সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি?

informationbangla.com default featured image compressed

আজ আমরা জানব সমাস নিয়ে। আজকে আমরা যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হলঃ সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত?

সমাস কাকে বলে

(১) সমাস কাকে বলে?

সমাস সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। যেমন– বিলাত হতে ফেরত → বিলাতফেরত।

ড. সুকুমার সেনের মতে, “পরস্পর অন্বয় বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক পদকে একপদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।”

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “পরস্পর অর্থ সঙ্গতি বিশিষ্ট দুই বা বহুপদকে একটি পদ করার নাম সমাস।”

জ্যােতিভূষণ চাকীর মতে, “পরস্পর সম্পর্কিত দুই বা তার বেশি শব্দ একসঙ্গে মিলে সমাস হয়।”

(২) সমাসের প্রকারভেদ/শ্রেণীবিভাগ

সমাস ৬ প্রকার। যথাঃ

  • দ্বন্দ্ব
  • দ্বিগু
  • কর্মধারয়
  • তৎপুরুষ
  • অভ্যয়ীভাব ও
  • বহুব্রীহি

ক) দ্বন্দ্ব

যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এ সমাসে পর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বুঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর এ তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়। যেমন – ভাই ও বোন = ভাইবোন, মাতা ও পিতা = মাতাপিতা।

খ) দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকারভেদ/শ্রেণীবিভাগ

দ্বন্দ্ব সমাস নানা প্রকার হতে পারে। কয়েকটি হলো–

  • মিলনার্থক দ্বন্দ্ব (মাসি ও পিসি = মাসি-পিসি)
  • সমার্থক দ্বন্দ্ব (হাট ও বাজার = হাট- বাজার)
  • বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব ( দা ও কুমড়া = দা -কুমড়া)
  • অলুক দ্বন্দ্ব ( দেশে ও বিদেশে = দেশে-বিদেশে)
  • ইত্যাদি অর্থে দ্বন্দ্ব (কাপড় ও চোপড় = কাপড়-চোপড়)
  • বহুপদী দ্বন্দ্ব (বই, খাতা ও কলম = বই- খাতা- কলম)

খ) দ্বিগু

সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। এ দ্বিগুতে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন– তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল, শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী।

গ) কর্মধারয়

যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপেই প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন– যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর।

কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদ/শ্রেণীবিভাগঃ

কর্মধারয় কয়েক প্রকার। যেমন–

  • মধ্যপদলোপী কর্মধারয় (সিংহ চিহ্নিত আসন – সিংহাসন)
  • উপমান কর্মধারয়(তুষারের ন্যায় শুভ্র- তুষারশুভ্র)
  • উপমিত কর্মধারায় (মুখ চন্দ্রের ন্যায় – চন্দ্রমুখ)
  • রূপক কর্মধারয় ( মন রূপ মাঝি – মনমাঝি)

ঘ) তৎপুরুষ

পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন– বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন, শ্রম দ্বারা লব্ধ = শ্রমলব্ধ।

তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ/শ্রেণীবিভাগঃ

তৎপুরুষ সমাস ৯ প্রকার। এগুলো হলো–

  • দ্বিতীয়া তৎপুরুষ (চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী – চিরসুখী)
  • তৃতীয়া তৎপুরুষ (মধু দিয়ে মাখা – মধুমাখা)
  • চতুর্থী তৎপুরুষ (গুরুকে ভক্তি – গুরুভক্তি)
  • পঞ্চমী তৎপুরুষ (কারা থেকে মুক্ত – কারামুক্ত)
  • ষষ্ঠী তৎপুরুষ (রাজার পুত্র – রাজপুত্র)
  • সপ্তমী তৎপুরুষ (গাছে পাকা – গাছপাকা)
  • নঞ্ তৎপুরুষ (অ (নয়) চেনা – অচেনা)
  • উপপদ তৎপুরুষ (পঙ্কে জন্মে যা – পঙ্কজ)
  • অলুক তৎপুরুষ (গায়ে পড়া – গায়েপড়া)

ঙ) অভ্যয়ীভাব

যে সমাসে পূর্বপদে একটি অব্যয় এবং পরপদে একটি বিশেষ্য থাকে এবং অর্থের দিক থেকে পূর্বপদ অর্থাৎ, অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন– কন্ঠের সমীপে = উপকন্ঠ, দিন দিন = প্রতিদিন।

চ) বহুব্রীহি

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোন পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন– সহ উদর যার = সহোদর, সমান বর্ণ যার = সমবর্ণ।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ/শ্রেণীবিভাগঃ

বহুব্রীহি সমাস ৮ প্রকার। যথাঃ

  • সমানাধিকরণ বহুব্রীহি (খোশ মেজাজ যার – খোশমেজাজ)
  • ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি (দু কান কাটা যার – দু কানকাটা)
  • ব্যতিহার বহুব্রীহি (কানে কানে যে কথা – কানাকানি)
  • নঞ্ বহুব্রীহি (ন (নাই) জ্ঞান যার – অজ্ঞান)
  • মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি (গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে – গায়ে হলুদ)
  • প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি (ঘরের দিকে মুখ যার – ঘরমুখো)
  • অলুক বহুব্রীহি (মাথায় পাগড়ি যার – মাথায়পাগড়ি)
  • সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি (দশ গজ পরিমাণ যার – দশগজি)

তাহলে আজ এখানেই শেষ করছি। সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভগ্নাংশ কাকে বলে

ভগ্নাংশ কাকে বলে?

আলোচ্য বিষয়: (১) ভগ্নাংশ কাকে বলে? (২) ভগ্নাংশ কত প্রকার? (৩) ভগ্নাংশ কাকে বলে সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য (৪) ভগ্নাংশ সম্পর্কিত প্রায় জিজ্ঞাত প্রশ্ন Read
informationbangla.com default featured image compressed

সমার্থক শব্দ কি বা কাকে বলে? গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমার্থক শব্দ

আলোচ্য বিষয়: (১) সমার্থক শব্দ কি বা কাকে বলে? (২) সমার্থক বা প্রতিশব্দের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (৩) গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমার্থক শব্দ Read
অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন; বোনের বিয়ে উপলক্ষে অগ্রিম ছুটির জন্য আবেদন

অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন; বোনের বিয়ে উপলক্ষে অগ্রিম ছুটির জন্য আবেদন

আলোচ্য বিষয়: (১) জ্বরে অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদনপত্র/দরখাস্ত (২) বড় বোনের বিয়ে উপলক্ষে স্কুল/কলেজে অগ্রিম ছুটির জন্য আবেদন (৩) স্কুল, কলেজ বা অফিসে অনুপস্থিতির জন্য ছুটির আবেদন Read
সুশাসন কাকে বলে, সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ, উপাদান বা ভিত্তি কি

সুশাসন কাকে বলে? সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ, উপাদান বা ভিত্তি কি?

আলোচ্য বিষয়: (১) সুশাসন কাকে বলে? সুশাসন কি? (২) সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ (৩) সুশাসনের ভিত্তি বা উপাদানসমূহ (৪) সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা (৫) সুশাসন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর Read
informationbangla.com default featured image compressed

সোনাঃ সোনার বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার

আলোচ্য বিষয়: (১) যেখানে সোনার সন্ধান পাওয়া যায় (২) সোনার বৈশিষ্ট্য (৩) সোনার ব্যবহার Read
উৎপাদকে বিশ্লেষণ কাকে বলে, মৌলিক উৎপাদক কাকে বলে

উৎপাদকে বিশ্লেষণ কাকে বলে? মৌলিক উৎপাদক কাকে বলে?

আলোচ্য বিষয়: (১) উৎপাদকে বিশ্লেষণ কাকে বলে? (২) মৌলিক উৎপাদক কাকে বলে? Read
উদ্ভিদ কাকে বলে, উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস বা প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

উদ্ভিদ কাকে বলে? উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস বা প্রকারভেদ

আলোচ্য বিষয়: (১) উদ্ভিদ কাকে বলে? (২) উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য (৩) উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস বা প্রকারভেদ ক) অপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে? খ) সপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে? ক) একবীজপত্রী উদ্ভিদ কাকে বলে? খ) দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ কাকে বলে? i) গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে? ও এদের বৈশিষ্ট্য ii) বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে? ও এদের বৈশিষ্ট্য iii) বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে? ও এদের বৈশিষ্ট্য (১১) পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগতের শ্রেণিবিন্যাস (১২) উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা Read
স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে, স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি

স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে? স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি

আজ আমরা স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করব। স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে এবং এর উৎপত্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। (১) স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে? শূন্য থেকে বড় সকল  পূর্ণ সংখ্যাকে স্বাভাবিক সংখ্যা বা ধনাত্মক অখণ্ড সংখ্যা বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে সকল গণনার যোগ্য সংখ্যা কে স্বাভাবিক সংখ্যা বলে। যেমনঃ 1,2,3,4…N স্বাভাবিক সংখ্যার ক্ষুদ্রতম মান 1 এবং এর সেট কে N দ্বারা প্রকাশ করা হয়। (২) স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি প্রাচীনকালে গণনা কার্য এবং হিসাব নিকাশ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি হয়। যেমনঃ ৫টি কমলা কোন প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় স্থান এরকম হিসাব নিকাশের জন্য স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি হয়। অর্থ্যাৎ, মানুষ যখন প্রথমবারের মতো গণনা শুরু করেছিল— একটা, দুইটা, তিনটা… সেখান থেকেই স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি। প্রাচীনকালে মানুষ শিকার, গৃহপালিত পশু, ফসল বা জিনিসপত্রের সংখ্যা গণনার প্রয়োজনীয়তা Read
বাক্য কাকে বলে, বাক্যের শ্রেণী বিভাগ করো

বাক্য কাকে বলে? বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করো

আলোচ্য বিষয়: (১) বাক্য কাকে বলে? (২) গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ (৩) অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ (৪) বাক্যের গঠন (৫) বাক্যের গুরুত্ব Read
মোলারিটি কাকে বলে, মোলালিটি কি, উদাহরণ দাও

মোলারিটি কাকে বলে? মোলালিটি কি? উদাহরণ দাও

আলোচ্য বিষয়: (১) মোলারিটি কাকে বলে? (২) মোলারিটির বৈশিষ্ট্য (৩) মোলারিটির উদাহরণ (৪) মোলালিটি কাকে বলে? (৫) মোলারিটি ও মোলালিটির মধ্যে কোনটি তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল এবং কেন? Read