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশ উপযোগী তাই ফুল চাষ করে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় এবং আত্মকর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হয়।

See also  করলা চাষে সেচ ও মালচ্ প্রয়োগ পদ্ধতি

আমাদের এই কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইটিতে সকল প্রকার ফল, ফুল ও সবজি চাষ নিয়ে আলোচনা রয়েছে এবং প্রতিয়ত নতুন নতুন আলোচনা যুক্ত হচ্ছে। আশা করি আমাদের ওয়েবসাটিকে স্মরণে রাখবেন ও এ ধরণের কৃষি বিষয়ক আলোচনা পেতে নিয়মিত ভিজিট করবেন। শেষ অবধি সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদ ও ভূমিক্ষয়ের ফলাফল বা কুফল

ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদ ও ভূমিক্ষয়ের ফলাফল/কুফল

আলোচ্য বিষয়: (১) ভূমিক্ষয় কি/কাকে বলে? (২) ভূমিক্ষয় কত প্রকার? ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদ (৩) ভূমিক্ষয়ের ফলাফল/কুফল ... Read More
পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি বা পেয়ারা চাষ করার পদ্ধতি

পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি বা পেয়ারা চাষ করার পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি/পেয়ারা চাষ করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো- ... Read More
৫০টি ভুট্টার জাত সমূহ

৫০টি ভুট্টার জাত সমূহ

আলোচ্য বিষয়: আজকের এই পোষ্টটিতে বিশেষ গুণ সম্পন্ন ভুট্টার জাত সমূহ, কম্পজিট ভুট্টার জাত সমূহ, হাইব্রিড ভুট্টার জাত সমূহ, বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ভুট্টার জাত সমূহ ইত্যাদি ৫০টি জাতের পরিচিতি সুন্দর সহজবধ্য করে গুছিয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টার করব, ইংশাআল্লাহ। ... Read More
জমি প্রস্তুতি বা ভূমি কর্ষণ বা জমি চাষ করা

জমি প্রস্তুতি বা ভূমি কর্ষণ বা জমি চাষ

আলোচ্য বিষয়: (১) ধান চাষের জন্য জমির প্রস্তুতি (২) গম চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ (৩) ডালজাতীয় শস্যের জন্য জমি প্রস্তুতি (৪) আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুতি (৫) জমি প্রস্তুতির গুরুত্ব (৬) ভূমি কর্ষণ তথা জমি চাষ বা প্রস্তুতকরণের উদ্দেশ্য ... Read More
গোলাপের দুটি জাতের নাম, গোলাপ ফুল কখন ফোটে, গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি

গোলাপের দুটি জাতের নাম, গোলাপ ফুল কখন ফোটে? গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) গোলাপের দুটি জাতের নাম (২) গোলাপ ফুল কখন ফোটে? (৩) গোলাপ ফুল চাষ পদ্ধতি ... Read More
ভূমিক্ষয়ের কারণ গুলো কি কি, ভূমিক্ষয় রোধের উপায়

ভূমিক্ষয়ের কারণ গুলো কি কি? ভূমিক্ষয় রোধের উপায়

আলোচ্য বিষয়: (১) ভূমিক্ষয়ের কারণ গুলো কি কি? (২) ভূমিক্ষয় রোধের উপায় ... Read More
সয়াবিনের জাত পরিচিতি ও সয়াবিন চাষের পদ্ধতি

সয়াবিনের জাত ও সয়াবিন চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) সয়াবিনের জাত পরিচিতি (২) সয়াবিন চাষের পদ্ধতি (৩) সয়াবিন চাষে পোকা ও রোগ দমন ব্যবস্থাপনা ... Read More
চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি সহজ ও সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো- (১) চন্দ্রমল্লিকা ফুলের জাত (২) চন্দ্রমল্লিকা চাষে জলবায়ু ও মাটি (৩) চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চারা উৎপাদন (৪) চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চারা রোপন (৫) চন্দ্রমল্লিকা চাষে সারপ্রয়োগ (৬) চন্দ্রমল্লিকার কুড়ি অপসারণ (৭) চন্দ্রমল্লিকার গাছে ঠেক দেওয়া (৮) চন্দ্রমল্লিকা চাষে রোগ ও পোকা দমন (৯) চন্দ্রমল্লিকা ফুল সংগ্রহ ... Read More
গম চাষ পদ্ধতি এবং গম চাষে সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা

গম চাষ পদ্ধতি এবং গম চাষে সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে গম চাষ পদ্ধতি ও আধুনিক কলাকৌশল সমূহ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো- (১) গম চাষে উন্নত জাত নির্বাচন (২) গম চাষ পদ্ধতি ধারাবাহিক বর্ণনা (৩) গম চাষে রোগ/বালাই দমন (৪) যান্ত্রিক পদ্ধতিতে গম চাষ ... Read More
কামরাঙ্গা গাছ চাষ পদ্ধতি

কামরাঙ্গা গাছ চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) কামরাঙ্গার জাত পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য (২) কামরাঙ্গা চাষ পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ (৩) কামরাঙ্গা গাছ চাষে রোগ ও পোকা ব্যাবস্থাপনা ... Read More