গর্ভবতী গাভীর যত্ন

(১) গর্ভবতী গাভীর যত্নে খাবার প্রদানের নিয়ম
➣ গাভী থেকে সুস্থ সবল বাছুর পেতে হলে পাল দেওয়ার পর থেকে শুরু করে বাচ্চা প্রসবের পর পর্যন্ত সময়টুকুতে সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে গাভী ও বাছুরের মারাতক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। ফলে গাভী পালন লাভজনক না হয়ে লোকসানে পর্যবসিত হতে পারে।
➣ গর্ভকালীন গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা গাভীর গর্ভধারণকালে গড়ে ২৮০ দিন। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যেভাবেই পাল দেওয়া হোক না কেনো কখন পাল দেওয়া হয়েছে সেই সময়টি মনে রাখতে হবে এবং প্রতিটি গাভীর স্বাস্থ্য রেকর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে গাভী গর্ভধারণ করেছে কিনা এই বিষয়টিও নিশ্চিত হতে হবে।
➣ দুগ্ধবতী গাভীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ৬ মাস পর্যন্ত যত্ন, পরিচর্যা, খাদ্য সরবরাহ ও দুধ দোহন স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
➣ ছয় মাসের উর্ধ্বে গর্ভবতী গাভীকে দৈনিক খাদ্যেও অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে। বয়সভেদে অতিরিক্ত এই খাদ্য চাহিদাকে প্রেগনেন্সি এ্যালাউন্স বলে।
গাভীর দানাদার খাদ্যের পরিমাণ এমন হতে পারে, যেমন-
- গাভীর ওজন ২০০-৩০০ কেজি হলে = ০.৫-১.০ কেজি দানাদার প্রতিদিন।
- গাভীর ওজন ৩০০-৪০০ কেজি হলে = ১.০-১.৫ কেজি দানাদার প্রতিদিন।
- গাভীর ওজন ৪০০-৫০০ কেজি হলে = ১.৫-২.৭৫ কেজি দানাদার প্রতিদিন।
দানাদার খাদ্যের মিশ্রিণ তৈরির জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের ব্যবহারিক মাত্রার একটি হিসাব নিচে দেয়া হলো-
- দানাদার খাদ্য (গম/ভূট্টা/খেসারি ভাংগা) = ১৫-২৫%
- ভূষি ও কুড়া (গম/চাল/খেসারি) = ৪৫-৫৫%
- খৈল (তিল/নারিকেল/তুলা বীজ) = ১৫-২০%
- মাছের গুড়া/সয়াবিন মিল = ৪-৫ ৪-৫%
- খনিজ ও লবণ (লবণ ১.০% এবং হাড়ের গুড়া/লাইম স্টোন পাউডার/ ঝিনুকের পাউডার/ডিমের খোসার পাউডার ইত্যাদি) = ৩-৪%
গর্ভবতী গাভীকে এই বয়সে খাদ্য প্রদানে যে দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে-
- গাভীর কোনভাবেই চর্বি জমতে দেওয়া যাবে না।
- দানাদার মিশ্রণের সাথে প্রয়োজন মোতাবেক ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
- তবে বকনা বাছুরের ক্ষেত্রে পাল দেওয়ার পর থেকেই সুষম খাদ্য সঠিক। পরিমাণে সরবরাহ করা উচিত। কারণ এই সময় গর্ভের বাচ্চা ও বকনা বাছুরের শরীরের বৃদ্ধি একই সাথে ঘটে থাকে।
- গর্ভবতী বকনা বা গাভীকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাদ্য সরাবরাহ করা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় বকনা/গাভী যেনো প্রচুর পরিমাণ পরিষ্কার পানি খেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
নিম্নে ৬ মাসের অধিক গর্ভবতী গাভীর ওজন ও দুধ উৎপাদনের ভিত্তিতে দৈনিক খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো-

- কাঁচা ঘাস এবং শুকনা খড়ের মিশ্রণ আনুপাতিক হারে সরবরাহ করতে হবে।
- সাধারণত চার কেজি কাঁচা ঘাস মোটামুটিভাবে এক কেজি শুকনা খড়ের সমতুল্য।
- দানাদার মিশ্রণ সব সময় সহজ লভ্য ও সস্তা খাদ্য উপাদান দিয়ে তৈরি করতে হবে। তবে এ জন্য পুষ্টি মাত্রার ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না।
(২) গর্ভবতী গাভীর যত্নে করণীয় ও বর্জনীয়
➣ প্রসবের প্রায় দু সপ্তাহ পূর্ব থেকে বকনা বা গাভীকে একটু বড় ধরনের ঘরে পৃথকভাবে খোলা অবস্থায় রাখতে হবে।
➣ প্রতিদিন হাঁটাচলার ব্যবস্থা করতে হবে।
➣ পরিষ্কার নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে।
➣ খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবস্থায় যেন কোনোভাবেই বকনা বা গাভী উত্তেজিত না হয় বা আঘাত না পায়।
➣ গরম হওয়া গাভী বা ষাঁড় যেন গর্ববতী বকনা বা গাভীর উপর লাফ না দেয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এই সময় বকনা বা গাভীর খাদ্যের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে।
➣ পায়খানা পরিষ্কার ও শরীর ঠান্ডা থাকে এ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
➣ প্রসবের কিছু সময় পূর্ব থেকেই গাভীতে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে যেমন- ওলান ফুলে যায়, ভালভা স্বাভাকিকের চেয়ে ২ থেকে ৬ গুণ বেশি ফুলে যায় এবং লেজের গোড়ার দিকে রস বের হতে থাকে। এই সময় গাভীকে প্রসূতি ঘরে নেওয়া উচিত।
➣ প্রসূতি ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে এবং আলো বাতাস চলাচলের ও ভালো বিছানার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
➣ আবার বর্ষাকালে এবং শীতকাল ব্যতিত অন্য সময়ে খামারের কাছাকছি পরিষ্কার ছায়াযুক্ত এবং ঘাস আছে এমন স্থানে ও নেওয়া যেতে পারে।
➣ প্রসবের সময় গাভীর প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
➣ সাধারণত প্রসবের লক্ষণ প্রকাশ পাবার ১ থেকে ২ ঘন্টার মধ্যেই বাচ্চা প্রসব হয়ে থাকে। কিন্তু যদি প্রসব ব্যাথা শুরু হওয়ার ৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা প্রসব না হয় তবে পশু চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
➣ স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে সাহায্য ছাড়াই গাভী সাধারণত বাচ্চা প্রসব করে থাকে। তবে অনেক সময় হাত দিয়ে সামান্য সাহায্য করতে হয়।
➣ প্রসবের শুরুতেই বাচ্চার সামনের পা বেরিয়ে আসে, এরপর আসে না। যে কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই জরুরী ভিত্তিতে পশু চিকিৎসকের সাহায্যে নেওয়া উচিত।
অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।