ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর নিয়ম বা ইউ এম এস খাওয়ার নিয়ম

informationbangla.com default featured image compressed

(১) ইউরিয়া মোলাসেস বা ইউ এম এস খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা

আমাদের দেশের প্রাণি খাদ্যে আমিষের পরিমাণ খুব কম। কিন্তু দ্রুত বৃদ্ধিতে আমিষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ইউ এম এস খাওয়ার নিয়ম জানা ও খাওয়ানো প্রয়োজন। প্রাণিকে যে খড় আমরা খাওয়াই তাতে খুব সামান্য পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাদ্য আছে।

পক্ষান্তরে, ইউরিয়া এক  ধরনের রাসায়নিক সার হলেও সেখানে ২৪৫% অপরিশোধিত আমিষ আছে। স্বল্পমূল্যে খড়ে ইউরিয়া মিশিয়ে খড়ে আমিষের পরিমাণ অনেকাংশে বাড়ানো যায়। এ ধরনের ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খড় প্রাণি খেলে  শরীর বৃদ্ধি হয়। এই জন্য গরু মোটাতাজাকরার জন্য ইউরিয়া ব্যবহার অত্যাবশ্যক। কারণ ইউরিয়া দ্রুত মাংস বাড়ায়।

(২) ইউ এম এস বা ইউরিয়া মোলাসেস তৈরী ও উহার ব্যবহার

ইউ এম এস বা ইউরিয়া মোলাসেস তৈরী ও উহার ব্যবহার

১। ইউ.এম.এস তৈরীর প্রথম শর্ত হল এর উপাদানগুলির অনুপাত সর্বদা সঠিক রাখতে হবে অর্থাৎ ১০০ ভাগ  ইউ.এম.এস এর শুষ্ক পদার্থের মধ্যে ৮২ ভাগ খড়।

২। ১৫ ভাগ মোলাসেস (চিটাগুড়) এবং ৩ ভাগ ইউরিয়া থাকতে  হবে। এ হিসাব মতে ১০০ কেজি শুকনা খড়।

৩। ঘনত্বের উপর নির্ভর করে ১৫-২০ কেজি মোলাসেস (চিটাগুড়) ও ৩ কেজি ইউরিয়া মিশালেই চলবে।

৪। খড় ভিজা বা মোলাসেস পাতলা হলে উভয়ের পরিমাণই বাড়িয়ে দিতে হবে।

৫। প্রথমে খড়, মোলাসেস ও ইউরিয়ার পরিমাণ মেপে নিতে হবে। এর পর পানিতে ইউরিয়া ও চিটাগুড় মিশিয়ে উহা  ভালভাবে খড়ের সাথে মিশাতে হবে।

৬। পানি বেশী হলে দ্রবণটুকু খড় চুষে নিতে পারবে না আবার কম হলে দ্রবণ  ছিটানো সমস্যা হবে।

৭। শুকনো খড়কে পলিথিন বিছানো বা পাকা মেঝেতে সমভাবে বিছিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস  দ্রবণটি আস্তে অস্তে ঝরণা বা হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবেএবং সাথে সাথে খড়কে উল্টিয়ে দিতে হবে যাতে খড়  দ্রবণ চুষে নেয়।

৮। এভাবে স্তরে স্তরে খড় সাজাতে হবে এবং ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণ সমভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

৯। ওজন করা খড়ের  সাথে পুরো দ্রবণ মিশিয়ে নিলেই ইউ.এম.এস প্রাণিকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়ে যাবে।

১০। প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া মোলাসেস  খড় সঙ্গে সঙ্গে গরুকে খাওয়ানো যায় অথবা একবারে ২/৩ দিনের তৈরীখড় সংর‣ণ করে আস্তে আস্তে খাওয়ানো  যায়। তবে কোন অবস্থাতেই খড় বানিয়ে তিন দিনের বেশী রাখা উচিৎ নয়। কারণ তাতে খড়ে ইউরিয়া এবং  মোলাসেস এর পরিমাণ কমতে থাকবে।

(৩) ইউরিয়া মোলাসেস এর উপকারিতা

১। ইউ.এম.এস ৬ মাসের উর্দ্ধে বাছুর গরু থেকে শুরু করে সকল বয়সের গরুকে তাদের চাহিদা মত  খাওয়ানো যায়।

২। শুধু ইউ.এম.এস খাওয়ালেও গরুর ওজন বৃদ্ধি পায়।

৩। ইউ.এম.এস তৈরীর পদ্ধতি সহজ। একজন শ্রমিক প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি খড় তৈরী করতে পারেন। ∙ গবেষণা করে দেখা গাছে যে। এ পদ্ধতিতে খড়ের সঙ্গে ১.০০ টাকার মোলাসেস খাইয়ে প্রায় ৫.০০  থেকে ৭.০০ টাকার গরুর মাংস উৎপাদন সম্ভব।

৪। যেহেতু ইউরিয়া ও মোলাসেস খড়ের সাথে ধীরে ধীরে খাচ্ছে। তাই প্রাণির বিষক্রিয়া হওয়ার কোন  সম্ভাবনা নেই।

৫। কৃষক তার দৈনিক চাহিদা মত খড় প্র¯দত করে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন। তবে প্রক্রিয়াজাত খড় তিন  দিনের বেশী সংর‣ণ করে রাখা যাবে না। কেননা তিন দিনের বেশী সংরক্ষণ করলে এর গুণগত মান  কমে যাবে।

(৪) ইউ.এম.এস বা ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর সাবধনতা অবলম্বন

ইউ.এম.এস তৈরী করার সময় অবশ্যই ইউরিয়া-মোলাসেস-খড় ও পানির অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। ইউরিয়ার মাত্রা কোন অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে না। ইউ.এম.এস এর গঠন পরিবর্তন করলে কাংখিত  ফল পাওয়া যাবে না।

(৫) কোন কোন অবস্থায় ইউরিয়া মোলাসেস বা ইউ এম এস খাওয়ানো যাবে না

১। ৬ মাসের কম বয়সের বাছুর গরুকে।

২। অসুস্থ গবাদিপ্রাণিকে।

৩। প্রণিকে সালফার জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পর অন্ততঃ পরবর্তী ১৫-৩০ দিন।

৪। গর্ভবতী গাভীর গর্ভকালীন অবস্থার শেষের দিকে।

৫। যে সকল প্রাণি ইউ.এম.এসখাওয়ালে প্রায়ই অসুবিধা বোধ করে বা এলার্জি দেখা দেয়।

(৬) মোটাতাজাকরণ পশুকে খাবার খাওয়ানোর নিয়ম

খাদ্য পরিবেশনার উপরও খাদ্য গ্রহণের তারতম্য হয়। তাই নিম্নের নির্দেশাবলী পালন করতে হবে-

১। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন প্রাণিকে পরিষ্কার ও সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।

২। দৈহিক ওজন অনুসারে প্রয়োজনীয় খাবার একবারে না দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ৫-৬ বারে দিলে প্রাণির হজম ক্রিয়া  ভাল হয়।

৩। খাদ্য সরবরাহের আগে অবশ্যই পাত্র পরিষ্কার করা।

৪। দানাদার খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মেপে ২ বারে (সকালে ও বিকালে) পরিবেশন করা।

৫। দানাদার খাদ্য আধা ভাঙ্গা অবস্থায় ভিজিয়ে খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবেই দিতে হবে।

৬। শুকনা দানাদার খাদ্য দিলে খাদ্য গ্রহণের পরপরই পানি পান করাতে হবে।

৭। গরু গরু মোটাতাজা করার জন্য সরিষার খৈল বেশি উপকারী।

৮। প্রাণির বদ-হজম, পেট-ফাপা ও পাতলা পায়খানা হলে দানাদার খাদ্য খাবার দেওয়া যাবে না।

৯। প্রাণিদেহে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ পানি তাই ১০-১৫ ভাগ পানি সরবরাহ করতে হবে।

১০। খাদ্যে দানাদার, খড়, কাঁচা ঘাস ও পানির অনুপাত ১ : ৩ : ৫ : ১০-১৫ হতে হবে।

১১। আশঁযুক্ত খাবার (খড়) ২-৩ ইি  টুকরা করে কেটে ভিজিয়ে পরিবেশন করলে কম নষ্ট হয় এবং খাদ্যের  গ্রহণ হারও বাড়ে।

১২। খড় খাওয়ানোর পূর্বের  ২-৩ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে খাদ্যের মান বাড়ে।

১৩। শুধুমাত্র খড় না দিয়ে এর সাথে দানাদার খাবার, ইউরিয়া, মোলাসেস, পানি ও কাঁচাঘাস মিশিয়ে খাওয়ালে খাদ্যের মান বৃদ্ধি হয়।

১৪। খাদ্য অবশ্যই মাটি/বালি মুক্ত থাকা, খাদ্য পঁচা, বাসি, অতি পুরাতন না হওয়া।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- (১) মাছ, হাঁস ও মুরগির জাত নির্বাচন (২) মাছ, হাঁস ও মুরগির সংখ্যা নির্ধারন (৩) মাছ, হাঁস ও মুরগির চাষ ব্যবস্থাপনা Read
সাইলেজ কি, সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়, সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা কি

সাইলেজ কি? সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়? সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা কি?

আলোচ্য বিষয়: (১) সাইলেজ কি? (২) সাইলেজ কিভাবে তৈরি করা হয়? (৩) সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা কি? Read
ছাগল হিটে না আসলে করণীয়, chagol palon training

ছাগল হিটে না আসলে করণীয়? chagol palon training

আলোচ্য বিষয়: ছাগলের প্রজনন সফলতা নির্ভর করে থাকে মানুষের তথা মালিকের সচেতনতার উপর। তাই ছাগল হিটে না আসলে করণীয়গুলো সম্পর্কে অবগত হতে পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ থাকলো। Read
আদর্শ গরুর খামার ব্যবস্থাপনা

আদর্শ গরুর খামার ব্যবস্থাপনাঃ খামারের বর্জ্য, পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা, কম্পোস্ট ও কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়া

আলোচ্য বিষয়: (১) আদর্শ গরুর খামারের পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা (২) গরুর খামারের পরিবেশ সুরক্ষায় খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (৩) গরুর খামারের কম্পোস্ট ও কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা Read
গরুর খাবার রুচি কম, ৩টি গরুর মুখের রুচির ঔষধ, প্রাকৃতিকভাবে গরুর রুচি বৃদ্ধি করার উপায়

গরুর খাবার রুচি কম? ৩টি গরুর মুখের রুচির ঔষধ ও প্রাকৃতিকভাবে গরুর রুচি বৃদ্ধি করার উপায়

আলোচ্য বিষয়: (১) প্রাকৃতিকভাবে গরুর রুচি বৃদ্ধি করার উপায় (২) গরুর মুখের রুচির ঔষধ Read
গরুকে কখন, কোন বয়সে, কোন কৃমিনাশক ঔষধ, কি পদ্ধতিতে, দিতে হয়

গরুকে কখন, কোন বয়সে, কোন কৃমিনাশক ঔষধ, কি পদ্ধতিতে, দিতে হয়?

আলোচ্য বিষয়: আজকের এই ব্লগে বয়সভেদে গরুর জন্য কোন কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে, কত ডোজ দিতে হবে, কত মাস পরপর পুনরায় প্রয়োগ করতে হবে—এসব বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। Read
informationbangla.com default featured image compressed

দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন, পরিচর্যা ও সুষম খাদ্য তালিকা

আলোচ্য বিষয়: (১) দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন ও পরিচর্যায় করণীয় (২) দুগ্ধবতী গাভীর দৈনিক সুষম খাদ্য তালিকা (৩) গাভীর দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তৈরি (৪) গাভীকে খাবার খাওয়ানোর নিয়ম (৫) গাভীকে থাম্বরুল পদ্ধতিতে খাবার দেয়া (৬) শেষকথা Read
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল চেনার উপায় বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য কি

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল চেনার উপায় বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য কি?

আলোচ্য বিষয়: ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল চেনার উপায় বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য কি? Read
১০টি সেরা দুধের ছাগলের জাত, ছাগলের জাতের নাম, ছাগলের জাত পরিচিতি

১০টি সেরা দুধের ছাগলের জাত? ছাগলের জাতের নাম? ছাগলের জাত পরিচিতি?

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে ছবিসহ দধ উৎপাদনে সেরা ১০টি ছাগলের জাতের নাম ও ছাগলের জাত পরিচিতি সংক্ষিপ্তভালে বর্ণনা করা হলো- Read
গরু মোটাতাজাকরণ ইউরিয়ার ব্যবহার ইউ এম এস

গরু মোটাতাজাকরণ ইউরিয়ার ব্যবহার ইউ এম এস

আলোচ্য বিষয়: (১) গরু মোটাতাজাকরণ ইউরিয়ার ব্যবহার এর ক্ষেত্রে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে? (২) ইউরিয়া মোলাসেস তৈরির পদ্ধতি কি? (৩) খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম কি? (৪) ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গরুর খাবার তালিকা (৫) গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্যের পরিমাণ Read