কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে?

খাবারের এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। যখন কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট খাবার খায়, তখন তার শরীর তা বিপজ্জনক বলে ভাবে এবং একটি ইমিউন রেসপন্স সৃষ্টি করে। এই রেসপন্সের ফলে বিভিন্ন ধরনের এলার্জেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে, এর উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। কারও দুধে এলার্জি, কারও বিশেষ কোন সবজি কিংবা ফলে, আবারও কারও ধুলোবালিতে। সবজির মধ্যে টোমেটো, বেগুন, ফলের মধ্যে আনারস, কলা থেকে যেমন অ্যালার্জি হতে পারে, তেমনই মাশরুম বা হাঁসের ডিম খেলেও অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। একজনের যে খাবারে অ্যালার্জি হয়ে, অন্যজনের সেই খাবারে নাও হতে পারে।
চলুন জেনে নিই কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে, যেগুলোর খাবারের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী মানুষ অ্যালার্জিতে ভুগে থাকে।
(১) কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে?
সবচেয়ে সাধারণ কিছু খাবার যার প্রতি মানুষের এলার্জি থাকতে পারে, সেগুলি হলো-
- দুধ: শিশুদের মধ্যে দুধের এলার্জি বেশি দেখা যায়। তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আড়াই শতাংশ শিশুর গরুর দুধে অ্যালার্জি থাকে। তবে দুধে অ্যালার্জি থাকা আর ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স, কখনই এক নয়।
- ডিম: ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিনের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। অধিকাংশ শিশুই দুধের মতোই ডিমের অ্যালার্জিতে ভোগে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন থেকে এই অ্যালার্জি হয়। তবে অ্যালার্জি থাকলে ডিম পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই ভাল।
- চিনাবাদাম: চিনাবাদামের এলার্জি খুবই গুরুতর হতে পারে।
- গাছের বাদাম: কাজু, পেস্তা, আমন্ড, আখরোট, ব্রাজিল নাটে অনেকেরই অ্যালার্জি থাকে।
- সামুদ্রিক খাবার: চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ইত্যাদি সামুদ্রিক খাবারেও অনেকের এলার্জি থাকে।
- গম: গমে থাকা গ্লুটেনের কারণে সিলিয়াক ডিজিজ নামক অ্যালার্জি হয়। গমের আটা, পাঁউরুটি খেলে অ্যালার্জির সম্ভাবনা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। শিশুদের যদি গমে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে বার্লি বা অন্যান্য দানাশস্যের ক্ষেত্রেও সেই অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে।
- সয়া: সয়াবিনে থাকা প্রোটিনের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রেই সয়া থেকে অ্যালার্জি দেখা যায়। সয় বিনস, সয়া মিল্কে অ্যালার্জি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ বছর বয়সের পর থেকে কমে আসে।
- ফল ও সবজি: বেশ কিছু ফল ও সবজি থেকে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। বেগুন, গাজর, টোমেটো, শিম, স্ট্রবেরি, কলা থেকে অনেকেই অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন।
- মাছ ও সামুদ্রিক খাবার: চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ইত্যাদি সামুদ্রিক খাবারেও অনেকের এলার্জি থাকে। চিংড়ি, কাঁকড়া, ওয়েস্টার, শামুক জাতীয় খাবার যার শক্ত খোল রয়েছে তার থেকেই অ্যালার্জি হয় বিশ্বের প্রায় ৬০% মানুষের। অনেকের কোনও এক বিশেষ প্রকার মাছে অ্যালার্জি থাকে, আবার অনেকের স্যালমন, টুনা, ম্যাকরলে জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খেলে অ্যালার্জি হয়।
- ফালফাইট যুক্ত খাবার: খাবারের রং নষ্ট হয়ে যাওয়া, বা বাদামি রং ধরাতে অনেক খাবারে সালফাইট ব্যবহার করা হয়। এই সালফাইট থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়।
- মধু: মধুতে থাকা পরাগ এবং অন্যান্য উপাদানের কারণে, কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বিঃদ্রঃ: এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়। অন্যান্য খাবারেও এলার্জি হতে পারে।
(২) খাবারে এলার্জির লক্ষণ কি কি?
এলার্জির লক্ষণ ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে।
এলার্জির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো-
- ত্বকের লালচে দাগ
- চুলকানি
- ফুলে ওঠা
- বমি
- ডায়রিয়া
- শ্বাসকষ্ট
- অ্যানাফিল্যাক্সিস (একটি জীবনঘাতী অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন)
(৩) খাবারে এলার্জি হলে করণীয়
যদি আপনার কোন খাবার খাওয়ার পর এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার এলার্জি নির্ণয় করতে পারবেন।
খাবারের এলার্জির কোন চিকিৎসা নেই। একমাত্র উপায় হল, যে খাবারে আপনার এলার্জি আছে সেই খাবারটি এড়িয়ে চলা।
মনে রাখবেন-
- খাবারের এলার্জি খুবই গুরুতর হতে পারে।
- যদি আপনার কোন খাবারের এলার্জি থাকে, তাহলে খাবারের লেবেল ভালো করে পড়ুন।
- আপনার সাথে সবসময় একটি ইপিনেফ্রিন ইনজেকশন রাখুন, যদি অ্যানাফিল্যাক্সিস হয়।
কোনো খাবার থেকে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে তা অন্যের ক্ষেত্রেও অ্যালার্জির কারণ হবে, এমনটা নয়। তাই যে খাবারে আপনার অ্যালার্জি হয়, সেই খাবার খাওয়া থেকে আপনিই বিরত থাকুন। অন্যের সমস্যা না হলে তাকে খেতে নিষেধ করবেন না।
খাদ্য এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন খাবারের উপাদানগুলোর কারণে হতে পারে। এমনও উদাহরণ রয়েছে যে, এলার্জির প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে পারে এবং অ্যানাফাইল্যাক্সিস সৃষ্টি করতে পারে, যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
যদি কোন নির্দিষ্ট খাবার বা উপাদানে এলার্জির লক্ষণ দেখা যায়, তবে একটি এলার্জি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে এলার্জি টেস্ট করানো উচিত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা উচিত।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।