গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি

গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশে টমেটো অতি জনপ্রিয় শীতকালীন ফসল। টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া শীতকালে বিদ্যমান। টমেটোর জনপ্রিয়তা ও চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কিছু গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত উদ্ভাবন করেছে যা গ্রীষ্মকালে ফলন দিতে সক্ষম। তবে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিনের ছাউনিতে চাষাবাস করতে হবে।

(১) গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি ও কলাকৌশল

নিম্নে পলিথিনের ছাউনিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:

  1. গ্রীষ্মকালীন জাত বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, বারি হাইব্রিড টমেটো ৫, বারি হাইব্রিড টমেটো ৮।
  2. গ্রীষ্মকালীন টমেটো বীজ বপনের সময়: মে মাস।
  3. বীজের হার: ২০০ গ্রাম/হেক্টর।
  4. বীজতলায় ৪০-৬০ মেস (প্রতি ইঞ্চিতে ৪০-৬০টি ছিদ্রযুক্ত) নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায়ই সাদা মাছি পোকার দ্বারা পাতা কোকড়ানো রোগ ছড়ানোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে সুস্থ-সবল ও ভাইরাসমুক্ত চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
  5. পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাতের আবাদ করতে হয়।
  6. ২.৩০ মি. চঞ্চড়া (মাৰে ৩০ সে.মি. নালাসহ) ২টি বেডে লম্বালম্বিভাবে একটি করে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাউনির দু’পাশে উচচতা ১.৩৫ মি. ও মাঝখানের উচচতা ১.৮০ মি. হয়ে থাকে। ছাউনির জন্য ০.১০ মি.মি. পুরু পলিথিন ব্যবহার করাই উত্তম।
  7. চারা লাগানোর পূর্বেই জমিতে নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে ছাউনি দিতে হয়। ছাউনির জন্য বাঁশ, স্বচ্ছ পলিথিন, নাইলনের দড়ি ও পাটের সুতলি প্রয়োজন। পলিথিন যাতে বাতাসে উড়ে না যায় সেজন্য ছাউনির উপর দিয়ে উভয় পাশ থেকে আড়াআড়িভাবে দড়ি পেঁচানো হয়ে থাকে।
  8. পাশাপাশি দুই ছাউনির মাঝে ৫০ সে.মি. চওড়া নালা রাখতে হবে যাতে ছাউনি থেকে নির্গত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সহ বিভিন্ন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। জমি থেকে বেডের উচ্চতা ২০-২৫ সে.মি. হতে হবে। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বেডে ৪টি সারি থাকবে। ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারি করে ৫০ সে.মি. দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
পড়ুন
অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতিতে টমেটো ও আলু চাষ

সার প্রয়োগের পরিমাণ ও সময়:

সারের নামমোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি)জমি তৈরির সময়১ম উপরি প্রয়োগ (চারা লাগানোর ১০ দিন পর)২য় উপরি প্রয়োগ(চারা লাগানোর ২৫ দিন পর)৩য় উপরি প্রয়োগ(চারা লাগানোর৪০ দিন পর)
পচা গোবর১০ টন১০ টন
ইউরিয়া৩০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি
ডিএমপি১৭৫ কেজি১৭৫ কেজি
এমপি১৫০ কেজি১০০ কেজি৯০ কেজি৬০ কেজি

(২) গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

ঠেকনা দেওয়া: পরিচর্যার সুবিধার্থে এবং প্রবল বাতাসে গাছ যাতে নুয়ে না পড়ে সে জন্য ঠেকনা দিতে হবে।

পার্শ্বকুশি ছাঁটাই: প্রথম এবং দ্বিতীয় বার সার প্রয়োগের পূর্বে পার্শ্বকুশিসহ মরা পাতা ছাঁটাই করে দিতে হবে। এতে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং ফলের আকার বড় হয়।

কৃত্রিম হরমোনস্প্রে করা:

চিত্র- কৃত্রিম হরমোন স্প্রে
  • গ্রীষ্মকালীন টমেটো গাছে হরমোন স্প্রে ছাড়াই ফুল ফুটে ও ফল ধরে। তবে আশানুরূপ ফলন পেতে হলে ‘টমাটোটন’ নামক কৃত্রিম হরমোন (CPA) 20 মি.লি. ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছোট সিঞ্চন যন্ত্রের সাহায্যে ৭-৮ দিন পর দ্বিতীয় বার সদ্য ফোটা ফুলে স্প্রে করতে হয়। 
  • প্রচুর ফুল ধরলেও উচ্চ তাপমাত্রা পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায়। সাধারণত যখন গাছে প্রচুর ফুটন্ত ফুল দেখা যায় তখন স্প্রে করতে হয়।
  • স্প্রে সাধারণত সকালে বা পড়ন্ত বিকালে করা হয়। গাছপ্রতি ২৫-৩০টি ফল ধরলে সেই ফলগুলোর আকার ভালো হয়। এর বেশি ফল রাখলে ফলের আকৃতি ছোট হয়ে যায়।

(৩) চাষকৃত গ্রীষ্মকালীন টমেটো ফসল সংগ্রহ

ফসল সংগ্রহ: চারা লাগানোর ৬০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ শুরু হয়। প্রতি গাছ থেকে ৩-৪ সপ্তাহ ধরে ৫-৬ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপন্ন টমেটো বীজবিহীন হয়।

পড়ুন
টমেটো চাষের পদ্ধতি

ফলন: গাছপ্রতি ফলন ১.৫-২.০ কেজি; হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০-৪৫ টন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মটর ডাল চাষের পদ্ধতি

মটর ডাল চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) মটরের জাত পরিচিতি (২) মটর ডাল চাষ পদ্ধতির বর্ণনা (৩) মটর চাষে রোগ ও পোকা ব্যবস্থাপনা (৪) ডাল সংরক্ষণের পদ্ধতি সমূহ
বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি

বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) বারি চীনাশাক পরিচিত (২) বারি বাটিশাক পরিচিত (৩) বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি
শিম চাষ পদ্ধতি

শিম চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) শিমের জাত সমূহ ও তাদের বৈশিষ্ট্য (২) শিম চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা (৩) শিম চাষে পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা (৪) শিমের রোগ বালাই দমন ব্যবস্তাপনা
জৈব সার বানানোর পদ্ধতি ও জৈব সারের উপকারিতা

জৈব সার বানানোর পদ্ধতি ও জৈব সারের উপকারিতা

আলোচ্য বিষয়: (১) জৈব সারের উপকারিতা (২) পরিখা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট জৈব সার বানানোর পদ্ধতি (৩) কম্পোস্ট জৈব সারের উপকারিতা (৪) সবুজ জৈব সার বানানোর পদ্ধতি (৫) সবুজ জৈব সারের উপকারিতা (৬) খৈল জৈব সার বানানোর পদ্ধতি ও এর উপকারিতা
কালোজিরা চাষ পদ্ধতি

কালোজিরা চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) কালোজিরা গাছের জাত ও বৈশিষ্ট্য (২) কালোজিরা চাষ পদ্ধতি
পিঁয়াজ চাষের সমস্যা পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

পিঁয়াজ চাষের সমস্যা: পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

আলোচ্য বিষয়: (১) পিঁয়াজ চাষের সমস্যা/পেঁয়াজের পোকা-মাকড় (২) পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার
AWD কি, ধান চাষের জন্য AWD সেচ পদ্ধতির ধাপসমূহ, সুবিধা ও অসুবিধা

AWD কি? ধান চাষের জন্য AWD সেচ পদ্ধতির ধাপসমূহ, সুবিধা ও অসুবিধা

আলোচ্য বিষয়: (১) AWD কি? (২) AWD ধান সেচ পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে? (৩) AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদানের ধাপসমূহ (৪) AWD পদ্ধতির সুবিধা (৫) AWD পদ্ধতির অসুবিধা
উফশী হাইব্রিড ধানের জাত নাম, উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের জাত সমূহ

উফশী হাইব্রিড ধানের জাত নাম/উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের জাত সমূহ

আলোচ্য বিষয়: (১) উফশী জাতের ধানের বৈশিষ্ট্যগুলো কি? (২) উফশী হাইব্রিড ধানের জাত নাম/উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের জাত সমূহ
সেচ কি, সেচ পদ্ধতি কয়টি, আধুনিক সেচ পদ্ধতি ও সেচ ব্যবস্থাপনা

সেচ কি? সেচ পদ্ধতি কয়টি? আধুনিক সেচ পদ্ধতি ও সেচ ব্যবস্থাপনা

আলোচ্য বিষয়: (১) সেচ কি? সেচ কাকে বলে? (২) সেচ পদ্ধতি কয়টি? আধুনিক সেচ পদ্ধতি (৩) সেচের পানির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা
সার কি, সার কত প্রকার ও কি কি

সার কি? সার কত প্রকার ও কি কি?

আলোচ্য বিষয়: (১) সার কি? (২) সার কত প্রকার ও কি কি? (৩) জৈব সার (৪) রাসায়নিক সার (৫) কৃষিকাজে সারের ব্যবহার