মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি

মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি

নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তাকারে ‘মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি’ তুলে ধরা হলো-

ভূমিকা

মিষ্টি কুমড়া

কুমড়া বাংলাদেশের একটি পরিচিত সবজি। বিভিন্ন ধরণের কুমড়া জাতীয় গোত্রের সবজিগুলো হল- মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, তরমুজ, শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি।

কুমড়া গোত্রীয় সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মিষ্টি কুমড়া কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও খনিজ সমৃদ্ধ। মিষ্টি কুমড়ার পাতা ও কচি ডগা খাওয়া যায়। এখানে আমরা মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।

জলবায়ু ও মাটি

মিষ্টি কুমড়া চাষ উপযোগী জলবায়ু ও মাটি

জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক হলে মিষ্টি কুমড়া ভালো হয়। প্রচুর সূর্যালোক সমৃদ্ধ, বন্যামুক্ত ও সুনিষ্কাশিত দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী।

জাত

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি উচ্চফলনশীল ও উচ্চগুণ সম্পন্ন মিষ্টিকুমড়া জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যেমন-বারি মিষ্টিকুমড়া-১, বারিমিষ্টিকুমড়া-২। বাংলাদেশ স্থানীয় জাতের চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের সীড কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল জাত ও চাষ করে থাকে।

বীজ লাগানোর সময় ও পরিমাণ

বীজের মাধ্যমেই সাধারণত মিষ্টি কুমড়ার বংশ বিস্তার করা হয়। মিষ্টি কুমড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে এপ্রিল-মে খরিপ মৌসুমে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর রবি মৌসুমে বীজ বুনতে হয়। বীজের পরিমাণ প্রতি মাদায় ৩-৫টি বীজ বপন করতে হয়।

মিষ্টি কুমড়া চাষে মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ

মিষ্টি কুমড়া চাষে মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ
  • মাদা তৈরি জন্য ২.৫-৩.০ মিটার দূরত্বে ৪.৫ সে.মি. গভীর করে গর্ত করে বীজ বুনতে হয়।
  • মাঠে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের বেলায় প্রথমে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরী করে প্রতি বেডে সারি তৈরি করে ১.৫-৩.০ মি. পরপর মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।
  • দুই মাদার মাঝখানে ৬০ সে.মি. প্রস্থ সেচ ও নিষ্কাশন নালা তৈরি করতে হবে।

নিম্নবর্ণিত তালিকা অনুযায়ী গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে-

সারের নামগর্ত প্রতি পরিমাণগর্ত প্রতি পরিমাণ
গোবর/কম্পোষ্ট১০ কেজি৬৯০ কেজি
ইউরিয়া
টিএসপি২০০ গ্রাম১১.৫ কেজি
এমওপি১৫০ গ্রাম৭ কেজি
জিপসাম৯০ গ্রাম১৩ কেজি
দস্তা৫ গ্রাম১.৬ কেজি
(উৎস: উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি (২০০৬-২০০৭), BARI, জানুয়ারি-২০০৮)

নিম্নবর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে-

  • ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার বীজ বোনার ৮-১০ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন থেকে ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ (মাদার চারদিকে অগভীর নালা কেটে নালার মাটির সাথে মিশ্রিত করে) করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়া গাছের পরিচর্যা

মিষ্টি কুমড়া গাছের পরিচর্যা
  • শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে বিশেষ ভাবে ফুল ফোটা ও ফল ধরার সময় সেচ দিতে হবে।
  • কুমড়া চাষে মাচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মাচা তৈরিতে খরচ বেশি বলে মাচার পরিবর্তে ধানের খড় বিছিয়ে দেয়া হয়।
  • ফল ধরলে ফলের নিচে কিছু খড় দিতে হবে যাতে মাটির সংস্পর্শে না আসে।
  • ভোর বেলা মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ণের জন্য পুরুষ ফুলের পরাগধানী হাতে নিয়ে ফুলের গর্ভমুন্ডে আলতো ভাবে ২-৩ বার ঘসে দিলে অধিক ফল ধারণে সহায়ক হয়।
  • পোকামাকড়ের মধ্যে ফলের মাছি পোকা, জাব পোকা, লাল কুমড়া বিটল উল্লেখযোগ্য। পোকা ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে ফলের মাছি পোকা দমন করা যায়।
  • কুমড়ার রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিউ হলে পাতার উপর সাদা পাউডার দেখা যায় এবং পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ২ গ্রাম থিওভিট বা টিল্ট বা টিল্ট ০.৫ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও ফলন

মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও ফলন

সাধারণতঃ চারা বের হওÍয়ার ২-৩ মাসের মধ্যে ফুল আসে। ফল পরিপক্ক বা খাওয়ার উপযোগী হলেই ফল সংগ্রহ করতে হবে। ফলন হেক্টর প্রতি ১৫-৩০ টন পর্যন্ত হয়।

সারসংক্ষেপ

কুমড়া বাংলাদেশের একটি পরিচিত সবজি। কুমড়া গোত্রীয় সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া গুরুত্বপূর্ণ। মিষ্টিকুমড়া প্রচুর ভিটামিন এ ও খনিজ লবণ আছে। মিষ্টি কুমড়া সারাবছরই চোষ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ৫-৬ কেজি বীজের প্রয়োজন। মিষ্টি কুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ণের ব্যবস্থা করতে পারলে ফলন ভালো হয়। উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করলাম।

অনুরোধ!! পোষ্ট ভালো লাগলে প্লিজ উপরের শেয়ার আইকনে ক্লিক করে পোষ্টটি শেয়ার করে দিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হরমোন প্রয়োগে গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষের পদ্ধতি

হরমোন প্রয়োগে গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষের পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষে হরমোন প্রয়োগের কারণ (২) হরমোন প্রয়োগে গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষের পদ্ধতি
ফসল বিন্যাস কাকে বলে, ফসল বিন্যাসে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

ফসল বিন্যাস কাকে বলে? ফসল বিন্যাসে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা

আলোচ্য বিষয়: (১) ফসল বিন্যাস কাকে বলে? (২) ফসল বিন্যাসে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান (৩) ফসল বিন্যাসের সুবিধা ও অসুবিধা
পটল চাষ পদ্ধতি

পটল চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) পটলের জাতের নাম (২) হাইব্রিড পটলের জাত পরিচিতি (৩) পটল চাষ পদ্ধতি বর্ণনা
বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি (২) বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি
উত্তম কৃষি পদ্ধতি (জিএপি)

উত্তম কৃষি পদ্ধতি (জিএপি)

আলোচ্য বিষয়: নিম্নে Good Agricultural Practices (GAP) বা উত্তম কৃষি পদ্ধতি (জিএপি) কি ও কেন, এর গুরুত্ব, নির্দেশনা ও অনুসরণ সম্পর্তিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হলো- (১) জিএপি কি ও কেন? (২) জিএপি এর গুরুত্ব (৩) সবজি ও ফল উৎপাদনে জিএপি (৪) ফসল উৎপাদনে জিএপি এর অনুসরণ
মাঠ ফসল কি, কাকে বলে, মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য, মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ ও মাঠ ফসলের গুরুত্ব

মাঠ ফসল কি/কাকে বলে? মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য, মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ ও মাঠ ফসলের গুরুত্ব

আলোচ্য বিষয়: (১) মাঠ ফসল কি/কাকে বলে? (২) মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য (৩) মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ (৪) মাঠ ফসলের গুরুত্ব
লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল চাষে সেচ পদ্ধতি

লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল চাষে সেচ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) বেড ও ফারো (নালা) সেচ পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় ফসল চাষ (২) লবণাক্ত অঞ্চলে রবি ফসলে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহার
চিচিঙ্গা চাষের নিয়ম ও পদ্ধতি

চিচিঙ্গা চাষের নিয়ম ও পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) চিচিঙ্গার জাত পরিচিতি (২) চিচিঙ্গা চাষের নিয়ম ও পদ্ধতি (৩) চিচিঙ্গা চাষে পোকামাকড় ও প্রতিকার (৪) চিচিঙ্গা চাষে রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

আলোচ্য বিষয়: (১) পেঁয়াজের জাতের নাম পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য (২) শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (৩) খরিফ/গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
গুটি ইউরিয়ার কি, কাকে বলে, এটি ব্যবহারের সুবিধা, অসুবিধা ও ধান চাষে গুটি ইউরিয়ার সার

গুটি ইউরিয়ার কি, কাকে বলে, এটি ব্যবহারের সুবিধা, অসুবিধা ও ধান চাষে গুটি ইউরিয়ার সার প্রয়োগ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়: (১) গুটি ইউরিয়ার কি, কাকে বলে? (২) গুটি ইউরিয়া ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধা (৩) গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধা (৪) দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধা (৫) দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধা (৬) ধান চাষে গুটি ইউরিয়ার সার প্রয়োগ পদ্ধতি