প্রতারণা কাকে বলে? প্রতারণা বর্জনের গুরুত্ব

প্রতারণা কাকে বলে প্রতারণা বর্জনের গুরুত্বসমূহ

(১) প্রতারণা কাকে বলে?

প্রতারণা অর্থ ঠকানো, ফাঁকি দেওয়া, ধোঁকা দেওয়া, বিশ্বাস ভঙ্গ করা। এটি মিথ্যাচারের একটি বিশেষ রূপ।

ইসলামি পরিভাষায়, প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে ফাঁকি বা ধোঁকার উপর ভিত্তি করে নিজ স্বার্থ হাসিল করাকে প্রতারণা বলা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে অন্যকে ভুল বুঝিয়ে ঠকানো হয়।

প্রতারণা নানাভাবে হতে পারে। সাধারণত আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রতারণার দৃষ্টান্ত বেশি পরিলক্ষিত হয়। যেমন- ওজনে কম দেওয়া, জাল মুদ্রা চালিয়ে দেওয়া, পণ্যদ্রব্যের দোষ গোপন করা, ভালো জিনিস দেখিয়ে বিক্রির সময় খারাপ জিনিস দিয়ে দেওয়া, বেশি দামের দ্রব্যের সাথে কম দামের দ্রব্য মিশিয়ে বিক্রি করা, ভেজাল মেশানো, ফলে ও মাছে রাসায়নিক দ্রব্য দেওয়া, পণ্যদ্রব্যের মিথ্যা প্রচারণা চালানো ইত্যাদি।

এ ছাড়াও মানবজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতারণা হতে পারে। যেমন, পরীক্ষায় নকল করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা, ভুল ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া, পথচারীকে ভুল রাস্তা বলে দেওয়া, সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ, এমনকি নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করাও প্রতারণার শামিল।

(২) প্রতারণা বর্জনের গুরুত্ব

প্রতারণা অত্যন্ত গর্হিত ও ঘৃণিত কাজ। এটি মিথ্যাচারের শামিল। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণা মিথ্যা অপেক্ষাও জঘন্য। কেননা প্রতারণা করার দ্বারা দুটো পাপ হয়। একটি মিথ্যা বলা ও অপরটি বিশ্বাস ভঙ্গ করা। সুতরাং সর্বাবস্থায় প্রতারণা বর্জন করা আবশ্যক।

যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে প্রকৃত মুমিন নয়। কেননা ইমান ও প্রতারণা এক ব্যক্তির মধ্যে একত্রে থাকতে পারে না। প্রকৃত মুমিন কখনোই প্রতারণার আশ্রয় নেন না। নিজ স্বার্থের বিরোধী হলেও মুমিন ব্যক্তি সততা ও সত্যবাদিতার উপর অটল থাকেন।

আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) বলেছেন,

“যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে সে আমার উম্মত নয়। আর যে কারও সাথে প্রতারণা করে সে মুসলিম দলভুক্ত নয়।”

(মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অন্য হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,

“যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”

(তিরমিযি)

ইসলামি শরিয়তে প্রতারণা করা, ধোঁকা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। ব্যবসায়-বাণিজ্য, লেনদেন, আচার-ব্যবহার ও আর্থ-সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে কোনো অবস্থাতেই প্রতারণা জায়েজ নয়। কোনো কাজেই প্রতারণা করা যাবে না, সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ করা যাবে না এবং সত্য ও প্রকৃত অবস্থা গোপন করা যাবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না।”

(সূরা আল বাকারা, আয়াত ৪২)

ব্যবসায়-বাণিজ্যে পণ্যদ্রব্য সঠিকভাবে লেনদেন করতে হবে। পণ্যের দোষ ত্রুটি ক্রেতার নিকট পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করতে হবে। পণ্যের সঠিক অবস্থা না জানিয়ে লেনদেন করা প্রতারণা, এটা হারাম বা অবৈধ।

একটি হাদিসে বর্ণিত আছে,

“একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি খাদ্যদ্রব্যের স্তূপের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি স্তূপের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, স্তূপের ভিতরের দ্রব্য ভিজা ও বাইরেরগুলো শুকনো। তিনি বললেন, হে খাদ্যের মালিক! এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টির দরুন এগুলো ভিজে গেছে। অতঃপর রাসুল (সাঃ) বললেন, তবে তুমি ভিজা খাদ্যশস্য কেন উপরে রাখলে না? তাহলে ক্রেতারা এর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারত (ফলে প্রতারিত হতো না।)। বস্তুত যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না।”

(মুসলিম)

প্রতারণা একটি সমাজদ্রোহী অপরাধ। এরদ্বারা পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়। সমাজে শত্রুতা জন্ম নেয়। প্রতারণাকারীকে কেউ পছন্দ করে না। সে যেমন মানবসমাজে ঘৃণিত তেমনি আল্লাহ তায়ালার নিকটও ঘৃণিত।

মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করে এবং ক্রেতাকে দোষের কথা জানায় না, এমন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার নিকট ঘৃণিত। ফেরেশতাগণ সর্বদা তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন।”

(ইবনে মাজাহ)

প্রকৃতপক্ষে, প্রতারণাকারী দুনিয়াতেও ঘৃণিত, লজ্জিত ও অপদস্থ হয়। আর আখিরাতে তার জন্য রয়েছে দুর্ভোগ ও ধ্বংস।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের নিকট থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তারা মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়।”

(সূরা আল-মুতাফিফিন, আয়াত ১-৩)

প্রতারণা আখলাকে যামিমাহ-র অন্যতম। এটি মারাত্মক অপরাধ। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। অতএব, আমাদেরকে সকল কথা ও কাজে প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে, ফিতরার পরিমাণ, সদকাতুল ফিতর, ফিতরা কার উপর ওয়াজিব

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে?

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর কি? (২) ফিতরা কেন দিতে হয়? (৩) ফিতরা কার উপর ওয়াজিব বা আবশ্যিক? (৪) ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে? (৫) ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে না? (৬) ফিতরা কখন আদায় করতে হয়? (৭) সদকাতুল ফিতরের বা ফিতরার পরিমাণ কত? ফিতরা কত টাকা দিতে হয়? (৮) ফিতরা কি দ্বারা আদায় করতে হবে? Read
ayatul kursi bangla

ayatul kursi bangla

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে ayatul kursi bangla (with 100% Clear Picture + text copy + Audio mp3 + Video mp4 download option) সহ উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে- (১) ayatul kursir arbi (২) ayatul kursi bangla uccharon (৩) ayatul kursi bangla ortho (৪) ayatul kursi bangla, arabic o ortho akshathe (৫) ayatul kursi bangla and English (৬) ayatul kursi er fhojilot (৭) ayatul kursi er tatporjo (৮) ayatul kursi pather upokarta (৯) ayatul kursi bangla hidis (১০) uposonhar Read
ঈমানের শাখা (imaner shakha)

৭৭টি ঈমানের শাখা (imaner shakha)

○ ইসলাম
আলোচনার বিষয়:  ঈমানের শাখা কি? ঈমানের শাখা কয়টি? ঈমানের শাখা প্রশাখা কয়টি? ঈমানের শাখা pdf, ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কি? ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কয়টি? ঈমানের মৌলিক শাখা কয়টি? ঈমানের সংখ্যা কয়টি? ঈমানের শাখা সমূহ, ঈমানের শাখা কতটি? ঈমানের সর্বোৎকৃষ্ট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা কি কি? ঈমানের অংগ, ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা বই, ঈমানের ৭৭ টি শাখা, ঈমানের শাখা প্রশাখা। Read
সাহু সিজদার নিয়ম, সাহু সিজদা কখন দিতে হয়, রাকাত সংখ্যা ও নামাজে ভুল হলে করণীয়

সাহু সিজদার নিয়ম, সাহু সিজদা কখন দিতে হয়? রাকাত সংখ্যা ও নামাজে ভুল হলে করণীয়

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) সিজদায়ে সাহুর মাসায়েল প্রশ্ন: সাহু সিজদা কখন দিতে হয়? প্রশ্ন: সিজদায়ে সাহুর করতে ভুলে গেলে করণীয় কী? প্রশ্ন: সিজদায়ে সাহু কখন করা যায় না? (২) সাহু সিজদার নিয়ম প্রশ্ন: সাহু সিজদার নিয়ম কি? প্রশ্ন: সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব ওয়াজিব হবার কারণ কয়টি কি কি? (৩) নামাযের মধ্যে রাকআত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে তার মাসায়েল প্রশ্ন: নামাযের মধ্যে রাকআত সংখ্যা ভুলে গেলে করণীয় কি? Read
informationbangla.com default featured image compressed

সূরা আল-লাইল অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সূরা আল-লাইল অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ তুলে ধরা হলো- Read
২৫টি সুখে থাকার উপায়

২৫টি সুখে থাকার উপায়

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে ২৫টি সুখে থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো- Read
আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ (1)

আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: (১) আরবি বার মাসের নামের টেবিল/চার্ট (২) আরবি ১২ নাম নামকরণের কারণ (৩) আরবি বারো মাসের নাম এর পিক/ছবি Read
সূরা বাকারার ১৩ ও ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

সূরা বাকারার ১৩ ও ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ১৩ ও ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো- Read
informationbangla.com default featured image compressed

কুরআন হাদিসে বর্ণিত ৩০টি দোয়া বা মুনাজাত

○ ইসলাম
আলোচ্য বিষয়: নিম্নে ৩০টি দোয়া বা মুনাজাত আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ তুলে ধরা হলো, যেগুলো পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে রব্বুল আলামিন আমাদের শিখিয়েছেন ও হাদিসর মাধ্যমে রাসূল (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন- Read
ঈমানের-শাখা-imaner-shakha

ঈমানের শাখা imaner shakha

○ ইসলাম
এই আর্টিকেলটিতে ঈমানের শাখা কি? ঈমানের শাখা কয়টি? ঈমানের শাখা প্রশাখা কয়টি? ঈমানের শাখা pdf, ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কি? ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কি? ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কয়টি? ঈমানের মৌলিক শাখা কয়টি? ঈমানের সংখ্যা কয়টি? ঈমানের শাখা সমূহ, ঈমানের শাখা কতটি? ঈমানের সর্বোৎকৃষ্ট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা কি কি? ঈমানের অংগ, ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখা কোনটি? ঈমানের ৭৭ টি শাখা বই, ঈমানের ৭৭ টি শাখা, ঈমানের শাখা প্রশাখা; প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করা হবে। চলুন শুরু করা যাক- ঈমানের শাখা প্রশাখা বা ঈমানের অংগ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নঃ প্রশ্ন: ঈমান কি? ঈমানের শাখা কি? উত্তর: ঈমানের পরিচয়ের মধ্যে বলা হয়েছে কতকগুলো বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমলে পরিণত করার সমষ্টি হলো ঈমান। Read