প্রসেসিং আলু চাষে সেচ পদ্ধতি

প্রসেসিং আলু চাষে সেচ পদ্ধতি

আলু একটি কন্দাল জাতীয় ফসল। অধিক শর্করা থাকার কারণে অনেক দেশেই আলু প্রধান খাদ্য এবং প্রধান সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে গমের পরই প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকন্তু- চিপস্, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি খাদ্য তৈরির জন্য আলুর বিশেষ জাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আলুর অধিকাংশ মূল মাটির কম গভীরতায় থাকায় সময়মতো সেচ প্রয়োগ না করলে মাটিতে পানির ঘাটতির দরুণ ফলন কমে যায়। এতে প্রসেসিং খাদ্য হিসাবে আলুর গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায়।

সেচ প্রয়োগে ফলনের প্রভাব
সেচ প্রয়োগে ফলনের প্রভাব

সময়মতো প্রয়োজনীয় পরিমাণ সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

নিম্নে প্রসেসিং আলু চাষে সেচ পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-

বপনের সময় এবং পদ্ধতি:

আলু চাষের জন্য বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। সাধারণত নভেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত আলু বপনের উপযুক্ত সময়।

প্রতি হেক্টরে ১.৫ টন আলু বীজের প্রয়োজন হয়।

আস্ত আলু রোপণ করলে রোপণের দূরত্ব ৬০ ⨉ ২৫ সেন্টিমিটার হওয়া বা নীয়। পক্ষান্তরে, কাটা আলু রোপণ করলে রোপণের দূরত্ব ৪৫ ⨉ ১৫ সেন্টিমিটার হলেই চলবে। রোপণের পূর্বে বীজ শোধন করা প্রয়োজন।

সারের মাত্রা ও ব্যবহার:

আলু চাষের জন্য নিম্নে উল্লিখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

সারের নামপরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া২২০-২৫০ কেজি
টি এস পি১২০-১৪৫ কেজি
এমওপি২২০-২৫০ কেজি
জিপসাম১০০-১২০ কেজি
জিঙ্ক সালফেট৮-১০ কেজি
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট৮০-১০০ কেজি
বরিক এসিড৮-১০ কেজি
গোবর৫ টন


গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক সালফেট রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর ভেলীতে মাটি উঠিয়ে জমিতে সেচ দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ/পদ্ধতি:

আলু উৎপাদনে সেচের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে রবি মৌসুমে আলুতে সেচ প্রয়োগ করলে ফলন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আলুর তিনটি সংবেদনশীল বৃদ্ধি পর্যায় রয়েছে যে সময় সেচ প্রয়োগ একান্ত অপরিহার্য।

  • প্রথম সেচ- বীজ আলু বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (স্টোলন বের হওয়া পর্যায়ে)
  • দ্বিতীয় সেচ- বীজ আলু বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে (গুটি বের হওয়া পর্যায়ে)
  • তৃতীয় সেচ- বীজ আলু বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে (গুটি বৃদ্ধি পর্যায়ে)
পড়ুন
স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ

সেচ এমনভাবে প্রয়োগ করতে হয় যেন গাছের শিকড়া লের মাটি ভালভাবে ভিজে। গভীর বা অগভীর বা হস্তচালিত নলকূপ বা ভূ-উপরিস্থ পানি হতে পলিথিন হুস পাইপ বা ফারো (নালা) পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করায় উত্তম।

অতিরিক্ত সেচের দরুণ যাতে গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই প্রযুক্তিতে মৌসুমে আলুর জন্য ১৬০-১৮০ মিমি পানির প্রয়োজন হয়।

গাছের চাহিদা মোতাবেক মাটিতে উপযুক্ত সময়ে সঠিক পরিমাণ পানি প্রয়োগ করলে প্রসেসিং আলুর (বারি আলু-২৫ এবং বারি আলু-২৮) ফলন ও পানির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং খরচও কমে যায়।

সেচ দ্বারা ভাল মানের উৎপন্ন প্রসেসিং আলু
সেচ দ্বারা ভাল মানের উৎপন্ন প্রসেসিং আলু

প্রসেসিং বারি আলু-২৫ ও ২৮ এর দুইটি সংবেদনশীল পর্যায় অর্থাৎ স্টোলন এবং গুটি বৃদ্ধির সময় সেচ প্রয়োগ একান্ত অপরিহার্য। এই পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে বারি আলু-২৫ এর ফলন ৩৩-৩৫ টন/হেক্টর, পানির উৎপাদনশীলতা ২২-২৭ কেজি/ঘনমিটার এবং আয়-ব্যয়ের অনুপাত ২.৭ঃ১-৩.৬ঃ১ হয় এবং প্রতি হেক্টরে নীট মুনাফা ৩,০০,০০০-৪,০০,০০০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ) অর্জন করা সম্ভব।

অন্যদিকে বারি আলু-২৮ এর ফলন ২৯-৩২ টন/হেক্টর, পানির ব্যবহার (১৫০-১৯০ মিমি) পানির উৎপাদনশীলতা ১৯-২৬ কেজি/ঘনমিটার এবং আয়-ব্যয়ের অনুপাত ২.৭:১-৩.২:১ হয়।

বারি আলু-২৫ ফ্রে ফ্রাই এবং বারি আলু-২৮ চিপস এর জন্য উপযোগী। পানি সুষ্ঠু ব্যবহারের ফলে প্রসেসিং আলুর গুণগত খাদ্যমান অর্থাৎ টিএসএস (৫-৬ ব্রিক্স) ঘনত্ব (১-১.২) ড্রাই মেটার (২১-২৪%) এবং শর্করা (১৫-১৭%) ইত্যাদি বজায় থাকে যা বারি আলু-২৫ এর চেয়ে বারি আলু-২৮ এর গুণগত মান বেশি পাওয়া যায়।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

উত্তম কৃষি পদ্ধতি (জিএপি)

উত্তম কৃষি পদ্ধতি (জিএপি)

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে Good Agricultural Practices (GAP) বা উত্তম কৃষি পদ্ধতি (জিএপি) কি ও কেন, এর গুরুত্ব, নির্দেশনা ও অনুসরণ সম্পর্তিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হলো- (১) জিএপি কি ও কেন? (২) জিএপি এর গুরুত্ব (৩) সবজি ও ফল উৎপাদনে জিএপি (৪) ফসল উৎপাদনে জিএপি এর অনুসরণ
মাসকলাই এর জাত

মাসকলাই এর জাত

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মাসকলাই এর জাতসমূহের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো- (১) বারি মাস-১ (২) বারি মাস-২ (শরৎ) (৩) বারি মাস-৩ (হেমন্ত) (৪) বারি মাস-৪
ফেলন চাষ পদ্ধতি, ফেলনের জাত ও এর রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

ফেলন চাষ পদ্ধতি, ফেলনের জাত ও এর রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

আলোচ্য বিষয়: (১) ফেলনের জাত (২) ফেলন চাষ পদ্ধতি (৩) ফেলন চাষে রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
আলুর ভাইরাস জনিত রোগসমূহ

আলুর ভাইরাস জনিত রোগ

আলোচ্য বিষয়: (১) আলুর পাতা মোড়ানো ভাইরাস (২) আলুর ওয়াই ভাইরাস (৩) আলুর এক্স ভাইরাস (৪) আলুর এস ভাইরাস (৫) মিশ্র ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত আলু গাছ (৬) আলুর ভাইরাস রোগের প্রতিকার ও সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা
বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি, বালাইনাশক কাকে বলে, জৈব, অরাসায়নিক বালাইনাশকের পরিচিতি ও

বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি? বালাইনাশক কাকে বলে? জৈব, অরাসায়নিক বালাইনাশকের পরিচিতি ও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের কুফল

আলোচ্য বিষয়: (১) বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড কি? বালাইনাশক কাকে বলে? (২) জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশকের পরিচিতি (৩) রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের কুফল
বহুস্তর বিশিষ্ট পদ্ধতিতে সবজি চাষ

বহুস্তর বিশিষ্ট পদ্ধতিতে সবজি চাষ

আলোচ্য বিষয়: (১) বহুস্তর বিশিষ্ট পদ্ধতিতে সবজি বাগান কি ও এটি কিভাবে কাজ করে? (২) বহুত্তর বিশিষ্ট সবজি বাগানের উদ্দেশ্য (৩) বহুস্তর বিশিষ্ট সবজি বাগানের সবজি নির্বাচন (৪) বহুস্তর বিশিষ্ট সবজি বাগানের পরিচর্যা
বার্লি চাষ পদ্ধতি ও সময়বিধি

বার্লি চাষ পদ্ধতি ও সময়বিধি

আলোচ্য বিষয়: (১) বার্লির উন্নত জাত ও গাছের বৈশিষ্ট্য (২) বার্লি চাষ পদ্ধতি ও সময়বিধি (৩) বার্লির চাষে রোগবালাই ব্যাবস্থাপনা (৪) বার্লির চাষে পোকা-মাকড় দমন
AWD কি, ধান চাষের জন্য AWD সেচ পদ্ধতির ধাপসমূহ, সুবিধা ও অসুবিধা

AWD কি? ধান চাষের জন্য AWD সেচ পদ্ধতির ধাপসমূহ, সুবিধা ও অসুবিধা

আলোচ্য বিষয়: (১) AWD কি? (২) AWD ধান সেচ পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে? (৩) AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদানের ধাপসমূহ (৪) AWD পদ্ধতির সুবিধা (৫) AWD পদ্ধতির অসুবিধা
ধুন্দুলের জাতের নাম ও চাষের পদ্ধতি

ধুন্দুলের জাতের নাম ও চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) ধুন্দুলের জাতের নাম ও পরিচিতি (২) ধুন্দুলের চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম
হাইব্রিড টমেটো চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড টমেটো চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) হাইব্রিড টমেটোর জাত পরিচিতি (২) হাইব্রিড টমেটো চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা